somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নবাজি-১

১৯ শে জুন, ২০০৭ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই গল্পগুলো বলার আগে কিছু কথা বলা দরকার। আমি জানি ঘুমের মধ্যে কমবেশি সবাই স্বপ্ন দেখে, আর আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কিন্তু কিছুটা ভিন্নতা যদি আমার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে সেটুকু হল আমার স্বপ্নগুলোর অনেকগুলো বেশ বিস্তারিতভাবে মনে রাখায়। আমি অনেক স্বপ্নই রাতে কিংবা দুপুরে ভাত ঘুমের পরে দেখি, কখনো কখনো আবার সন্ধ্যায় দেয়া অলস নিদ্রার মাঝেও সেগুলো উঁকি দেয়। সবগুলো অবশ্য মনে রাখতে পারিনা, তবে বেশকিছু আমার মনে দাগ কেটে থাকে। আজকে সেরকমই একটা স্বপ্নের কথা বলবো।পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অন্যান্যগুলো পোস্ট দেব।তাহলে আজকের স্বপ্নের কথা শুরু করি।

এটি আমার খুব ইদানীংকালে দেখা একটা স্বপ্ন।স্বপ্নটি দেখে ভায়াবহ ভয় পেয়েছিলাম। গল্পের শুরুর আগে আমাদের বাসার একটা ছোটখাট বর্ণনা দেয়া প্রয়োজন। আমাদের বাসাটি অনেক পুরাতন, তাই বাসার স্ট্রাকচারটা বেশ জটিল।তাই ধৈর্য না হারিয়ে একটু শুনুন। আমার ঘরটি আমাদের বাসার একদম প্রান্তে। আমার ঘরের সাথে একটা ছোট ঘরে আমার কম্পিউটারটি রাখা আছে। আমার ঘরে দু’টা দরজা। একটা দিয়ে বাইরে বারান্দা আর প্যাসেজের মত একটা জায়গায় আসা যায়। আর আরেকটি দরজা দিয়ে আমি সরাসরি ড্রইংরুমে চলে আসতে পারি। এখন আমি যখন রাতে ঘুমাই তখন এ দুটি দরজায় বন্ধ করা থাকে। এখন ড্রইংরুমেও আছে আরও দু’টো দরজা। একটা দিয়ে সেই বারান্দা আর প্যাসেজের মত জায়গাটাতে যাওয়া যায় আর আরেকটা দরজা দিয়ে অন্য একটা ঘর পার হয়ে আমাদের ডাইনিংরুমে যাওয়া যায়।এখন এইসব দরজায় রাতের বেলা বন্ধ রাখা হয়। আমার বাবা-মার ঘরটি আমার ঘরের একদম অপরদিক্র, বাসার একদম শেষপ্রান্তে। বারান্দা আর প্যাসেজের মত জায়গাটি থেকে দূরে বাবা-মার ঘরের দরজা আর রান্নাঘরে ও ডাইনিংরুমে ঢোকার দরজা দেখা যায়। এগুলো সবই রাতেরবেলা বন্ধ থাকে। এইবারে আসা যাক মূল গল্পে। এতক্ষণ এইসব বলার কারণ হল, এইভাবে দরজাগুলো কথা না বলে দিলে স্বপ্নটাকে ঠিকমত বুঝা যাবেনা।এরপর যা লিখব সবই আসলে স্বপ্নের বর্ণনা।

আমি একরাতে আমার শোবার রুম সংলগ্ন ছোটরুমটাতে কম্পিউটারে বসে ইন্টারনেট ব্রাঊজ করছি। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। রাত অনেক হবে, মনে হয় দুটা বা তিনটা।হঠাৎ করে মনে হল বাইরে প্যাসেজের মত জায়গাটাতে বোধহয় কেউ হাঁটছে। আমি একটু শোনার চেষ্টা করে কিছু না শুনতে পেয়ে আবার কাজে মন দিলাম। কিছুক্ষণ পরে মনে হল আবার ইতস্তত হাঁটাহাঁটী শুরু হয়েছে। আমি স্বভাবতই মনে করলাম আমার বাবা-মার মধ্যে কেউ একজন বোধহয় উঠেছেন কোন কাজে। তবে সময়টা আমার মনে খটকার সৃষ্টি করলো। তাই চিন্তা করলাম, কোন সমস্যা হলোনা তো আবার। তাই আমি আমার বারান্দায় যাবার দরজাটা খুলে প্যাসেজটাতে বের হয়ে আসলাম। একটু আগেও যেখানে হাঁটাহাঁটির শব্দ শুনলাম, সেখানে এখন সব চুপচাপ আর দূর থেকেই দেখলাম আমার মা আর বাবার ঘরের দরজা বন্ধই আছে। কিছু বুঝতে পারলামনা। বেশ একটা অস্বস্থি নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ড্রইংরুমে আসলাম। ড্রইংরুমে আসতে না আসতেই মনে হলো আমাদের ডাইনিংরুমে কেউ জানি হাঁটাহাঁটি করছে, কিন্তু একটূ আগেই ডাইনিং এ যাবার দরজাটাও কিন্তু বন্ধ দেখে এসেছি। এইবার তাই ড্রইংরুম থেকে অন্য রুমে যাবার দরজাটা খুলে ডাইনিং এ উঁকি দিলাম। অবাক হয়ে দেখলাম সবই বন্ধ। এইবার হঠাৎ করে বেশ ভয় পেলাম।

তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ড্রইংরুমে চলে আসলাম। ভয়টা কেমন জানি মনের মধ্যে গেঁথে গেল, তাই একদম আমার শোবার ঘরে এসে ড্রইংরুমে যাবার দরজাটাও বন্ধ করে দিলাম। বেশ ভয় পেয়েছি আমি, এর মধ্যেই আবার মনে হল প্যাসেজে একটা দ্রুত হাঁটাচলার শব্দ শুনতে পেলাম। গা ছমছম করতে লাগল। কি করবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু নিজের কৌতুহল দমন করতে না পেরে ভয়ে ভয়েই প্যাসেজের যাবার দরজাটা একটু একটূ করে খুলে বাইরে উঁকি দিলাম। এইবার আমি প্রচন্ডভাবে ভয় পেলাম। দেখলাম বাইরে দিয়ে আমাদের ডাইনিং এ যাবার দরজাটা খোলা আর দূরে একদম বাসার শেষপ্রান্তে রাখা জিনিসপত্রের একটা শেলফের পেছন থেকে একটা আবছা মানুষের মত কি জানি হুট করে খুব দ্রুত ডাইনিং এ চলে গেল। ভয়ংকর বাহবে ভয় আমি আমি দ্রুত আমার দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। এখন আমি মনে হচ্ছে আমাদের ডাইনিং রুম থেকে হাঁটাহাঁটির শব্দ আবার শুনতে পাচ্ছি। প্রচন্ড ভ্য পাওয়া স্বত্ত্বেও আমি আবার প্যাসেজে যাবার দরজাটা খুললাম। দেখলাম ডাইনিং এর দরজাটা ঠিকই এখনো খোলা আছে। কৌতুহল দমাতে না পেরে আমি খুব আস্তে আস্তে প্যাসেজটা ধরে এগুতে লাগলাম। এখন আর তেমন হুটোপুটির আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা। আমি ভয়ে ভয়েই দরজাটার কাছে পৌঁছে গেলাম। আস্তে করে উঁকি দিয়ে দেখালাম আমাদের ফ্রিজটা হাট করে খোলা। এইবার আমি কৌতুহল আর দমাতে পারলাম না, ভয়ে হাত-পা কাঁপলেও আমি এইবার সামনের দিকে তাকালাম। ভয়ে আমার হাত-পা জমে গেল। দেখলাম একটা এলোমেলো চুলের মহিলা ফ্রিজটা খুলে ঠান্ডা ভাতের বাটিটা কোলে নিয়ে গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছে। ভাতগুলো ভালোই ঠান্ডা হওয়ার কথা। কিন্তু মহিলাটা কিভাবে জানি অসম্ভব ক্ষুধার্তের মত সে ঠান্ডা ভাতই খেয়ে যাচ্ছে। আমি পেছনে এসেছি বুঝতে পেরে মহিলাটি পেছন ফিরে তাকালো। কেমন জানি ঘোলাটে একজোড়া চোখ, মুখে একগাদা ভাত ঠুঁশে ভরা, তার কিছু আবার মুখের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে এসেছে। আমার দিয়ে কেমন অপার্থিবভাবে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আবার পেছন ঘুরে গোগ্রাসে সে ভাত গিলতে শুরু করলো। মহিলাটা শুধুই ভাত খাচ্ছিল। আর সে তার পরনের শাড়িটিও কেমন জানি এক প্যাঁচ দিয়ে পরেছিল। বুকের একটু উপর থেকে একটা প্যাঁচ দিয়ে বেশ খাটো করেই পরা ছিল শাড়িটি।

আমি এই পর্যন্তই স্বপ্নটা দেখি। পরে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। জেগে উঠার পরেও আমার শরীর কেমন ছমছম করতে থাকি

অনেকেই স্বপ্নটা বানোয়াট ভাবতে পারেন। কিন্তু এটা সত্য যে আমি মোটামুটি এতটা বিস্তারিত ভাবেই স্বপ্নটা দেখতে পারি। আর কোন স্বপ্ন যদি দেখতে দেখতে আরো দেখতে চাই তখন ঘুমের মাঝেই নিজের অজান্তেই স্বপ্নটাকে বড় করতে পারি আজকে এইটুকুই, আরেকদিন হাজির হব অন্য কোন স্বপ্ন নিয়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×