গত কিছুদিন থেকে আমি পরিবারের সাথে থাকছি না। তারা দেশে বেড়াতে গেছে। আর আমি একলা পুরা বাসা নিজের রাজত্য প্রতিষ্ঠা করে বসে আছি।
রাজত্য প্রতিষ্ঠার মূল ধাপ শুরু হয়েছে ঘরে কম্পিউটার ঢুকানো থেকে। আর শেষ হয়েছে অন্য ঘর গুলির দরজা বন্ধ করা দিয়ে। থাকছি এখন এক রুমেই!
বাইরে খাওয়াদাওয়া প্রচন্ড খরচের। ২০১৯-২০২০ সালে মাত্র ১০-১২ মাসেই আমি যে পরিমান খাওয়া-দাওয়া রেষ্টুরেন্টে করেছি, তা হিসাব করতে আমার নিজেরই টাকার প্রতি মায়া চলে আসে। করোনার সময় যখন রেষ্টুরেন্ট গুলি বন্ধ হয়ে গেলো সেটা আমার জন্য ভালোই হলো। রান্নার অভ্যাসে আবার ফিরতে পারলাম।
রান্নার অভ্যাসে আবার ফিরতে পারলাম বলছি, কারণ রান্না করতে আমার ভালোই লাগে; ভালো লাগে না থালা-বাটি ধোয়া। এ এক বিরক্তিকর কাজ।
রান্না করতে আমার ভালো লাগে বললে কম হবে; আমার রান্নার ভক্ত আছে বহু মানুষ। আগে যখন মেসে থাকতাম, তখন প্রায়ই রান্না করতাম। সৌদী আরবে আসবার পর একাধিক সময়ে রান্না করে কলিগদের খাইয়েছি, বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশী খাবার নতুন ভাবে তুলে ধরেছি।
সমস্যা বেঁধে গেছে, আমার রান্নার বিষয়ে যেই দুইজন মানুষ সবচাইতে বেশী শুনেছে, তারাই আমার হাতের রান্না খায়নি! আমার মা আর আমার বউ।
যেহেতু গত কিছুদিন ধরে আবার একলা থাকছি; তাই আবার রান্না করা লাগছে। আমার রান্নার রেসিপি সহজ। একটা তরকারী একবার রান্না করতে দেখলে অন্য প্রায় সব তরকারী রান্না করতে পারবেন।
গোস দিয়েই ব্যাখ্যা করিঃ
১। গোস কাটুন
২। মসলা মাখান
৩। হালকা কসিয়ে নিন
৪। পানি দিয়ে চড়িয়ে দিন
৫। মাঝে মধ্যে চেক করুন
৬। হয়ে গেলে নামিয়ে খেয়ে ফেলুন।
এই মসলা মাখানোতেই যত কারসাজি। আমি সব কিছুতেই তিনটা পেয়াজ, একটা রসুন, একটু হলুদ, গরম মসলা, জিরা গুড়া, ধনে গুড়া, লবন আর তেল দেই। লবঙ্গ, এলাচ, গোল মরিচ ইত্যাদি ইত্যাদি আমি দেই না। ঝামেলা লাগে। তেজপাতাও দেই না।
এই মসলা কিসে কিসে ব্যবহার করি? খিচুড়ি, গরুর গোস, মুরগির গোস, খাসির গোস, উঠের গোস, পুই শাঁক, পালং শাক, চিংড়ি, সব ধরণের মাছ ইত্যাদি ইত্যাদি। সব একই। সব কিছু রান্না করি একই পদ্ধতিতে।
সমস্যা বেধে যায় থালাবাটি নিয়ে। টানা কয়েকদিন রান্না করবার পর যখন সব থালাবাটি নোংরা হয়ে যায়, তখন দু-একদিন বা কখনও কখনও ৩/৪দিন আর রান্না করা হয় না। তখনই বউয়ের ঘন ঘন জিজ্ঞাসা করা লাগে, "বাবু খাইছো?"
আমার মেয়েটা আমার বিষয়ে এক্সট্রা কেয়ারফুল। সেদিন একটা কারণে রক্ত টেষ্ট করা লেগেছে, মেয়েকে মোবাইলে বললাম। দুই বছরের বাচ্চা কোথা থেকে লাঠি নিয়ে হাজির, যে রক্ত নিয়েছে তাকে পিটিয়ে 'তক্তা' বানাবে!
আমার বউ মূলত খোঁজ খবর নেয় থালাবাটির; যত সময় থালাবাটি আছে, তত সময় সে 'বাবু খাইছো' বলে না! কিন্তু আমার মেয়ে প্রতিদিনই একবার কি দুইবার 'বাবা খাইছো?" প্রশ্ন ছুড়ে দিবে।
কি খাইলাম, কখন খাইলাম, ভালো লাগলো কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলেটাও আমাকে প্রচন্ড ভালো বাসে। প্রতিদিন কি কি করেছে, সব বলবে; না বলা পযর্ন্ত তার ঘুম ঠিক মত হয় না।
এই যে বললাম ঘুম ঠিক মত হয় না, এটা আক্ষরিক অর্থেই সত্য। যদি কোনদিন আমার সাথে কথা না বলেই ঘুমিয়ে যায়, বউয়ের রাত করে আমাকে ফোন দেওয়া লাগে। কারণ ছেলে আর্ধেক ঘুমিয়ে উঠে বসে থাকে, বলে আমাকে ফোন দিতে। কথা বলে তারপর আবার ঘুমায়।
বাবু খাইছো কথাটাকে নিয়ে নানান ট্রোল আছে, এমনকি গানও আছে; আমি গানটা কখনও প্লে করি নি। যেহেতু দেশে থাকি না; তাই কখনও শোনাও লাগেনি। দেশে থাকলে পুজার সময় মাইকে যখন বাজানো হয়, কিংবা রাস্তায় দোকানে যখন বাজানো হয়, তখন হয়ত শোনা লাগতো।
আনডেভলপড ব্রেইনের এক জাতী আমরা গড়ে তুলছি; তারা সব কিছু নিয়ে মজা করে, মজা করতে করতে কচলাতে কচলাতে সব নষ্ট করে ফেলে। সেই জাতী থেকে দূরে থেকে মাঝে মধ্যে স্বস্তি লাগে।
অস্বস্তি লাগে যখন নিজের মেয়ের আদর করা 'বাবা খাইছো' শুনে কিছু বান্দর প্রকৃতির লোকজনের নাচানাচির দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে!
ছবি নিয়েছি এখান থেকে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৫২