somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামি অর্থনীতি

১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কার্ল মার্ক্স ও এ্যাঙ্গেলস নবী মুহাম্মদের ইসলাম প্রতিষ্ঠার অভিযানকে একটা অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার বিপ্লব হিসেবে দেখতেন। সেটাকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বলা না হলেও তাদের দৃষ্টিতে সেটা ছিল মূলত একটা অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রসূত দ্বন্দ্ব। কিন্তু আজ পাশ্চাত্যের অনেক পণ্ডিত বলতে চান যে, নবী মুহাম্মদ ছিলেন মূলত একজন পূঁজিবাদী। এবং তাদের যুক্তি হচ্ছে নবী ছোটকাল থেকে ব্যবসা কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ধনাঢ্য খাদিজার বিরাট ব্যবসাকে সফল ও লাভজনক ভাবে পরিচালনা করেছিলেন।

প্রশ্ন হচ্ছেঃ এ দু’টো দাবীর মধ্যে কোনটি সঠিক? নবী মুহাম্মদ সমাজবাদী বা সমাজতান্ত্রিক ছিলেন, না পূঁজিবাদী?
১৯৯৯ সালে বিবিসি’র সমীক্ষায় মার্ক্স দ্বিতীয় শহস্রাব্দের সেরা চিন্তাবিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কাজেই মুহাম্মদ সম্পর্কে বিচার-বিবেচনায় তিনি আজকের চুনোপুটি পণ্ডিতদের কাছে হেরে যাবেন, সেটা কী করে সম্ভব! যারা মুহাম্মদকে পূঁজিবাদী হিসেবে দেখেন, তারা ভুলে যান যে, নবীর জীবনের দু’টো অধ্যায় রয়েছেঃ প্রথমটা পৌত্তলিক, দ্বিতীয়টা ইসলামী। এবং তিনি পূজিবাদী ছিলেন পৌত্তলিক অধ্যায়ে। ইসলামের নবীত্ব শুরুর পর তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দেন এবং স্ত্রী খাদিজার পূঞ্জীকৃত ধন-সম্পদের উপর ভর করে তার ইসলামী বিপ্লব সংগঠিত করতে থাকেন। সে পর্বে আমরা দেখি খাদিজা ও আবু বকর প্রমুখ ধনাঢ্য মুসলিমরা তাদের ধন সম্পদ দিয়ে দারিদ্র-পীড়িত মুহাম্মদের শিষ্যদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ মুহাম্মদের ইসলামী নবীত্ব পর্বে আমরা তার সম্প্রদায়ের মাঝে মার্ক্সবাদী অর্থনীতির ছাপ দেখি ।
এবং মদীনায় স্থানান্তরের পর আমরা নবীকে দেখি বাণিজ্য-কাফেলা আক্রমণ করে লুণ্ঠিত মালামালে তার মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিত করতে। এটা পূঁজিবাদের পরিপন্থী, কেননা একজন পূঁজিবাদী চাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের বাধা-বিঘ্নহীন পরিচালনা।

এবং এরপর নবী মদীনা থেকে শুরু করে আরবের ধনী সম্প্রদায়গুলোকে হামলা করে তাদের ধন-সম্পদ করায়ত্ব করতে থাকেন, যার উপর ভিত্তি করে তাঁর মুসলিম সম্প্রদায় জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। কোরানের অষ্টম সুরাটির শিরোনাম হচ্ছে “আন-ফাল”, যার অর্থ হচ্ছে “গণিমতের মাল” বা “যুদ্ধে লুণ্ঠিত মালামাল”। এ সুরাটি মুসলিমদেরকে নির্দেশনা দিয়েছে কিভাবে তারা অবিশ্বাসীদের মালামাল লুণ্ঠণ করে তা মুসলিমদের মাঝে বণ্টন করবে। বণ্টনের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন লুণ্ঠণের এক-পঞ্চমাংশ নবী ও আল্লাহর ভাগে যাবে; বাকী অংশ সব মুসলিমদের মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে।

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্ম-প্রণালীও কিন্তু অনেকটা সেরকমই। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রাথমিক পর্বে ধনীদের ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়ে সবার মাঝে পুনর্বণ্টন করা মার্ক্সবাদী অর্থনীতির একটা বড় লক্ষ্য। সে প্রসঙ্গে নবীর গ্রহণকৃত অর্থনৈতিক পন্থা মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক নীতির কাছাকাছি ছিল।

মোটকথা পৌত্তলিক জীবনে নবী ছিলেন পূঁজিবাদী এবং ইসলামী মিশন গ্রহণের পর তিনি পূঁজিবাদ বিরোধী হয়ে উঠেন এবং অনেকটা মার্ক্সবাদী পন্থার কাছাকাছি ছিল নবীর ইসলামী অর্থনৈতিক পন্থা।
এবং নবীর জীবনের শেষ পর্যায়ে যখন পুরো আরব ইসলামের পদতলে এসে গেছে এবং বেশীর ভাগ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে, যার ফলে লুটপাট করার মতো আর সম্প্রদায় অবশিষ্ট নেই – তখন আগের সেই অর্থনৈতিক পন্থা মেনে চলা সম্ভব হল না। এখন লুটপাটের পেশা ছেড়ে মুসলিমদেরকে হয় চাষাবাদ বা ব্যবসা-বাণিজ্যে তথা পূঁজিবাদী পথে যেতে হবে, নইলে অন্য উপায় বের করতে হবে। এবং আল্লাহ কি করলেন? আল্লাহ সেটা নির্ণয় করেছেন কোরানের ৯:২৮-২৯ আয়াতে।
৯.২৮: “হে বিশ্বাসীরা! পৌত্তলিকরা সত্যি সত্যি নোংরা; সুতরাং এ বছরের পর আর তাদেরকে কাবায় ঢুকতে দিবে না। এবং তোমরা যদি দারিদ্রের আশংকা কর, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদেরকে ধনবাদ করে তুলবেন...”
আল্লাহ কীভাবে মুসলিমদেরকে ধনবাদ করে তুলবেন? তা তিনি উল্লেখ করেছেন পরের আয়াতে (৯:২৯), যাতে আল্লাহ বলেছেনঃ “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহর নবী যা নিষেধ করেছেন তা নিষিদ্ধ বিবেচনা করে না – তারা আসমানী কিতাবের মানুষ হলেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাও যতদিন-না তারা অবমানিত ও বশীভূত হয়ে স্বেচ্চায় কর প্রদান করবে।”

মুসলিমরা রাষ্ট্রকে দিবে নগণ্য যাকাত মাত্র, তাও স্বেচ্ছামূলকভাবে – যার দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রের পরিচালনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ইসলাম পৌত্তলিকদেরকে বাঁচতে দেবে না। একমাত্র বাকী থাকে ইহুদি ও খৃষ্টানরা – যারা অন্তত আল্লাহরই পাঠানো তবে অনিখুঁত ও ভ্রান্ত ধর্মের অনুসারী। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের ডাক দিয়েছেন আল্লাহ ও তাঁর নবী, এবং তারা সে ডাকে সাড়া না দিলে তাদেরকে ইসলামী রাজ্যে বাঁচতে দেওয়া হোক, তবে বৈষম্যমূলক ও উচ্চ কর প্রদানের বিনিময়ে। এবং তাদের উপর প্রধানত দুই ধরনের কর আরোপ করা হয়ঃ ১) জিজিয়া বা বশ্যতা কর এবং ২) খারাজ বা ভূমি কর।

কোরানে নির্দেশিত ইসলামী অর্থনীতির রূপরেখা মোটামুটি এটাই। এবং যতদিন ইসলামী খিলাফতের কর্তৃত্ব আরবদের হাতে ছিল, ততদিন বিশেষত আরব-মুসলিমরা এভাবেই জীবিকা বির্বাহ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×