somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতাবাদ কি? - প্রথম পর্ব

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানবতাবাদের কয়েকটি সংজ্ঞাঃ
1.মানবতাবাদ হচ্ছে একটা পার্থিব জীবন দর্শন যা যুক্তিতর্ক, নৈতিকতা ও সুবিচারকে ধারণ করে এবং বিশেষত নৈতিকতা ও সিদ্ধান্ত প্রনয়নের ভিত্তি হিসেবে অলৌকিকতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে। (উইকিপিডিয়া)

2.মানবতাবাদ একটা অলৌকিকত্ববিহীন জীবন দর্শন, যা দাবী করে যে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টিপূর্ণ নৈতিক জীবনযাপনের সামর্থ্য ও দায়িত্ব রয়েছে মানুষের এবং তা মানবজাতির জন্য অধিকতর কল্যান সাধনের প্রয়াস করে। (আমেরিকান মানবতাবাদী সঙ্ঘ)

3.মানবতাবাদ একটি গণতান্ত্রিক ও নৈতিক জীবন দর্শন, যা দাবী করে যে মানুষের অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে নিজ জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার ও তার গতিবিধি নির্ণয় করার। মানবতাবাদ বিশ্বাস করে যে, মানুষ যুক্তিবাদ ও মুক্তচিন্তা প্রয়োগ করে একটা অধিকতর মানবীয় সমাজ প্রতিষ্টা করার সামর্থ্য রাখে, যার ভিত্তি হবে মানবীয় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক গুণাবলী। তা ধর্মীয় নয় এবং বাস্তবতার অলৌকিক ধারণা গ্রহণ করে না। (International Humanist and Ethical Union, Minimum Statement)

আমার মতে মানবতাবাদঃ মানবতাবাদ হবে মানুষের নিজস্ব চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে গঠিত একটি জীবনতত্ত্ব, যা হবে মানবীয় প্রবৃত্তির সাথে যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যার লক্ষ্য হবে মানুষের সুখ-শান্তিকে সর্বাধিক বর্ধিতকরণ।

আমি এখানে মানবতাবাদের ভিত্তি গঠনে মানবীয় প্রবৃত্তির উপর বিশেষ জোর দিচ্ছি, কেননা মানুষ ভাল ও মহৎ কাজ করে আবার ভুল করে, সে নিজ স্বার্থবাদী ও স্বার্থপর হয় এবং সে মন্দ কাজ, যেমন চুরি, ডাকাতি, হত্যা করতেও সক্ষম। কাজেই মানবতাবাদী জীবনবিধান নির্ধারিতকরণে মানুষের এ ভুল করার, মন্দ ও অন্যায় কাজ করার প্রবৃত্তিকে যতটা সম্ভব মানবীয়/সহনশীল দৃষ্টিতে দেখা উচিত বলে আমার বিশ্বাস। সেটা না করলে আমাদের সমাজ সহনশীল, সুবিচারী ও সভ্য হবে না। আমার মতে মার্ক্সবাদী সমাজতান্ত্রিক সমাজতত্ত্বের এখানে ছিল একটা বড় ব্যর্থতা। মার্ক্সবাদ চেয়েছে মানুষের দুর্বল ও মন্দ দিককে অসহনশীল দৃষ্টিতে দেখতে, ব্যক্তি ও সমাজ জীবন তা থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে।
উদারবাদ
যাহোক, মানবতাদের একটি বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এখনো দাঁড় করানো হয় নি। পাশ্চাত্যে চর্চিত উদারবাদ মার্ক্সবাদের মত একটা মানব-সৃষ্ট সামগ্রিক জীবনবিধান। এবং মার্ক্সবাদের মত উদারবাদে মানবজীবনের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা রয়েছে।

ইউরোপে ‘ইনলাইটনমেন্ট’ যুগে উদারবাদ একটি সুষ্ঠ জীবনবিধান রূপে আবির্ভূত হয় – যার মাঝে ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও বিশ্ব পর্যায়ের নীতিগত ধারণা অন্তর্নিহিত। এবং উদারবাদের পাখায় ভর করেই মার্ক্সবাদ আরেকটি নিঃধর্মীয় জীবনব্যবস্থা রূপে আবির্ভূত হয়। মার্ক্সের মতে সমাজতন্ত্র হচ্ছে একটি নিখুঁত ও চূড়ান্ত জীবনব্যবস্থা, যে প্রসংগে তিনি বলেছেনঃ
“সমাজতন্ত্র হচ্ছে মানুষ ও প্রকৃতি মাঝেকার এবং মানুষে মানুষে সংঘাতের প্রকৃত সমাধান; অস্তিত্ব ও জীবনের মাঝেকার, পণ্যায়ন ও আত্ম-অভিব্যক্তির মাঝেকার, স্বাধীনতা ও চাহিদার মাঝেকার, এবং ব্যক্তি ও প্রজাতির মাঝেকার দ্বন্দ্বের সত্যিকার সমাধান। এটাই ইতিহাসের সমস্যার সমাধান এবং সে জানে নিজেই সে সমাধান।” ([communism] is the genuine resolution of the conflict between man and nature, and between man and man, the true resolution of the conflict between existence and being, between objectification and self-affirmation, between freedom and necessity, between individual and species. It is the solution of the riddle of history and knows itself to be the solution.)
এবং একজন মার্ক্সবাদী দাবী করতে পারে যে, মার্ক্সবাদই একটা নিখুঁত ও পরিপূর্ণ মানবতাবাদী জীবনব্যবস্থা, যে দাবী মার্ক্স নিজেই করে গেছেন, যখন তিনি বলেছেনঃ “কমিউনিজম সম্পূর্ণরূপে ‘প্রকৃতিবাদ’ হিসেবে উন্নীত হলে মানবতাবাদের সমতূল্য হবে, এবং সম্পূর্ণরূপে মানবতাবাদ হিসেবে উন্নীত হলে প্রকৃতিবাদের সমতূল্য হবে।”

মার্ক্সবাদের মতো উদারবাদ নিখুঁত নয়। উদারবাদী তত্ত্বের মূলে রয়েছে অব্যাহত পরিবর্তনশীলতার স্পন্দন। এবং আমার ব্যক্তিগত বিচারে উদারবাদ হতে পারে অনেকাংশে মানবতাবাদের ভিত্তি। অথবা উদারবাদ ও মার্ক্সবাদের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হতে পারে একটি সুসংহত মানবতাবাদী জীবন দর্শন।

আমরা সবাই ইসলামের পাশাপাশি মার্ক্সবাদ বা সমাজতান্ত্রিক জীবন-ব্যবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি পরিচিত। একটা সামগ্রিক জীবন দর্শন হিসেবে উদারবাদের সাথে আমাদের পরিচিতি কম। কাজেই এখানে আমি উদারবাদ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×