somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গদখালী থেকে সাগরদাড়ি

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষার হল ডিউটি শেষ করে দুপুর দেড়টার মধ্যে আরামবাগ। পথে বিজয় নগরে বন্ধু মনিরের শো-রুম থেকে বন্ধুর ক্যামেরা নিয়ে গন্তব্যে পৌছালাম। আরিফ স্যার ও আমি। আমাদের গন্তব্য যশোর। দুপুর দু’টায় যশোরগামী এ.কে. ট্রাভেলস বাসের টিকেট কাটা হয়েছে। বাসের একেবারের সামনের সারির A-3,4 সিটের টিকেট কেটেছি। কেননা আরিফ স্যার আবার অন্য কোন সিটে ভ্রমণ পছন্দ করেন না।
দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি। বাস ছাড়তে এখনও বেশ কিছুটা সময় হাতে আছে। দুইজন একটা হোটেলে বসে খাসির মাংস দিয়ে খাবার সেরে নিলাম। বিল দিলাম আমি। শুধু এটাই না এবারের ভ্রমণের সব বিল গুলোই আমার দিতে হবে কেননা আমি এই ভ্রমণের ক্যাশ ম্যানেজার। ঠিক দুইটায় পরিবহনের একটি ছোট মিনি বাসে চড়ে বসলাম। এই বাসটিই আমাদের গাবতলীতে থাকা বড় বাসের কাছে নিয়ে যাবে। যেটি গাবতলী থেকে ৩.৩০ এ যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। শহরের ব্যস্ততা আর জ্যাম পেড়িয়ে ৩.২০ নাগাদ গাবতলী পৌছলাম।
যাত্রা শুরু হল বাস ছুটেছে সাভার পেড়িয়ে মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের দিকে। সন্ধ্যার পূর্বমুহুর্তে ফেরিঘাটে পৌছলাম। স্যারের স্মার্ট ফোন থেকে ফেইসবুকে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলাম। গধুলীর সময়টাতে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। সে এক দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ।
ওপারে যেতে যেতে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাস ছুটে চলেছে রাজবাড়ি পেরিয়ে, ফরিদপুর ঘেষে, মাগুরার উপর দিয়ে যশোরের পথে দুর্বার গতিতে। রাত ৯.৩০ এ যশোর নিউমার্কেটের সামনে। বাস থেকে নেমে রিক্সাযোগে গাড়িখানা মোড়ে। হোটেল ম্যাগপাইতে চার তলায় একটা ডাবল বেডের রুম নিয়ে রুমে ব্যাগ রেখে রাতের খাবার খেতে দ্রুত বেড়িয়ে পড়লাম। মফৎসল শহরে রাত দশটা মানে অনেক রাত। দোকান-পাট প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে। পাশেই একটা হোটেলে রাতের খাবার সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ টিভিতে দেশের অবস্থা নিয়ে চলা টক-শো দেখে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। বিপত্তিতা ঘটল ঠিক শোবার পর। প্রচুর মশার প্রচন্ড কামড়ে সারা রাতে আর ঘুম হল না। মশারীর ব্যবস্থা নেই। কাথা গায় দিলে গরম লাগে। দ্বিমুখী সমস্যা। আবার ভোরে উঠতে মোবাইলে এলার্ম দেয়া। বহুকষ্টে রাত পেরুল। আমি মনে মনে ভাবছি স্যারের বোধ হয় ভালই ঘুম হয়েছে। সকালে উঠেই স্যার প্রথম যে কথাটা বললেন তা ছিল, ‘এরপর থেকে হোটেলে ওঠার সময় আগেই জিজ্ঞাস করে নেব মশারী আছে কিনা’। অনেক খারাপ লাগার মাঝে ভাল লাগতে লাগলো। একে এক ফ্রেশ হয়ে রুম বুঝিয়ে দিয়ে হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
লক্ষ্য ফুলের গ্রাম গদখালী। একটা রিক্সাযোগে সোজা চাচড়া বাস স্ট্যান্ড গিয়ে হাজির হলাম। সেখানেই হোটেলে নাস্তা সেরে ‘পায়রা’ নামক একটা লোকাল বাসে রওয়ানা হলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট পর গদখালী পৌছলাম। এই রাস্তাটিই সোজা বর্ডারের দিকে বেনাপোল চলে গেছে। গদখালী বাজার বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমেই একটি দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চিতে বসে বিশ্রাম নিতে লাগলাম। পাশেই ফুলের বাজার। হাইওয়ের পাশেই ফুল ব্যবসায়ীরা ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কিছু ফুলের ছবি তুললাম। স্থানীয়দের কাছ থেকে গ্রামের ভেতরে ঢোকার রাস্তা জেনে নিলাম। একটা খোলা ভ্যান ভাড়া করে গ্রামের ভেতরে রওয়ানা হলাম।
বাজার পেড়িয়ে গ্রামে ঢুকতেই রাস্তার দু’পাশে ফুলের বাগান চোখে পড়ল। যতদূর চোখ যায় দিগন্ত জুড়ে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাদা, গ্যালোরিয়া ফুলের বাগান। আছে ঝাউ বাগানও। যেদিকে তাকাই শুধু ফুল আর ফুল। এখাঙ্কার মানুষের প্রধান পেশাই হল ফুল চাষ।
গ্রামের ভেতরে ঢুকেই চোখে পড়ল কিছু শেড। কাছে গিয়ে জানা গেল এগুলো জারবেরা ফুলের শেড। একটা শেডের ভেতরে ঢুকে চাষ পদ্ধতি, খরচ এবং বাজার দর সম্পর্কে জানলাম। বিভিন্ন রঙ বেরংয়ের জারবেরার ছবি তুললাম। গদখালীর নিয়ম অনুযায়ী ১০০ টি গোলাপের দাম ১০ টাকা আর একটি জারবেরা ফুলের দাম ২০/২৫ টাকা। আরও জানতে পারলাম ফুল চাষ শুরুর ইতিহাস।


গ্রাম থেকে বেড়িয়ে বাসে করে ঝিকরগাছা এলাম। ঝিকরগাছা যশোরের একটা থানা। সেখান থেকে ব্যতিক্রমধর্মী ট্যাকার নামক গাড়িতে করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম।
মাইকেলের বাড়ি কেশবপুর থানার সাগরদাড়ি গ্রামে। যে থানায় কিছু দিন আগে হনুমানেরা থানা দখল করেছিল। এ গাড়িটি মনিরামপুর পর্যন্ত যাবে। মনিরামপুর থেকে কেশবপুর প্রায় ১৭ কি.মি.। মনিরামপুর পৌছে লোকাল বাসে কেশবপুর রওয়ানা হলাম। বাসে গাদাগাদি করে মানুষ ওঠানো হয়েছে। কোনমতে ইঞ্জিন বক্সের উপর বসার ব্যবস্থা হল। অধিকাংশ যাত্রীই মহিলা। তাদের কোলে বাচ্চা এবং হাতে ব্যাগ বা বস্তা। তারা দাঁড়িয়ে ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে। এভাবেই যেন তারা অভ্যস্ত। তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক।
প্রায় আধ ঘন্টা পর কেশবপুর পৌছলাম। স্থানীয় এক দোকানির কাছ থেকে সাগরদাড়ি যাবার রাস্তা জেনে নিলাম। এখান থেকে প্রায় ১৩ কি.মি.। পর্যাপ্ত যানবাহন ঐ পথে নেই। একটা টং দোকানে চা খেয়ে মোটর সাইকেলে করে সাগরদাড়ি রওয়ানা হলাম। আনুমানিক ২০ মিনিট পর সাগরদাড়ি পৌছলাম। টিকেট কেটে মাইকেলের বাড়িতে ঢুকলাম। খোদাই করে লেখা, ‘দাঁড়াও পথিক! জন্ম তব বঙ্গে…।’ পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখলাম। ব্যবহার্য জিনিসপত্র, অবয়ব ভাস্কর্য, ঘাট বাধানো পুকুর ইত্যাদি দেখলাম। বেশ কিছু ছবিও তুললাম।


দেখা শেষে বের হয়ে আবার মোটর সাইকেলে করে কেশবপুর পৌছলাম। কেশবপুর থেকে যশোরের বাসে উঠলাম। প্রায় ২ ঘন্টা পর যশোর শহরে পৌছলাম। পথে বেশ কিছুটা বৃষ্টি হল। ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় নিউমার্কেট পৌছলাম। এখান থেকেই আমাদের ঢাকাগামী বাস বিকেল ৪ টায় ছেড়ে যাবে। দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষা। বাস এসে ছাড়তে ছাড়তে ৪.৩০। সন্ধ্যা নাগাদ ফেরি ঘাটে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল তাই প্রচন্ড জ্যাম বেধে গেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর এ পাড়ে আসতে আসতে রাত প্রায় ১০ টা। আনুমানিক ১২.১৫ নাগাদ গাবতলী পৌছলাম। একটা সিএনজি অটোরিক্সাযোগে স্যারকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১ টা। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। মা কে আগে থেকে বলা ছিল তাই ফোন করে জাগিয়ে বাসায় প্রবেশ করলাম। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে গেলাম। কাল থেকে আবার অফিস যেতে সকালে উঠতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×