টুনটুনি ডিম পাড়ার আগে গাছের পাতা সেলাই করে নেয়। আচ্ছা আমাদের সুই আছে, সুতা আছে ওদের কি তা আছে? ওরা তো পাখি তাহলে কেমন করে করবে শুনি? এই পাখিটা ডুমুরের পাতায় বাসা বাঁধতে বেশি ভালো বাসে তবে বেগুন গাছেও বাঁধে।ছোট্ট পাখির ছোট্ট পৃথিবী।ডিম তো পাড়তে হবে তার জন্য ঘর তো আগে চায়।ঠোঁটে করে তুলা সংগ্রহ করে আনে তারপর ঠোঁট দিয়ে পাতা ফুটো করে তার মাঝে তুলা ঢুকিয়ে সেলাই করে ফেলে পাতা।আপনি কখনো ভেবেছেন ছোট্ট পাখির এই নিখুঁত কারুকার্য কে শিখিয়ে দিল ?কে তাকে এত বুদ্ধি দিল? কিভাবে তারা এত দক্ষ হয়ে উঠল!
ঘুমিয়ে আছি অথচ তখনো পৃথিবী জেগে আছে।এই যে ঘুমের সময়ও একটা পোকা গা'য়ের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেও টের পাই, হাত ব্যস্ত হয়ে উঠে পোকাকে সরাতে।তারপর আচমকা কোন শব্দ হলে জেগে উঠি বিশেষ করে যে কোন বিপদের মূহুর্তে। মাঝে মাঝে ভাবি আমরা ডুবে আছি রহমতের সাগরে।প্রতিটা সেকেন্ডই রহমত। তা না হলে সদা ঘূর্ণায়মান এই পৃথিবীতে স্থির হতে পারতাম না কোন কিছুতেই।প্রতি মূহুর্তে বিপদ এসে যেত! একটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আর একটা।প্রায় দিন এমন হয় হাঁটতে গিয়ে পড়েও যাচ্ছিলাম কিন্তু শেষ অব্দি যায়নি।
ইদের দিন আমাদের এক আত্মীয় ঘরের মধ্যেই ছিলেন তারপর কিভাবে যেন পড়ে গেলেন।হাতের দুটো হাড় ভেঙে গেল।
ইদের পর দিন আমাদের অন্য আরেক আত্মীয় ভাই -বোন বাইকে করে বাসা থেকে বের হয়েছেন। পথে যেতে না যেতেই এক্সিডেন্ট। হাত ভাঙিনি কিন্তু মারাত্মক আহত হয়েছে।
ঘটনা দুটি বলার কারণ হল বিপদ যে কোন ভাবেই মানুষের জীবনে আসতে পারে সেটা ঘরে থেকেও কিংবা রাস্তায়।যার হাত ভেঙেছে তার এর চেয়ে বড় ক্ষতি হতে পারত।রহমত ছিল বলেই এইটুকুর উপর দিয়ে গেছে।একটা কলম যখন মানুষ প্যান্টের ডান পকেটে রেখে বাম পকেটে খোঁজে আর খুঁজেও যখন পায় না পেরেশানি বোধ করে এই সময়টুকুর জন্য কিন্তু গুনাহ মাফ করা হয়। সেখানে জীবনে যখন কোন কষ্ট আসে তখন ভাবা উচিত এর বিনিময়ে হয়ত পাপ মোচন হচ্ছে।অন্য প্রসঙ্গে একটু বলি আমরা কিন্তু ভীষণ পাপী।বিশেষ করে ছোট ছোট পাপে।ধরুন আপনি বলেই ফেললেন তুমি তো অনেক খাটো আমি তোমার চেয়ে লম্বা।এই কথাটা দুর্গন্ধময় কথা যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে সমুদ্রও দুর্গন্ধময় হবে।কথাটিতে মানুষ আঘাত পাবে।শুধু নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এই পাপগুলো করি।ছোট পাপ হিসেবে নিজেরা ভাবি। কিন্তু শস্য দানার পরিমাণ অন্যায়ও পাপ।যাইহোক সেই আগের কথায় ফিরে যাই।
যাদের এক্সিডেন্ট হল বাসার কাছাকাছি একবার চিন্তা করেন যে তাদের অনেক দূরে এক্সিডেন্ট হল সেখানকার কেউ তাদের চেনে না, কোন হাসপাতাল ভর্তি নিল না, ডাক্তার পেল না তাহলে আরো বিপদ কী হত না।
একই রাস্তা পার হয়ে ওপারে যান কিন্তু কোন একদিন বিপদ আসে তার মানে প্রতিনিয়ত রহমতে ডুবে ছিলেন।আজ বিপদ এল কারণ এটা আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল আপনি চাইলেও লিখিত এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতেন না। যাইহোক আমরা সত্যি ই বুঝি না কী অপরিসীম নেয়ামত ঘিরে আছে আমাদের। আমাদের চোখ ব্যস্ত অন্য কিছুতে,হৃদয় ব্যস্ত উদাসীনতায়।আমাদের ভাবনার সময় নেই। প্রতিমুহূর্তে কাটছে অস্থির ব্যস্ততায়।আমাদের সাথে সব সময়ই রহমতের ফেরেশতা আছে যারা বিশ্বাস করে না সেটা তাদের বিষয়।আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য ফুল, পাখি, আকাশ,নদী,মেঘ ইত্যাদির অফুরন্ত আয়োজন।আমরা বেঁচে আছি এটাই আমাদের জীবনের বড় পাওয়া।সমবয়সী অনেক মানুষ যারা ব্যস্ত আছে কবরে তাদের কর্মের হিসেব দিতে আর আমরা ব্যস্ত আছি আমাদেরকে নিয়ে কার সাথে শত্রুতা করা যায়,কার জমি দখল করে নেয়া যায়,কিভাবে সম্পর্ক নষ্ট করা যায় ইত্যাদি।
যে অবস্থায় থাকুন আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করুন প্রশংসায় বলুন আলহামদুলিল্লাহ্, বিস্ময়ে বলুন সুবহান আল্লাহ, দু:খের সংবাদে বলুন ইন্নালিল্লাহ ইত্যাদি।
শস্য দানার ন্যায় ছোট্ট এই শব্দগুলোকে অভ্যস্ত করিয়ে নিন নিজের সাথে।শুকরিয়া আদায় করুন সেই মহান স্রষ্টার যিনি আসমান ও জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি এবং যার কোন ইলাহ নেই।তিনি এক ও অদ্বিতীয়।
#এলোমেলো
©রুবাইদা গুলশান
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০৮