somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামারুজ্জামানের কবরে সকাল হতেই হাজারো জনতার ঢল

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। বিদ্যুৎহীনতা। তার উপর বিজিবি-র‍্যাব-পুলিশের কড়াকড়ি। পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই ঘেঁষতে পারছিল না কেউ

ফলে রবিবার ভোর রাতে অনেকটাই চুপেচুপেই জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়ে যায়। যাতে সীমিত সংখ্যক স্বজন ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু সূর্য উঠতেই অন্যরকম দৃশ্য।


হাজার হাজার মানুষ আসছে কামারুজ্জামানের কবরে। তাদের কারো চোখে শোকের অশ্রু, কারো চোখে ভয়ার্ত চাহনি। কী করবে, না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেউ কবরে একমুঠো মাটি দিচ্ছে। কেউ কবরের মাটিতে চুমু খাচ্ছে। কেউ আবার কবর জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, প্রশাসনিক বাধা যত কাটবে কামারুজ্জামানের কবর ঘিরে জনতার ঢল বাড়বে।
ইতোমধ্যে শেরপুরের চরাঞ্চল থেকে অনেক সাধারণ নারী-পুরুষ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক জায়গা থেকে কামারুজ্জামানের ভক্তদের রওনা হওয়ার কথা জানা গেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কামারুজ্জামানের ফাঁসি হলেও তার ভক্ত-সমর্থকরা মনে করেন তিনি নির্দোষ। রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তারা দাবি করেন জীবনে কখনোই নালিতাবাড়ী উপজেলার বিধবাদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত সোহাগপুরে যাননি কামারুজ্জামান।
রবিবার ফজর নামাজের পর ভোর ৫টা ২০ মিনিটে বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমড়ি মুদিপাড়া গ্রামের বাড়িতে ‘বাজিতখিলা এতিমখানা মাদ্রাসা’ সংলগ্ন জমিনের কবরে কামারুজ্জামানকে শুইয়ে দেয়া হয়।
এরআগে ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে মাওলানা আবদুল হামিদের ইমামতিতে কামারুজ্জামানের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযায় তার নিকটাত্মীয় ও গ্রামের মানুষ অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান।


অন্যদিকে সারা রাত প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার গ্রামের বাড়ির পাঁচ বর্গ কিলোমিটারের বাইরে হাজার হাজার মানুষ রাতভর অপেক্ষা করেও জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি।
শেরপুর সদর আসন থেকে লক্ষাধিক ভোট পাওয়া কামারুজ্জামানের জানাযায় জনসমাগম ঠেকাতে গ্রামের বাড়ির পাঁচ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এমনকি ঢাকা থেকে লাশের সাথে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীরাও স্থানীয় বাজিতখিলা বাজারে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, কামারুজ্জামানের জন্মভূমি বাজিতখিলা ইউনিয়ন জুড়েই রাতভর শতশত বিজিবি, র্যা ব ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিল।
রাতে ওই এলাকায় প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়। পুরো এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ভোর ৪টার দিকে বিদ্যুৎ আসলেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। তারপরেও জনসমাগম প্রতিহত করতে সারা রাতই সশস্ত্র টহল দিতে হয়।
বাজিতখিলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল স্বীকার করেছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম ।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুর জেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমরি মুদিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলবি ইনসান আলী সরকার।
কৃষকের সন্তান ও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় শেরপুরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কামারুজ্জামন। এলাকাবাসী তাকে ‘জামান’ সম্বোধন করতেন।
কামারুজ্জামান শেরপুর সদর আসন থেকে চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবারই তিনি বিপুল সংখ্যক ভোট পান।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জীবনের সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোট পান কামারুজ্জামান। কিন্তু বরাবরের মত তিনি নির্বাচনে হেরে যান।

এলাকার সন্তান হিসেবে চরাঞ্চলের নারী ও শহরের হিন্দুদের ব্যাপক সংখ্যক ভোট পান। কিন্তু শেরপুর সদর আসনে জামায়াত-শিবিরের নিজস্ব নেতাকর্মীর সংখ্যা পাঁচশ’রও কম হওয়ায় কখনোই বিজয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। কিন্তু কোন নির্বাচনেই তার জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং বেড়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের পর এলাকাবাসী আন্দোলনের চেষ্টা করেছিল। তখন বহু সংখ্যক মামলা, কারাবাস ও মারধরসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে শত শত মানুষ এলাকাও ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
কামারুজ্জামানের মৃত্যুর পরের পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, তার কবর ও পরিবারের প্রতিও অকুণ্ঠ সমর্থন বজয়া রাখবেন শেরপুরের কামারুজ্জামান ভক্তরা।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে মারা যান জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)।
অবশ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান রাত সাড়ে ১০টায় কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
ফাঁসিতে জীবনাবসান করার ঠিক আগ মুহূর্তে কামারুজ্জামানকে তওবা পড়ান জেলারের নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কারাগারের পেশ ইমাম মো. মনিরুল ইসলাম।
এরপর পেছনে হাত বেধে কনডেম সেল থেকে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যান জল্লাদরা। এ সময় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতে ছিলেন কামারুজ্জামান। ফাঁসির কাষ্ঠে নেয়ার সময় স্বাভাবিক ও ভাবলেশহীন ছিলেন তিনি।

এর আগে শনিবার রাত সোয়া ৯টায় গোসল করার পর রাত সাড়ে নয়টায় জীবনে শেষবারের মতো ইলিশ মাছ, মুরগির মাংস ও সাদাভাত খান কামারুজ্জামান।
এরপর কামারুজ্জামান এশার নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে মুনাজাতে তাকে শহীদ হিসেবে কবুল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করা ও নতুন প্রজন্মের সত্যিকারের ইতিহাস জ্ঞাত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।

জানা গেছে, কামারুজ্জামানকে স্বাভাবিকভাবে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। এ সময় জল্লাদ রাজু কামারুজ্জামানের কাছে দোয়া চান। কামারুজ্জামান তাকে নিয়মিত নামাজ পড়ে বলে জানান তিনি নির্দোষ।
ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার পর কামারুজ্জামানের গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো হয় এবং কালো জমটুপি দিয়ে তার চোখ ঢেকে ফেলা হয়। এ সময় কামারুজ্জামান অনুচ্চস্বরে কুরআন শরীফ পড়ছিলেন।
পরে প্রথা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী তার হাতে রাখা একটি লাল রুমাল মাটিতে ফেললে প্রধান জল্লাদ রাজু ফাঁসির মঞ্চের লিভার (লোহার তৈরি বিশেষ হাতল) টান দেন। এ সময় কামারুজ্জামান চিৎকার করে কলেমায়ে তৈয়্যবা পড়েন।
কামারুজ্জামানের পায়ের নিচ থেকে কাঠের পাটাতন সরে গেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০ মিনিট ঝুলে থাকার পর তাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামানো হয়।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×