somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস (পর্ব - ১)

০৬ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যমূলক লেখা দেবার ইচ্ছা ছিল অনকদিনের, আলসেমির কারণে এতদিন দেয়া হয়ে ওঠেনি। উইকিপিডিয়ার এই লেখাটি কয়েকদিন বসে অনুবাদ করলাম, আপনাদের কেমন লাগল জানালে খুশী হবঃ

ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এ একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা, বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের একটি প্রচারণা। এরূপ স্বীকৃতির মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল স্কুলগুলোতে বাংলা শিক্ষাদান করা এবং সরকারী কাজে বাংলা ব্যবহার করা।

যখন ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চল নামে পাকিস্তান গঠিত হল, এই দুটি অঞ্চল সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক এবং ভাষাগত দিক দিয়ে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে পড়েছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করল, যেটি বাংলা ভাষাভাষি অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনরোষের সৃষ্টি করেছিল। নতুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং ব্যাপক জনরোষ দেখতে পেয়ে উন্মুক্ত সভা এবং মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা এই আইনের বিরোধিতা করল এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী একটি প্রতিবাদের আয়োজন করল। আন্দোলন চরম উত্তেজনায় পৌঁছাল যখন পুলিশ ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যা করল। ঐ মৃত্যু আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে আওয়ামী লীগ) এর নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান গণ-অসন্তোষকে উস্কিয়ে দিল। কয়েক বছরের সংগ্রামের পর কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করল। ভাষা আন্দোলন এবং সমগ্র বিশ্বের মানুষের ভাষাতাত্ত্বিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা স্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারী কে আন্তার্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

এই ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানে বাঙ্গালী জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়ার দাবীর প্রতি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের অগ্রদুত হিসেবে কাজ করেছিল, যা পরবর্তীতে ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল। বাংলাদেশে ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটি ভাষা আন্দোলন দিবস হিসেবে পালিত হয়, যেটি একটি সরকারী ছুটির দিন। এই আন্দোলন এবং আন্দোলনে হতাহতদের স্মৃতি স্বরূপ ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে শহীদ মিনার ভাস্কর্য তৈরী করা হয়।

পটভূমি

বর্তমান পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রদুটি ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, নবাব ভিখার-উল-মুলক এবং মৌলভী আব্দুল হক প্রমুখ রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে উর্দু ভাষার প্রসার শুরু হয়। উর্দু হচ্ছে ইন্দো-ইরানিয়ান শাখাইন্দো-আরিয়ান ভাষা , যেটি ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় দিল্লী শাসনামল এবং মুঘল সম্রাজ্যের সময় অপভ্রম ( পালি-প্রাকৃত ভাষার সর্বশেষ স্তর ) এর উপর পার্সিয়, আরবি এবং তুর্কী ভাষার প্রভাবের উপর এই উর্দু ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্সিয়-আরবি স্ক্রিপ্ট এর মাধ্যমে এই উর্দু ভাষাকে তৎকালীন ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামিক সংস্কৃতিতে একটি মূল্যবান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হত; হিন্দী এবং দেবনগরী স্ক্রিপ্ট ছিল হিন্দু সংস্কৃতির মূল ভিত্তি।

যখন উত্তর ভারতে উর্দুর ব্যবহার সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, বাংলা(বৃটিশ ভারতের পূর্বাংশের একটি রাজ্য)’র মুসলমানরা প্রাথমিকভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করত। বাংলা হচ্ছে একটি পূর্ব ইন্দো-আরিয়ান ভাষা যেটি পূর্ব মধ্য ভারতীয় ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং বাংলা বিপ্লব এর সময় এর ক্রমশঃ উন্নতি সাধিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সামাজিক কর্মীরা, বিশেষ করে মুসলিম নারী আন্দোলনের অগ্রদুত বেগম রোকেয়া জনগণের কাছে পৌঁছাতে এবং আধুনিক সাহিত্যের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলায় লিখা পছন্দ করতেন। ভারত বিভক্তির পূর্বেই বাংলা ভাষার সমর্থকরা উর্দুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যখন বাংলার প্রতিনিধিরা ১৯৩৭ সালের মুসলিম লীগের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের প্রধান ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়। মুসলিম লীগ ছিল বৃটিশ ভারতীয়দের একটি রাজনৈতিক দল যেটি পরে পাকিস্তানকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বৃটিশ ভারত থেকে পৃথক করার জন্য মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।


চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×