
নভেম্বরে যখন আম্মা বলিলেন যে আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিবেন, তখন আবেগে উদ্বেলিত হইয়া গেলাম। ভাবিলাম নতুন বই হাতে পাইবো। আম্মা শুধাইলেন, এতদিন যেগুলি পড়িতেছি (ক্লাস ওয়ানের বই) ওগুলিই পড়িতে হইবে।
আমি ছুডো বেলায় খুব মাত্রায় কানকুরে ছিলাম। যাহারা জানেন না কানকুরে কি, তাহাদের বলি, দু-একটা বাচ্চাকাচ্চাতো দেখিয়াছেনই, যাহারা কান্না শুরু করিলে থামিতে চায় না। ওগুলিকেই আমগোর এলাকায় কানকুরে বলে।
যাই হউক, নভেম্বরে কান্না শুরু করিলাম, ডিসেম্বরে আম্মা কানে ধরিয়া স্কুলে হেড মাষ্টারের কাছে লইয়া গেলেন। আমাকে বলিলেন, একবারে পরীক্ষা দেও, যদি পাশ করো, তাহলে ক্লাস টুতে উঠিবা, না হইলে ক্লাস ওয়ানেই আবার। বড় হইয়া জানিয়াছি আব্বা-আম্মা আর হেড মাষ্টার মিলিয়া আমার বিরুদ্ধে এক গোলযোগ পাকাইয়াছিলেন। তাহাদের ইচ্ছা ছিলো যে ভাবে হউক, আমাকে পরীক্ষায় ফেল করাইয়া আবার ক্লাস ওয়ানে রাখিতে হইবে।
যাই হউক, এত ভালো পরীক্ষা দিয়াছিলাম যে ক্লাস টিচার আমারে ক্লাস টুতে উঠাইয়া দিলেন। জানুয়ারীর চরম শীতের মধ্যে যখন সকাল ৭টায় সূর্য উঠিবার সাথে সাথে যখন স্কুলে পৌছাইতে হইতো, মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার প্রতি চরম বিরক্তি চলিয়া আসিল। যাহা ভার্সিটি পর্যন্ত বলবৎ ছিলো।
প্রতিদিন ভাবিতাম, যদি স্কুল বন্ধ হইয়া যাইতো, কতই না ভালো হইতো। পরীক্ষার আগের রাত্রে মনে হইতো ভুমিকম্প কিংবা বন্যা হইয়া স্কুল শ্যাষ হইয়া গেলেই ভালো! আফসোস, আমাদের এরিয়াতে না হয় ভুমিকম্প, না হয় বন্যা। পাশের দেশের দাদারা যখন পানি ছাড়িয়া দেন, তখন আমরা শুধু পত্রিকা আর টিভির খবরেই দেখি যে অন্য এলাকা ভাসিয়া যাইতেছে। আর ঢাকার মানুষ যখন ভুমিকম্পের পরপর রাস্তায় খাড়াইয়া থাকেন, আমরা তখনও নাক ডাকিয়া ঘুমাই!
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় এমনকি যুগও যায়, সেই স্কুল আর বন্ধ হয় না। অবশেষে বন্ধ হইলো যখন করোনা শুরু হইলো। বিরক্তির এক শেষ! হইতেই যখন হইবে, আগে কেন হইলি না?
তো, শ্যালককে বলিলাম, বাচাধন, যদি এমন হয় যে এইচএসসি পরীক্ষা না দেওন লাগে, আর অটো পাশ পাইয়া যাও, তাহা হইলে তুমারে আমি একখান আইফোন দিবো। শ্যালক বলিলো, দুলাভাই, টাকা জমান।
আমি টাকা জমাই নাই। ভাবিয়াছিলাম এইতো কাল বা পরশু হয়ত কলেজ খুলিয়াই যাইবে! কিন্তু কিসের কি? শ্যালক আমার অটো পাশ করিয়া কিছুদিন আগে ভার্সিটিতে ভর্তি হইয়াছে।
স্ত্রীকে বলিলাম, আমার বেতন হইতে কিছু টাকা কর্তন করিয়া তাহাকে আইফোন দিয়া দাও। তিনি বলিলেন, ওর জন্য অপ্পোই যথেষ্ট; বেশি হইলে শাওমি!
স্ত্রীর লাল চোখ এড়াইয়া শ্যালককে একখানি আইফোন দিলাম। গরিব দুলাভাই লেটেষ্ট মডেলেরটা দিতে পারে নাই, লেটেষ্টের আর্ধেকটা দিছে। শ্যালক তাতেই খুশি। আর দুলাভাই ছলছল চোখে তাকাইয়া রহিলো। ছলছল চোখ এই জন্য নয় যে কিছু টাকা খসিয়া গেলো, বরং এই জন্য যে "সেই তো স্কুল বন্ধ হলো, আর কটাদিন আগে বন্ধ হলে কি হতো"?
Photo by AltumCode on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



