কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় (সম্ভবত বিশ্বের সবচাইতে বড়) থেকে মাষ্টার্স পাশ করা এক ছাত্রের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সিক্স ডিজিট সেলারি পায় এমন একজন মানুষের নাম জানে কি না।
সে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছে, ‘সিক্স ডিজিট সেলারি’ কি জিনিস!
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির গ্রেড ছিল ১১০০০ টাকা। ২০১৫ সালে এটা উন্নীত হয়ে ২২০০০ টাকা হয়।
সেখানে লাখ টাকা বেতন ভাবতে গেলে বুকের ছাতিটায় কত বেশি দমের প্রয়োজন হয়?
তো যে ছেলেটা এম, এ, পাশ দিয়ে ‘সিক্স ডিজিট সেলারি’ কি জিনিস এই প্রশ্ন করতে পারে তার দোষটা আপনি কিভাবে দেখেন? সে কি একাই এই দোষে দুষ্ট? না কি তার সাথে আরও কুশিলবেরা আছেন?
এখন যে কমিউনিটি সরকারি চাকরি বলতে বুজে শুধু তৃতীয় শ্রেণির চাকরি সে কমিউনিটির সামনে ‘সিক্স ডিজিট সেলারি’, (এটা চাকরী করেই যে শুধু ইনকাম করা যাবে তা না, উদ্যোক্তা হয়েও ইনকাম করা যায়) টার্মটা নিয়ে এলে পিত্তিটা কার জ্বলবে?
এক. যারা এই কথা প্রথম শুনল, তাদের? না কি-
দুই. যারা অলরেডি এই ধরণের আয় ইতোমধ্যে করে থাকে, তাদের?
(আপনি যদি ভাবেন কাররই পিত্তি জ্বলার কথা না, তবে আপনি ভুল। কারণ এই ঘটনা বাংলাদেশের সমাজে ঘটেছে, এবং সমাজের একটা উল্যেখযোগ্য অংশের পিত্তি জ্বলে ছাই হয়ে গেছে।)
আমাদের মনুষ্য সমাজের একটা বিরাট অংশ নিজেকে খুব জ্ঞানী, মহাগুণী মনে করে। তবে এরা স্বঘোষিত! এদের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, এরা ভিক্ষা দিতে রাজি আছে কিন্তু ভিক্ষুকের ভাগ্য বদলাতে রাজি নয়। কেউ একজন যদি এসে বলে সে ভিক্ষুকের ভাগ্য বদলের কাজ করবে তখন এই মহাগুণী সম্প্রদায়ের পিত্তিটা খুব করে জ্বলে উঠে।
এই মহাগুণী সম্প্রদায় আবার একটা জিনিস খুব ভাল পারে। এরা যে কাউকেই টেনে নিচে নামাতে পারে। এদের উল্যেখযোগ্য অংশের কাউকে চাকরী দেয়ার মানসিক সামর্থ্য না রাখলেও কারও চাকরী খাওয়ার সর্বৈব সামর্থ্য রাখে।
আমাদের সমাজে উদ্যোক্তা তৈরীর বাঁধার প্রায় ৮০% এই স্বঘোষিত মহাগুণী সম্প্রদায় দায়ী।
এরা বলবে, আপনার দ্বারা হবে না, আপনি পারবেন এটা এই স্বঘোষিত মহাগুণী সম্প্রদায় বলবে না। আবার যারা বলবে আপনি পারবেন এরা তাদেরকে নিয়ে কৌতুক করবে। হিংসা করবে। হা হা হি হি করবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ ছাত্র এই এখনো, এই ২০২০ সালে এসে, তারা জানে না, তাদের ক্যারিয়ার কি হবে।
বাবার ছাতা সারাইয়ের দোকানটা বড় করে কর্মসংস্থান করার চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবে চাকরি করবে। তার দৌড় শুধু চাকরি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ! কিন্তু কি চাকরি সে করবে তা জানে না। কারণ তাকে কেউ এগুলো নিয়ে বলে না। না শিক্ষক, না পরিবার, না স্বঘোষিত মহাগুণী সম্প্রদায়!
অথচ, এগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত শিক্ষার বিভিন্ন ধাপে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা উচিত।
দু:খের বিষয়, ব্যক্তিগতভাবে, ব্যক্তির দায়বদ্ধতা থেকে যদি কেউ এগিয়ে আসে তবে তাকে পঁচানো শুরু করে প্রকৃতপক্ষে যাদের এগুলো করার কথা তারাই।
এরা নিজেরা তো করবেই না উপরন্তু যারাই করতে যাবে তাদেরকে হেয় করবে। আর জাবর কাটবে- সমাজটা উচ্ছন্নে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯