টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ কথাটা বাঙ্গালীর জীবনে কেমন যেন একট বাঁধা কথার মত হয়ে গেছে। এটার মধ্যে লেখক-কবিরা দুর্দান্ত রোমান্টিকতা খুঁজে পান। খুব সম্ভবত বাংলা ভাষার কিংবদন্তি লেখক হুমায়ুন আহমেদও তার কিছু লেখায় এই রোমান্টিকতার ছোঁয়া ধরিয়েছেন।
কিন্তু বাস্তব সব সময় গল্প-কবিতা থেকে আলাদা! আমার কাছে রোমান্টিকতা তখনই সফলতা লাভ করে, যখন দুইজনের মধ্যে কোন ভাবের আদান প্রদাণ 'সঠিক ভাবে' হয়। কিন্তু টিনের চালে বৃষ্টি কি তা হতে দেয়?
রোমান্টিকতায় ঢোকার আগে বাস্তবে ঢুকি। বেশীদিন আগের কথা না; মনে হয় বছর দু'এক হবে। টয়লেটে বেগ দিয়েছে; টয়লেটে ঢুকেছি। এদিকে ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ট্যাপ ছেড়ে দেখি পানি নাই! আমাদের বাড়ির ঘর ও টয়লেট এক দেয়ালের এপাশ ওপাশ হওয়াতে একটু জোরে টয়লেট থেকে কাউকে ডাক দিলেই ম্যাশিন ছেড়ে দেয়। কিন্তু বৃষ্টির সুবাদে আমি চিৎকার করে গলা বসিয়ে ফেললেও ঘরে থাকা আমার মা বা আমার বউয়ের কেউই সে শব্দ শুনতে পায় নাই। ২০-২৫ মিনিট চলে যাবার পর আম্মা যখন নিজে একটা কাজে ট্যাপ চালু করেছেন; তখন বুঝতে পেরেছেন যে পানি নাই। আর এই ২০-২৫ মিনিট আমি ব্যাটা বসে বসে 'টিনের চালে বৃষ্টির রোমান্টিকতা' এর গুষ্টি উদ্ধার করছি।
মাত্রই কয়েকদিন আগে আমার স্ত্রী পড়েছে আরও বেকায়দায়। টয়লেটে যাবার পথে পা পিছলে পড়ে গিয়ে প্রচন্ড ব্যাথায় কাৎরিয়েও লাভ হয় নি; 'টিনের চালের রোমান্টিকতা' তখন তার গলার স্বরকেও কারও কাছে পৌছাতে দেয় নি
রোমান্টিকতায় ঢুকি! টিনের চালে বৃষ্টির একটা সুবিধা আছে; দিনের বেলাতেও ঘরের মধ্যে বৃষ্টির সময় স্ত্রীর সাথে রোমান্টিকতায় মাতলে বাইরেও কেউ ঘুনাক্ষরেও জানতে পারবে না যে কি চলছে ভিতরে। তবে শব্দটা যদি একটু বেশীই হয়, তাহলেই কেল্লা ফতে; দুইজনের মধ্যে নুন্যতম কোন কমিউনিকেশন সম্ভব হয় না; পাশে থাকা মানুষটাকে চিৎকার করে বলতে হয় প্রত্যেকটা কথা।
এমনই কোন এক দুপুরে রোমান্টিকতায় ডুবে যখন হাবুডুবু অবস্থা; হঠাৎ ঘরের পাশের নারকেল গাছ থেকে যদি একটা নারকেল পড়ে; মনে হবে বুশ যেন বোমা ফেলেছে! এক বন্ধু এমনটাই বলেছিলো; তারা নাকি ভয়ে খাটের দুই কোনায় দুইজন বেশ কিছু সময় চুপচাপ পড়ে ছিলো শুধুমাত্র কি হয়েছে বোঝার জন্য।
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দকে আমি কখনোই রোমান্টিকতার পর্যায়ে ফেলতে পারি নি। তবে আমি কয়েকটা জিনিষ আপনাকে ট্রাই করতে বলতে পারি; যদি করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত বুঝবেন বৃষ্টির শব্দের রোমান্টিকতা।
১। টিউব নিয়ে হোক, আর কলা গাছের তৈরী ভেলায় করে হোক কিংবা কোন নৌকায় হোক; ঝুম বৃষ্টিতে পানির উপর ভাসতে ভাসতে বৃষ্টির শব্দ শুনে দেখুন।
২। যদি সম্ভব হয়, ঝুম বৃষ্টিতে পানির নিচে ডুব দিয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনুন।
৩। দক্ষিনাঞ্চলে প্রচুর মাছের ঘের আছে; সেই সব ঘেরের কোন একটিতে ছনের তৈরী ঘরের ভিতরে শুয়ে বৃষ্টির রাত কিংবা দুপুর পার করুন।
দক্ষিনাঞ্চলের একটা জায়গায় আমার ঘোরা নিয়ে ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্ব পড়তে পারেন এখানে ক্লিক করে
ছবি ক্রেডিটঃ অয়ন চৌধূরী