কল্যানপুরে এক বাদাম ওয়ালাকে চিনতাম। নামটা জানি না। তার কাছ থেকে বাদাম কিনতে কেন যেন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। তার কাছ থেকে বাদাম কিনে কখনও ওজনে কম কিংবা প্রচুর পরিমানে নষ্ট বাদাম পাইনি।

অপর দিকে সার্ক ফোয়ারের পাশে ইসলামী ব্যাংকের বুথের সামনে এক বাদাম ওয়ালা ছিলো, এর কাছ থেকে বাদাম কিনতাম না পারতপক্ষে। কারণ এর বাদামে অন্তত ৩০% নষ্ট বাদাম পেতাম।
দুজন বাদাম ওয়ালার সাথে কথা বলেছি, তাদের সাথে তাদের সমস্যা গুলির কথা জানতে চেয়েছি। অবাক হয়েছি যখন জেনেছি যে দুইজনের জীবনের সব থেকে বড় সমস্যা হুবহু একই!
সমস্যাটা হচ্ছে, মানুষ হাঁটতে হাঁটতে না বলেই এক/দুইটা বা মাঝে মধ্যে এক মুঠ বাদাম নিয়ে চলে যায়। তাদের বাঁধা দিতে গেলে পড়তে হয় বিপত্তিতে! এমনকি মারও খেতে হয়েছে তাদের। দুই পয়সার বাদাম নিলে কি এমন ক্ষতি এটাই যুক্তি!
চন্দ্রীমা উদ্যানের পাশে মাঝে মধ্যেই বসে থাকা হতো। আমাকে ফোনে না পাওয়া গেলে সাধারণত এখানে এসে খুঁজলেই পাওয়া যেতো। এই জায়গাটা বেশ কিছু কারণে ভালো লাগতো। এর মধ্যে একটা ছিলো বয়স্ক মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া যেতো। আর পাওয়া যেতো বেশ ভালো ভালো উপদেশ ও অভিজ্ঞতার গল্প।
এখানে প্রায়ই দেখতাম ছোট ছোট কিছু বাচ্চা বাদাম বিক্রি করতো। সাধারণত এদেরকে পুলিশে কিছু বলতো না। কিন্তু ভিআইপি কেউ ঐ রাস্তা দিয়ে গেলেই বিপত্তি ঘটতো। পুলিশে এদের সতর্ক করা সত্বেও এরা সাধারণত লেক রোড থেকে সরতো না; এরপর পুলিশ ক্ষেপে গিয়ে এদের কাছ থেকে বাদামের গামলা কেড়ে নিয়ে বাদাম গুলি লেকে ফেলে দিতো!
প্রথম প্রথম পুলিশকে বেশ নির্দয় মনে হতো। একটু সময় লেগেছে বুঝতে যে পুলিশ অতটা নির্দয় নয়। অতটা নির্দয় হলে ঐ গামলা ফেরৎ দিতো না; গামলাও পানিতে ফেলতো। বরং এরা হিসাব করে যে ভিআইপি আসতে বহু দেরী, আর একটু সময় রাস্তায় থাকতে পারলে হয়ত আর একটু বিক্রি।
কল্যানপুরে রাস্তার পাশে প্রচুর টং দোকান ছিলো। যখনই কোন দেশের বড় কোন ব্যক্তি আসতো, তখনই ওগুলি সরিয়ে ফেলা হতো! ঐ বড় ব্যক্তি সাভার স্মৃতি সৌধে যাবেন, তাকে এই টং দোকান দেখানো যাবে না!
যাই হোক, মানুষ এভাবে অন্যেরটা ফ্রিতে কেন খায় আমার এখনও বুঝে আসে না। বাদাম ওয়ালা, ঝালমুড়ি ওয়ালা, বরই ওয়ালা ইত্যাদি ইত্যাদি মানুষ থেকে ইচ্ছা হলেই খেয়ে নেয়।
বিশ্ব বিদ্যালয়ে যখন পড়ি, আমাদের ক্যাম্পসের সামনে এক ঝাল মুড়ি ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করেছিরাম একটু মুড়ি নিয়ে খাবো কি না। আমি তখন মূলত ঝালমুড়ি অর্ডার করেছি। সে আমার দিকে তাকায় বললো, আপনি যতদিন এখানে আছেন, আমার কাছে বলা লাগবে না; আপনার ইচ্ছা হলে নিয়ে খাবেন।
আমি হেসে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এমন কেন? সে বললো এই ক্যাম্পাসে আপনিই একমাত্র বোকা যে পারমিশন নিয়ে মুড়ি খাইলো। বাকি সবাই হাটতে হাটতে ফচ করে হাত ঢুকায় এক মুঠ নিয়ে হাটা দেয়। অনেকে আবার ৫টাকার ঝালমুড়ি অর্ডার দিয়ে ঠোঙ্গায় যতটুকু আছে, তার থেকে বেশি সাবাড় করে ফেলে না বলেই।
এই দিক হিসাব করলে কাঁচা মরিচ কিংবা শুকনা মরিচের দোকানদার হয়ত ভালো আছেন। আমার বিশ্বাস কেউ হাঁটতে হাঁটতে ফচ করে হাত ঢুকায় এক মুঠ কাঁচা মরিচ নিয়ে চাবানো শুরু করে দেয় না।
---------------
আমাদের বাস্তবিক জীবনেও এমন লোক আছে। অনাকাঙ্খিত ভাবে তারা এভাবেই আমাদের বিষয় গুলিতে হস্তক্ষেপ করছে। আমরাও সোশ্যাল প্রেসারে পড়ে মেনে নেই। কিন্তু কখনও বাদাম ওয়ালা থেকে মরিচ ওয়ালা হতে পারি না। কারণ হলেই আমাদের বেয়াদব বলা হবে।
বাদামের ছবি নেওয়া হয়েছে এখান থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



