সালটা ২০০৩ (অথবা ২০০২)। আম্রিকা প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লোক নেয় ডিভি (ডাইভারসিটি ভিসা) নামে একটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে। ২০০৩ বা ২০০২ সালের আগে পর্যন্ত এ্যাপ্লিকেশনের উপায় ছিলো টাইপ করে কিছু তথ্য পাঠাতে হতো। কিন্তু ২০০৩ বা ২০০২ এ এসে সেটা হয়ে গেলো অনলাইন।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই, ঐ সময়ে বাংলার ঘরে ঘরে কম্পিউটার ছিলো না। টুকটাক যাদের বাড়িতে কম্পিউটার ছিলো, তাদের সবার ইন্টারনেট কানেকশন ছিলো না। আর সেখানে ঘরে স্ক্যানার বা ডিজিটাল ক্যামেরারও তেমন চল ছিলো না।
তো আমরা এটাকে একটা ব্যবসায় পরিণত করলাম (আমাদের মত হাজার হাজার মানুষ করেছিলো)। মাত্র ৫০টাকার বিনিময়ে অনলাইনে এপ্লিকেশন করে দিতাম। এর মধ্যে ছবি তোলা ইনক্লুডেডে।
তখন প্রথমবারের মত জানলাম, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের জন্মতারিখ জানুয়ারীর ১ তারিখ। আর দ্বিতীয় স্থানে আছে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ!
অবশ্য ফেসবুকের কল্যানে এখন প্রায় সবাই এটা জানেন যে জানুয়ারীর ১ তারিখ একটা জাতীয় বার্থডে!
এ ছাড়া আরও কিছু জন্ম তারিখ ছিলো। যেমন, ০৮/০৯/১৯৮৯, ০৭/০৫/১৯৭৫, ০৯/০১/১৯৯১............. অর্থাৎ জন্ম সালের শেষ দুইটা ডিজিটের প্রথমটা জন্ম তারিখ, দ্বিতীয়টা জন্ম মাস। সাধারণত এনারা তাদের জন্ম সাল জানেন, কিন্তু জন্ম তারিখটা জানা নাই। তাই এভাবে সব খানে রেজিষ্ট্রেশন করেছেন; যাতে মনে রাখতে সুবিধা হয়।
আগে আমাদের দেশে জন্ম তারিখ ও সাল (মূলত সাল) নির্ধারণ করতেন শিক্ষকেরা! এসএসসি এর রেজিষ্ট্রেশনের সময় তারা তাদের মন মত জন্ম তারিখ ও সাল বসিয়ে দিতেন। মন মত বললে ভুল হবে; মূলত তারা মিনিমাম যে বয়স না হলে এসএসসি দেওয়া যায় না, সেই তারিখটা বা সালটা বসাতেন।
ধরনা করা হয়, এতে করে বালক চাইলেই ২বার বেশী বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবে বা সরকারী চাকরীর জন্য ২বছর বেশী সময় পাওয়া যাবে।
আমাকে আমার জন্ম তারিখ ও সাল ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট ফাইট করতে হয়েছে। স্কুলের থেকে আমার জন্ম তারিখ প্রায় ১.৫ বছর কম লেখা হয়েছিলো। সেটা ঠিক করাতে করাতে নামের বানানে প্যাচ লাগায় ফেলছে খেয়াল করতে পারি নি!
আমার এক বন্ধু ইউকেতে একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতো। মূলত ওখানেই অনার্স শেষ করে চাকরীতে জয়েন করেছে। কয়েক বছর কাজ করবার পর চাকরীর সাথে সাথে লেখাপড়া করছে। এই পরিস্থিতিতে একদিন ও অফিসে ঢুকে দেখে ইদিক-বিদিক কান্ড-কারখানা।
চারিদিকে বেলুন আর এটা সেটা দিয়ে সাজানো। কিন্তু অফিসে একটা মানুষ নাই। সে ধীর পায়ে তার চেয়ারে গিয়ে বসতেই কোথা থেকে যেন গোটা বিশেক মানুষ হামলে পড়লো, আর "সারপ্রাইজ, হ্যাপি বার্থডে" বলে চিৎকার করে উঠলো।
আমার বন্ধু পুরাই সারপ্রাইজড। তার কয়েকটা কারণ আছেঃ
১. সে এমন কিছু আশা করে নাই
২. অফিসে কেউ তাকে এভাবে উইশ করবে সেটাও সে কখনও ভাবে নাই
৩. ঐটা যে তার বার্থডে ছিলো, এটাও তার মনে নাই। কারণ, সার্টিফিকেটে লেখা
বেচারা সব কিছু শেষে খুব কাচুমাচু করে বললো যে এটা আসলে তার আসল জন্ম তারিখ না। সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
পরে সে যখন চাকরী হারালো, তার ধারণা এর মধ্যে এই ভুয়া জন্ম তারিখ একটা কারণ ছিলো।
সৌদী আরবে জনগনের জন্ম তারিখ নিয়ে আগে একটা ছোট কনফিউশন থাকতো। তারা মূলত সব কিছুতেই আরবী তারিখ ফলো করে। ইংরেজী তারিখে এখন কিছুটা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করলেও এখনও তাদের প্রায় সব কার্যক্রম চলে আরবী তারিখেই।
তো তাদের আরবী জন্ম তারিখ যদি ডেট কনভার্টার দিয়ে কনভার্ট করা হয়, প্রায়সই এক দুইদিন আগে পরে দেখায়। তারা ওটাই মুখস্ত করে নেয়।
তবে বর্তমানে ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় হসপিটাল থেকেই সরকারী জন্ম নিবন্ধনটা হয়ে যায়। ফলে এখন আর কনফিউশন হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



