বাসন্তিকা
তোমার সাথে দেখা হয়েছিল চৈত্রের শেষ দিবসে। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাথার উপর দিয়ে এক পাহাড় কালো মেঘ যেতে যেতে আমাকে ভয় দেখিয়েছিল। তোমার মায়ায় আমি সে ভয় জয় করে ফেলেছিলাম প্রায়। কিন্তু চারদিক অন্ধকার করে তুমি চলে গেলে। তোমাকে ছাড়া ভয় জয়ের অপচেষ্টা না করে আমি ডেরায় ফিরে গেলাম। ঠিকমত বিদায়ের আমেজটুকুও নিতে পারিনি। বড্ড অভিমান হয়েছিল।
আজ তোমার ছোটবোন হৈমন্তীর সাথে দেখা হল।
তার আগে দেখা হয়েছিল তোমার ছোট ভাই শরতের সাথে। সে আমাকে কাশফুলের বনে নিমন্ত্রণ করেছিল। যাব না যাব না করে গিয়েছিলাম শেষে। শরতের কান্ড শোন- সে আমাকে কাশের কান্ড চিবুতে দিয়েছিল। শ্রাবনী নাকি তাকে এটা শিখিয়েছে। বেটা কি দড়িবাজ দেখ, শ্রাবনীর এক্সপেরিমেন্ট আমার উপর চালিয়েছে। মেজাজ খিঁচে গেছিল। সামলে নিয়ে বোকার মত দুপাটি দাঁতের নিচে রেখে চিবুতে লাগলাম। কেমন লাগল বলতে পারব না। দেখলাম শরত বেটা মুচকি মুচকি হাসছে।
পাত্তা দিলাম না। এমনিতেই কাশবনে এলে আমার মন সুখী হয়ে যায়। কাশের শুভ্র চূড়ায় যখন বাতাস খেলা করে তখন অপার্থিব লাগে।
বলছিলাম হৈমন্তীর কথা। তার সাথে দেখা হওয়ায় তোমার কথা মনে পড়ে গেল। এত চঞ্চল আর দুষ্টু হয়েছে না, কি বলব। চোখের পলক পড়তেই সে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ঠিকমত সবার খবরও নেয়া যায় না। তোমার কথা জিঙ্গেস করলাম। কি বলে জান? বলে,‘এত পিরীত ক্যান? আর কটা দিন সবুর করেন, নিজেই দেখতে পাবেন। এখন আমি সামনে আছি, তবুও বাসন্তি, বাসন্তি! বাসন্তিতে কি মধু আছে? শুনি!’ আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এতটুকুন মেয়ে, কি কথার ছিরি!
আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। বুঝলাম, কান দিয়ে গরম হাওয়া বেরুচ্ছে। কঠিন কিছু কথা শুনাব বলে মনস্থির করলাম। দেখি সে নেই। সামনে শীতু দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হৈমন্তী কই? তার সাথে আমার হিসাব আছে। শীতু বলল, কি হয়েছে ভাই? তাকে বললাম ঘটনাটা। সে বলল, আপনি বরং বাসন্তিকে বলুন। আরেকটু হেঁটে গেলে তাকে পাবেন। হৈমন্তীকে একমাত্র বাসন্তিই সামলাতে পারে। ও একটা বদের হাড্ডি। আচ্ছা ভাই, আপনার সাথে বৈশাখীর দেখা হয়? বৈশাখীর নাম বলতেই তার চেহারা রাঙা হয়ে উঠল। বুঝলাম, ঘটনা আছে। বললাম, কি হয়েছে বল। -না ভাই, কিছু হয়নি। এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম। আপনিতো পরিব্রাজক, তাই ভাবলাম তার সাথে হয়তো আপনার দেখা হতেই পারে। বৈশাখীর মেজাজটা একটু কড়াতো তাই, কখন রাগে আর কখন হাসে বুঝাই যায় না। তাই ভাবলাম, আপনার কাছে যদি কোন খবর থাকে।
কি এক ফ্যাসাদে পড়লাম বলতো। এই বেটাকে হৈমন্তির কথা জিজ্ঞেস করলাম। বেটা পড়ল বৈশাখীরে নিয়ে। এদিকে শরতটা আমাকে দিয়ে যাচ্ছেতাই করাল, হৈমন্তীতো বড়ই রহস্যময় আচরণ করল আমার সাথে।
এদের প্রত্যেকের খামখেয়ালিতে আমি বড্ড নড়বড়ে হয়ে গেছি, বাসন্তি। তোমার আর কত দেরি? আমি পথে নামলাম, এস তাড়াতাড়ি।
ইতি,
তোমার হাওয়াই
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১১:১১