somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুমের স্বীকার একটি আত্মার আত্মকাহিনী

০১ লা মে, ২০১৪ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১#
লাশটি তখন নদীটির তলদেশের দিকে যাচ্ছে, যতটা ধীরে নিচের দিকে নামার কথা ততটা না, প্রায় ৩০ কেজি ওজনের পাথর আমার ৬৫ কেজি ওজনের শরীরের সাথে বাঁধা, তাই একরকম টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, উৎসুক মাছেরা চোখগুলো বড় করে দেখছে, চোখে ভয়ের চিহ্ন ও দেখলাম, হয়তো উজবুক ভেবেছে...ছোট ছোট মাছ, বড় ছোট মাছ, দলবদ্ধ মাছ... মাছগুলোকে দেখে আমার ছোট ছেলেটার কথা মনে পরে গেল, তার ভারি শখ একুরিয়াম করার, দলবদ্ধভাবে মাছ সাঁতরাবে, সে দেখবে... তার নাকি ভারি আনন্দ হয়... কিছুদিন আগে একটা ছোট একুরিয়াম কিনেও দিয়েছি... ১০-১২টা পোনার... হঠাৎ করে শরীরটা কিসের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। বুঝতে পারলাম একেবারে তলদেশে এসে পড়েছি... এমন সময় মাঝারি আকারের এক ঝাঁক মাছ এদিকে তেড়ে আসছে দেখলাম, কাছে আসতেই সব থেমে গেল... পুচ্ছ নাড়িয়ে আমাকে দেখছে... এ কি ! আমি মাছেদের প্রতিটা কথা শুনতে পারছি যে...
- মানুষটির অবস্থা এমন কেন?
- বুঝতে পারছিনা, পেটটাকে এভাবে কেটে কেটে দিয়েছে কেন? আর চোখগুলো কেমন জানি উপড়ানো !
- পায়ে শিকলও বেঁধে দিয়েছে, মৃত মানুষের সাথে এরকম ! এমন কি করেছে?
হঠাৎ করে মুরব্বীগোছের এক মাছ এসে বললো,
"এখন থেকে আর তলভাগে আসা যাবেনা, একের পর এক মানুষের লাশ আসছে, কারো চোখ উপড়ানো, কারো হাত নেই, হাত আছে তো আঙ্গুল নেই, হাত-আঙ্গুল আছে তো পা ভাঙ্গা, পা ঠিক তো পেট কেটেকেটু হৃদপিণ্ড ফুঁসে বের হয়... এত বিচ্ছিরি দৃশ্য আর অবস্থায় তলভাগ দূষিত হয়ে গেছে, এরা কদিন পর আমাদের ভূত হয়ে তাড়াবে... না জানি এরা এমন কোন দোষে দোষী ! এদের এসব দেখলে আমাদের প্রজন্মের মধ্যে এদের রোগের সংক্রমণ হতে পারে। কেউ ভুলেও আর আসবেনা এদিকে। চলো এক্ষুনি। "

আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম, আমি কোন দোষ করিনি, বিশ্বাস করো, আমি কোন রোগে অসুস্থ ও নাই... ওরা ...ওরা আমাকে বাঁচতে দেয় নি... ওমা... আমার গলা? গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন? আমার চিৎকারের আওয়াজ ওরা শুনছে না কেন? আমিইইইইইইইইই......

২#
আশেপাশে তাকিয়ে দেখি... আরো লাশ... ফেঁপে ফুলে থাকা লাশ... লাশের সারি সারি বাগান... পত্রিকায় পড়া গুমের খবরগুলোর বুঝি এখানেই অবস্থান... মনে হলো, গুমের স্বীকার মানুষের রাজ্যে শুয়ে আছি... এই রাজ্যেও ক্রমাগত জনসংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীতে জনসংখ্যা কমানোর জন্য কত্ব পরিকল্পনা; এই রাজ্যের জন্য কি কোন পরিকল্পনা নেই????????

৩#
ছোট ছেলেটার কান্নায় ঘুম ভাঙল, চোখ খুললো না... খুললেও যে লাভ হত,তাও না... চোখের মণি যে চোখের মধ্যে নেই ! ছেলে কাঁদছে আর বলছে, "আব্বু আব্বু আমাকে আরেকটা একুরিয়াম কিনে দিতে হবে, তুমি ওঠো, এখনি ওঠো।" ১৪ বছরের প্রেম করে বিয়ে করা আমার বউটা বার বার মূর্ছা যাচ্ছে আর সম্বিত হতেই বলছে, "ওগো, ওগো, ওগো, আমি তোমার কাছে কখনো আর কিচ্ছু চাইবো না, শাড়ি চাইবো না, গহনা চাইবো না, কিচ্ছু না... শুধু তুমি ফিরে এসো, শুধু তুমি ফিরে এসো।" বউয়ের কান্না শুনে খারাপ লাগলো না, হাসি ই পেলো বরং। বউটা সারাজীবন বোকা-ই রয়ে গেল, গুম হয়ে গেলে মানুষ কি ফিরত আসতে পারে??? আমি তো তাও লাশ হয়ে এসেছি, এতো তোমার সাত পুরুষের সৌভাগ্য। শুকরিয়া করো। আমার বৃদ্ধ্বা মা-কে দেখে আর সহ্য হলো না... যারা লাশ ফিরিয়ে এনেছে তাদের সব অভিশাপ দিতে ইচ্ছে হলো... মরা মানুষের অভিশাপের ই দাম নেই... আর গুমিত মানুষের , হাহ! মা কাঁদছেন আর বলছেন, "যেই ছেলেকে পেটে নিয়েছি আমি, যেই ছেলে হাঁটতে পারতো না, হাটা শিখিয়েছি আমি, যেই ছেলের কপালে টিপ দিয়ে বলে দিতাম, আমার ছেলে লাখ মানুষের মাঝে হারিয়ে গেলেও এই টিপ দেখে চিনে নিবো আমি, সেই ছেলের সারা শরীরটা দেখেও চিনতে পারিনা আমি... আল্লাহ, তোমার আরশে কাঁপন ধরে না??? মায়ের কান্না তুমি শোনো না... "
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ৯:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×