somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনা-বেগম জিয়া ফোনালাপ,অডিও প্রচার, আওয়ামী মিডিয়া এবং আওয়ামী নেতাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং প্রতিভাত দৃশ্য

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩-৪ দিন ধরে সংবাদ মাধ্যম,অনলাইন আর সেই সাথে জনজীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ খবর ছিল "শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন দিবেন", নানা গল্প গুজব রটলো এ নিয়ে, আজ ফোন দিচ্ছেন, এখন ফোন দিচ্ছেন, কাল দিবেন, সমাবেশের সময় দিবেন এরকম গাল-গল্প শুনতে শুনতে অবশেষে দুপুর সোয়া একটার দিকে ফোন দেন শেখ হাসিনা, প্রায় আধা ঘন্টার মতন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনের "রেড ফোন" এ চেষ্টা করেও তিনি তাঁকে পাননি। এরকম স্ক্রলে টিভি স্ক্রিন ভরে গেলো। পরবর্তীতে দুজনের বিশেষ সহকারীর যোগাযোগ মারফত আমরা জানতে পারলাম সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন দিবেন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে। পুরো দেশ অপেক্ষায় রইলো কি হচ্ছে তাদের ফোনালাপে, অবশেষে কল্পনার সব অবসান ঘটিয়ে ফোনালাপ হল তাদের মধ্যে, প্রায় ৩৭ মিনিটের মতন। এরপর শুরু হলো পাল্টাপাল্টি, আওয়ামীলীগ থেকে বলা হলো হরতাল প্রত্যাহার না করে সংলাপের আহ্বান একরকম প্রত্যাখান করে জাতির সাথে বেইমানি করেছেন বেগম জিয়া, সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলা হলো যেহেতু খালেদা জিয়া তার বক্তব্যেই বলেছেন আন্দোলন এবং আলোচনা একসাথে চলবে এবং যেহেতু হরতালের ঠিক আগের সন্ধ্যায় জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হরতাল প্রত্যাহার সম্ভব নয়, সেহেতু ২৯ তারিখের পর যেকোন দিন আলোচনায় বসতে রাজী। এর বেশি কিছু আমরা জানতাম ই না। টুইস্ট শুরু হল যখন জাসদের সিল লাগানো কিন্তু নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে জিতে আসা মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন যে সেই ফোনালাপ জনসম্মুখে প্রচার করা উচিত। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন,"“খালেদা জিয়া ফোনালাপে বলেছেন, ‘মুক্তিবাহিনীর লোকেরাই গণহত্যা চালিয়েছিল’।” এই উপদেষ্টা আরো জানালেন যে " খালেদা জিয়া দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি করে মুক্তিযোদ্ধাদের গণহত্যাকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন।" বিষ্ময়ের শুরু এখান থেকেই।




হঠাৎ আওয়ামী পন্থী এক অনলাইন এক্টিভিটিস্ট এর স্ট্যাটাস পড়ে জানলাম যে রাত ১:১৫ তে একাত্তর টিভির সংবাদে প্রচার করে হবে সেই ফোনালাপ। সন্দেহের ডালপালা আর সেই সাথে বিষ্ময়ের সবটুকুন একত্রিত হলো। তারপর...

হুম পুরো ফোনালাপ মনোযোগ দিয়ে শুনলাম, কেউ যদি আমাকে জিগ্যেস করেন যে সারমর্ম কি? আমার উত্তর হলো যে, রাজনৈতিকভাবে সবদিক থেকে খালেদা জিয়া যে শেখ হাসিনার থেকে বর্তমানে এগিয়ে আছেন হাজার বা তারও বেশি গুণে এই ফোনালাপেই তা প্রমাণ হয়। কেননা ফোনালাপে খালেদা জিয়ার একটা (একটা মানে ১টা ) ও কথার কোন উত্তর দিতে পারেননি শেখ হাসিনা। পুরো ৩৭ মিনিটের অধিকাংশ সময়ে যখন তিনি কথা বলেছেন তার বেশিরভাগ জুড়ে বলেছেন " হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের আলোচনায় আসুন।" অথচ বেগম জিয়ার প্রত্যেকটা যুক্তি,কথার কোন উত্তরও দিতে পারেন নি। বেগম জিয়া প্রতিটা ফান্ডামেন্টাল ইস্যু তুলে তুলে আঘাত করেছেন। লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি , শুনে নিন।

এখন কিছু সম্পূরক পয়েন্টঃ
পয়েন্ট-০১
এইচ টি ইমাম বলেছেন, “খালেদা জিয়া ফোনালাপে বলেছেন, ‘মুক্তিবাহিনীর লোকেরাই গণহত্যা চালিয়েছিল’।”
অথচ খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন,"৭১ এর পরে আপনাদের বাহিনীর লোকেরা মানুষকে হত্যা করেছিল।"
তাহলে কিসের ভিত্তিতে এইচ টি ইমাম এবং অনলাইনে এদের অনুসারীরা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যাচার করলো???

পয়েন্ট-০২
যুদ্ধাপরাধীর ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়া খুব স্পষ্ট করে বলেছেন যে " আপনারা যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠিক মতো করতেন - তাহলে আমরা পূর্ণ সমর্থন দিতাম, আপনি আপনার দলের রাজাকারদের ই তো বিচার করেননি। "

পয়েন্ট-০৩

ফোনালাপের কোথাও শেখ হাসিনা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা উচ্চারণ ও করেন নি, যেটা বলেছেন যে সর্বদলীয় সরকার।
তাই যদি হয়, তাহলে কিসের জন্য সংলাপ ??

পয়েন্ট-০৪
বার বার শেখ হাসিনা যখন হরতাল প্রত্যাহারের কথা বলছিলেন তখন খালেদা জিয়া বলেছেন এটা তাঁর একার সিদ্ধান্ত নয়, ১৮ দলের সিদ্ধান্ত। এই মুহুর্তে তা প্রত্যাহার করা কোনভাবেই সম্ভব নয়, সব পুলিশ দিয়া ঘেরা দিয়ে রাখেন আমার নেতারা আসবে কিভাবে! শেষমেষ খালেদা জিয়া এও বলেছেন "আপনি বলেন নির্দলীয় সরকার মেনে নিবেন, আমি হরতাল উইথড্রো করে নিবো সাথে সাথেই।"

এবার সম্পূরক প্রশ্নঃ

১. ব্যাক্তিগত আলাপচারিতা রেকর্ড কাজটা কতটা নৈতিক?
২. এ ধরনের আড়িপাতা ও গণমাধ্যমে প্রকাশ কি আইনী ভাবে বৈধ? তথ্য প্র‌যুক্তি আইন কি বলে এটা সম্ভব?
৩. ফোনে আড়িপাতা কি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেল?
৪. দেশের দুই প্রধান নেত্রীর আলাপচারিতা রেকর্ড করে একটা টেলিভিশনে শুনানো হচ্ছে এর চেয়ে লজ্জার বিষয় কি হতে পারে????

আমার দেশ এর সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ ছিল সেই একই অভিযোগ আরো গুরুতরভাবে কেন একাত্তর টিভি এবং এর পরিচালনা পর্ষদের উপর প্রয়োগ হবে না?? "স্কাইপ কেলেংকারী" প্রকাশের একটা শক্তিশালী যুক্তি ছিল যে "রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়েছে।" কিন্তু এই অডিও টেপ কার অনুমতিতে তাও রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুইজন ব্যক্তি এবং কোন 'বৃহত্তর' স্বার্থে প্রকাশ করা হয়েছে????

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কি এবার মোজাম্মেল বাবুর একাত্তর টিভি বন্ধে সোচ্চার হবেন???? পপকর্ণ নিয়ে গ্যালারিতে বসলাম, তাদের এবারের প্রতিক্রিয়া দেখতে...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:২৪
২৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×