somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোনটিকে অবৈধ বলবেন?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে অফিস যেতে ঘর থেকে বের হয়েই দুটো বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয়ে মন খারাপ হল মাহাদী’র। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রীদের সৃষ্ট ভীড় এড়াতে প্রতিদিনই একটু সকাল সকাল বের হয় মাহাদী। আজ দেরি করে বের হওয়াতে রাস্তায় অসংখ্য মানুষের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাবার ভীড়ে পড়তে হল। একটি বাসের হেলপার সিটিং সিটিং বলে দিগুন ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবার শর্তে বুলি ছাড়ছিল। একে তো দেরি আবার শত শত মানুষকে গন্তব্যে যাবার আশায় নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাড়ার তোয়াক্কা না করে বাসে উঠে পরল সে।
একে একে বাসের সব সিট ভরে গেল। এরপর দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে শুরু করল। বুঝলাম এ সিটিং নয় চিটিং। তেলের মুল্য বৃদ্ধি, অফিস টাইমে একটু এমন হবেই ইত্যাদি শর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে দিগুন ভাড়া আদায়। ছোট্ট শহরে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে মানুষও নির্বিকার।
বেঁচে থাকার তাগিদে এবং জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে মানুষগুলো এ শহরে জীবিকা উপার্জন করে। আর তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় পরিবহন ব্যবস্থা। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। পরিবহন সার্ভিসের মালিকের হয়ত রয়েছে ক্ষমতার জোড় অথবা টাকার জোড়।
এমন পরিস্থিতে সবাই যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টিকে মেনেই নিয়েছিল। বয়স্ক এক চাচা অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। বাসের কেউ তার পক্ষে নেই। সেই সুযোগে বাসের কন্ট্রাক্টর ও হেলপার খুব রুক্ষ ভাষায় তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলল। কাল্পনিক জগতে যেন নামিয়েই দিল। এর সমাধানের পথ খোঁজার চেয়ে বরং না খোজাই শ্রেয়। অনেকে মান-সম্মান হারানোর ভয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও কষ্টে চুপ রয়েছেন।
মাহাদী বাস থেকে লক্ষ্য করল অনেক মানুষ এক জায়গায় সমবেত হয়ে কি যেন দেখছে। যদিও সার্কাসের মত দেখতে কিন্তু সার্কাস নয়। একটি লোককে বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করছে। বোধ হয় মোবাইল চোর বা পকেটমার। আরোও ভাল করে অবলোকন করল, কেউ হাত দিয়ে, কেউ পা দিয়ে আঘাত করছে। কেউবা আবার বড় ইট হাতে। তাদেরই একজন দৌঁড়ে গিয়ে এক আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাত থেকে একটা ডান্ডা নিয়ে আসল। কিছু সংখ্যক তাকে ধরে রেখেছে আর কিছু সংখ্যক বীরত্ব অর্জনে শক্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবাই যেন একযোগে ম্যাজিক দেখছে। এমন নির্মম মারধর মানুষ মানুষকে করতে পারে, যা সামনা-সামনি না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হতেই পারে। কারো পক্ষপাতিত্বের কথা নয় বরং প্রশ্ন হল, মানবতা বলে কি কিছু নেই? সেও তো একটা মানুষ। তারও তো জীবন আছে। ভাল পরিবারে, সুশীল সমাজে জন্ম হয়ে আপনি আমি আজ সভ্য মানুষ। আর তার ক্ষেত্রে উলটো হবার কারণে সে আজ সমাজে অসভ্য, ঘৃণিত, নিন্দিতি চোর। যারা মারছে তারা হয়ত বীরত্ব জাহির করছে অথবা ভাবছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিলে কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে আবার পূর্বের পেশায় ফিরে যাবে। তাই নিজ সিদ্ধান্তেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে? এর পরিণতি কি? হয়ত পঙ্গুত্ব অথবা মৃত্যু। আমরা কি একজন মানুষকে পঙ্গু করা বা মেরে ফেলার অধিকার রাখি?
কি করে একটা মানুষ নিজের মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলে! কি করে এমন পাষাণ হয়ে পৈশাচিক আচরণের পরিচয় দিতে পারে তা কিছুতেই বোধগম্য নয়।
বাসের জানালা দিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখছিল মাহাদী। হঠৎ তার পাশে বসা লোকটি বলে উঠল, “মার শালারে মার, আরো কয়ডা দে, এই মাইরে অগো কিছু হয় না। এগুলারে মাইরা ফালান দরকার। আমার মোবাইল একবার নিছে”। বহু কষ্টে মাহাদী কোন প্রতি উত্তর না দিয়ে চুপ থকলো। হয়ত এই চোরটি কখনই তার মোবাইল নেয়নি। নিয়েছে অন্য কোন চোর।
যে কোন ধর্মে, সমাজে কিংবা রাষ্ট্রে বিচারকারীদের সিদ্ধান্তক্রমে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের নিশ্চই শাস্তি দেবার অধিকার নেই। আর এভাবে শাস্তি দেওয়াটা কি সমাধান?
কেন এই মোবাইল চুরি অথবা পকেটমারের মত ঘৃণিত অপকর্ম? জীবন বাঁচাতেই তাদের এই কুপথ বেছে নেয়া। আমরা যদি এর পরিত্রাণ চাই তবে তা হতে হবে একেবারে মুল থেকে। পরিবর্তনের প্রভাব ফেলতে হবে আমাদের পারিবারিক জীবনে, সমাজ জীবনে, রাষ্ট্র জীবনে তথা জাতীয় জীবনে। শুরু করতে হবে এখন থেকেই। আশা করা যায় এর সুফল মিলবে অদূর ভবিষ্যতে। আর বর্তমান সমস্যা নির্মুলে এসকল বিনষ্টকারী, অর্থহীন, হীনমন্যতা বহনকারী কার্যকলাপের পরিবর্তে নতুন কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপ তথা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
হয়ত নিজের ক্ষেত্রে এমন চুরির ঘটনা হলে উপরোক্ত নীতিকথাগুলোকে নিছক বাক্যালাপ বলেই মনে হত। আর মাহাদীও নিজের রাগ সামলাতে না পেরে হাতে তুলে নিত আইন। এরপরও একজন দর্শক হিসেবে এহেন অমানসিক নির্মমতা ভাল লাগা বা সহ্য করার ক্ষমতা কারো কারো থাকলেও, বোধহয় সবার নেই।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×