somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নানা রঙের দিনগুলি (তৃতীয় পর্ব)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব


নিয়াজ স্যারের লেকচার শেষ হল আড়াইটার দিকে, লেকচার শেষ করে তিনি আবার একটা টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নিলেন। টিউটোরিয়ালটা শেষ হতে হতে প্রায় তিনটা বেজে গেল। আজ আর কোন ক্লাস নেই। নিলা শুভ্রদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি পার্কিং-এ রাখা গাড়ীতে উঠে বসল, আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে, বাসায় আবার মা না খেয়ে অপেক্ষা করছেন তার জন্য। নিলার মা সারাদিন বাসায় প্রায় একা একাই থাকেন। যদিও কাজের বুয়া, দাড়োয়ান মিলে আরও লোকজন থাকে বাসায়, তারপরও বিশাল বাড়ীতে নিলার মায়ের বড়ই নিঃসঙ্গ লাগে নিজেকে। বড় দুই ছেলে দেশের বাইরে থাকে অনেকদিন হয়ে গেল। স্বামী সারাদিন তাঁর অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। একমাত্র মেয়ে নিলা দিনের অনেকটা সময় ভার্সিটিতে থাকে, তাই নিলার মা একা একা ঘরের টুকটাক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেষ্টা করেন। নিলা তাই সবসময় চেষ্টা করে ক্লাসের পর যত তাড়াতাড়ি পারে বাসায় ফিরতে, কারণ সে জানে নিলা না ফিরলে মা দুপুরে না খেয়ে বসে থাকবেন তার জন্য।


ভার্সিটি থেকে নিলার বাসা খুবই কাছে, গাড়ীতে যেতে দশ মিনিটের বেশী লাগেনা। কিন্তু আজ রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল এর সামনে নিলার গাড়ী আসতেই ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় চলমান সব গাড়ীকে থামিয়ে দিল। নিলার গাড়ীর ড্রাইভার ট্রাফিক পুলিশের এই আচরণের কারণ জেনে এসে তাকে যা জানালো, তাতে নিলার চোখ একেবারে কপালে উঠল। ঐ রাস্তা দিয়ে নাকি একটু পরে একজন মন্ত্রীর গাড়ী যাবে, তাই অনেক আগে থেকেই সাধারণ গাড়ী সব আটকে দিয়ে মন্ত্রীর গাড়ীর জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে দিল ট্রাফিক পুলিশ। খবরটি শুনে নিলার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে আর ভাবছে, এ কোন দেশে বাস করছে তারা যেখানে সাধারণ পথচারীদের চলাফেরা থামিয়ে দিয়ে একজন মন্ত্রীর গাড়ী যাওয়ার জন্য রোড ব্লক করে দেয়া হয়? এটা কি সত্যিই সভ্য দেশের পরিচয় বহন করে? দেশের এরকম হরেকরকম অনিয়ম নিলাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু শুধু তার ভাবাভাবিতেই কি আর কিছু হবে, যেখানে দেশের কর্তাব্যক্তিদেরই এসব ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা নেই?


বাসায় পৌঁছে নিলা দেখল মা ড্রয়িং রুমে অস্থিরভাবে পায়চারী করছেন। নিলাকে দেখেই মা বলে উঠলেন-

-কিরে তোর এত দেরী হল যে আজ?
-আর বলো না মা, ক্লাস শেষে স্যার আজ একটা আনএনাউন্সড টিউটোরিয়াল টেস্ট নিল, ওটা শেষ হবার পর রওনা দিলাম। রাস্তায় দেখি ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম, কোন মন্ত্রী নাকি যাবে, তাই সারা রাস্তা খালি করে দিয়ে পেছনে সব গাড়ী আটকে দিল অসভ্য ট্রাফিক পুলিশ। কোন দেশে বাস করছি আমরা বলো তো মা?
-(লম্বা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে মায়ের উত্তর) কি আর করবি, এরই নাম বাংলাদেশ। যা মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
-ঠিক আছে আমি এই যাব আর এই আসব, তুমি খাবার দাও, খুব ক্ষিধে পেয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে এসে নিলা দেখে মা টেবিলে তার জন্য ভাত নিয়ে অপেক্ষা করছেন। সে আর দেরী না করে বসে পড়লো খেতে মায়ের সাথে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের সাথে প্রায়ই টুকটাক কথোপকথন হয় নিলার। আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা-

-কিরে তোর পড়াশুনা কেমন চলছে?
-চলছে মোটামুটি। খুব প্রেশারে আছি, নেক্সট উইক থেকে সেমিস্টার ফাইনাল। এই উইক এর ভেতর একগাদা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে হবে, তার উপর ফাইনাল পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে হবে, কি যে হবে খুব টেনশনে আছি।
-আরে ধুর এত টেনশনের কি আছে। মন দিয়ে পড়ালেখা কর, ইনশাল্লাহ্ তুই ভালো করবি পরীক্ষায়।
-দোয়া করো মা।
-দোয়া তো সবসময় করি তোর জন্য। আচ্ছা তোরা গ্রুপ ডিসকাশন করে পড়াশুনা করিস না?
-হ্যাঁ করি তো, লাইব্রেরীতে শুভ্রদের সাথে আমি প্রায়ই বসি পড়তে। আমাদের গ্রুপের মধ্যে ইউনিটি টা খুব ভালো। একসাথে বসে পড়লে খুব সহজেই কঠিন বিষয়গুলো ক্লিয়ার হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশী হেল্পফুল শুভ্র, ও খুবই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, গ্রুপ ডিসকাশনে কোন বিষয়ে সমস্যা হলে ও-ই সবচেয়ে বেশী সাহায্য করে আমাদের বিষয়টা বুঝতে।
-তাই নাকি? খুব ভালো। শুভ্রকে একদিন নিয়ে আসিস আমাদের বাসায়।
-(মৃদু হেসে) ঠিক আছে মা, নিয়ে আসব।


খাওয়া শেষ করে নিলা ভাবল একটু ঘুমিয়ে নেয়া দরকার, আজ সারাদিন অনেক ধকল গেল। রাতে উঠে আবার অ্যাসাইনমেন্ট রেডি করতে হবে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দুপুরের এই খাওয়ার পর বিছানায় যেতে না যেতেই ঘুমিয়ে পড়ল নিলা।


(চলবে)....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×