somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যা ফাইভ স্টার রাইড!

০৩ রা জুন, ২০২২ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার কাজের প্রয়োজনে তাবুক গেলাম। এয়ারপোর্টে বিমান দাড়াতেই উবারে অর্ডার করলাম। রাত প্রায় ১১টা ৩০। এই সময় ছোট শহর গুলিতে উবার পাওয়া একটু কষ্টকর হয়ে যায়। তার উপর বিমান নামার পর টানাটানি থাকে।



উবারে ৩/৪জন ড্রাইভার কানেক্ট করেও ক্যান্সেল করে দিলো, খুব সম্ভবত কার্ডে পেমেন্ট করছি দেখে। শেষে একজন কানেক্ট করলো। কানেক্টেড হবার সাথে সাথে ম্যাসেজ। ইংরেজী ও আরবীতে। জানালো আসছে, বাইরে যেহেতু প্রচন্ড শীত তাই আমাকে এয়াপোর্টের ভিতরেই থাকতে অনুরোধ করলো। বললো পৌছানোর ২/৩ মিনিট আগেই সে আমাকে জানাবে।

কৌতুহল সৃষ্টি হলো, লোকের প্রোফাইল একটু ঘেটে দেখলাম। ছবি দেখে মনে হলো ৫০ এর বেশী বয়স; যদিও এতটুকু ছবি দেখে কোন কিছুই ধারণা করার মানে হয় না। ভাষা জ্ঞান আরবি, ইংরেজী, স্প‌্যানিশ ও হিন্দি! আগে একবার এক জন পেয়েছিলাম যে জাপানিজ ভাষা টুকটাক জানে। আরও দেখলাম তার পারফেক্ট ৫ স্টার রেটিং! ডিটেইলসে যেতেই দেখালো ৪.৯৯। উবারের সাথে আছেন প্রায় ২.৫ বছর। দিয়েছেন প্রায় ৫,০০০ রাইড। আগে আমি ৪.৯০ পেয়েছি, মাত্র অল্প কয়েকটা রাইড দেওয়া লোকের। কিন্তু এত দিন ধরে কাজ করছে, এত রাইড দিয়ে মাত্র ০.০১ কম, অভাবনীয়।

প্রায় ১১মিনিট পর ফোন বাজলো। আমি বাইরে এসে দাড়ালাম; সাথে ছোট্ট একটা ব্যাগ, তাই লাগেজ রাখার ঝামেলা ছাড়াই ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলাম। চরম মাত্রায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন গাড়ি, আর সুন্দর একটা ঘ্রাণ, বাখুর এর ঘ্রাণ।

কি খবর, কেমন আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে বলতে এগিয়ে চললাম হোটেলের দিকে। বিভিন্ন বিষয়ে কথা হলো। শোনা হলো তার হিন্দি কথাও। বেশ ভালোই বলেন।

কথায় কথায় বোঝা গেলো তিনি মিশুক টাইপের এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে মেশা ধরণের মানুষ। আমার চাকরী, কাজ ইত্যাদি সম্পর্কেও কথা হলো। তার গাড়িতে গাহওয়া ছিলো (আরাবিক কফি), অফার করলেন। এই জিনিষ প্রথম প্রথম খেতে কষ্ট হলেও এখন বরং মুখিয়ে থাকি। তাই আর ন করতে পারলাম না।

প্রায় ১৮মিনিট পর গন্তব্যে পৌছুলাম। গাড়ি থামতেই আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম। তিনিও আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলেন। উবার নোটিফিকেশন দিলো যে রাইডারকে রেটিং দিতে। তার কথাবার্তা, বন্ধুসূলভ আচরণ সব কিছু মিলিয়ে তাকে ৫স্টার দিলে আসলে কম দেওয়া হয়ে যায়। তাই কিছু টিপস দিলাম, এবং তার সম্পর্কে ভালো রিভিউ দিলাম।

ওটা সাবমিট করতেই উবার জিজ্ঞাসা করলো যে আমি উবার এনজয় করছি কি না; এনজয় করলে রেটিং দিতে পারি। ড্রাইভারের ভদ্রতা হোক, আর অন্য কোন কারণ হোক, মন ফুরফুরা ছিলো। ভাবলাম রেটিংটা দিয়েই দেই।

ওকে ক্লিক করতেই গুগল প্লেস্টোর চালু হয়ে উবারের পেজ এ গেলো। দেখা গেলো আমি উবারে ১স্টার রেটিং দিয়ে বসে আছি! এমন কেন হলো একটু অবাক হয়ে ভাবতে ভাবতে রিসিপশনে পৌছে গেলাম। তাই তখনের মত ক্ষান্ত দিলাম।

রুমে ঢুকে খাবার অর্ডার করে বসে আছি, তখন আবার মাথায় ঢুকলো, উবারের সার্ভিসতো এত খারাপ না যে ১স্টার দিবো। কেন দিলাম এমন? কখন দিলাম।

একটু ঘাটাতেই বের হলো, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় একবার বেকায়দায় পড়েছিলাম। তখন দিয়েছিলাম। হঠাৎই সেই দিনের ঘটনা মনে পড়ে গেল। মূলত ড্রাইভার ভালো ছিলো না; গাড়ি ভালো ছিলো না; চলতে চলতে ঘটাং ঘটাং শব্দ হচ্ছিলো; তার উপর আমি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কেন উঠেছি সেটা নিয়ে তার অভিযোগ। যদিও আমার ছেলে তখন ঘুমিয়ে! এটা জানানোর পর উবার থেকে কল দিয়েছিলো, তবে বেশ কয়েকদিন পর। এমনকি ঐ রাইডের টাকাও ফেরত দিয়েছিলো ওদের এ্যাপ এর ওয়ালেটে। তবে আমি রেগে গিয়ে ঐ দিন রেটিং দিয়েছিলাম, সমাধান বা একটা দফারফা হবার পরও সরাইনি ওটা!

সেদিন রেটিংটা চেঞ্জ করে দিলাম।

-----------------------------------

অনলাইন, শোস্যাল মিডিয়া এগুলি হবার পর থেকে আমরা বেশ সোচ্চার। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে খারাপ কিছু পেলেই আমরা খারাপ খারাপ মন্তব্য, খারাপ রেটিং ইত্যাদি দিয়ে বসে থাকি। মনে করি কি যেন একটা গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলেছি। অনেক সময় ঘাটাতে গেলে দেখা যায় যে হয়ত প্রতিষ্ঠানের কিছুই করার ছিলো না। হয়ত যতটুকু করার ততটুকু তারা করেছেও। কিন্তু আমরা সেই খারাপ রেটিং দিয়ে ফেলে রেখে দেই।

আমি নিজে প্রথম যে এ্যাপ রিলিজ করলাম, কোন কারণ ছাড়াই একজন এসে দেখি ১স্টার রেটিং দিয়ে চলে গেছে। কোন মন্তব্য নাই, কিছু নাই! খালি একটা ১স্টার রেটিং। বেশ বাজে লেগেছিলো বিষয়টি। এখন আমার ঐ এ্যাপের ডাউনলোড প্রায় ১০,০০০, রেটিং প্রায় ৩০০, সবই ৫ অথবা ৪। একটাই ১স্টার। কোন কারণ জানি না কেন ঐটা। হয়ত ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলার কখনও সময় হবে ব্যাখ্যা করবার।

---------------------------------

আমরা এমন কেন? একবারের ফল দিয়েই কেন পুরা প্রতিষ্ঠানকে জাজ করে ফেলি? সব কিছু তো ভাত নয় যে একটা টিপলে বাকি গুলির অবস্থাও জানা যাবে!

Photo by charlesdeluvio on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২২ দুপুর ২:১১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×