আমি স্বাভাবিক ভাবে খুব বিপদে পড়া ছাড়া কারও কাছ থেকে কিছু ধার করে আনি না। কিছু বলতে চাল-ডাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন টুলস, সাইকেল-মটর সাইকেল ইত্যাদি ইত্যাদি। যদ্দুর পারি নিজেরটা নিজে কিনে ব্যবহার করি।
যার ফলে আমার বাসায় বিশাল ভান্ডার আছে বিভিন্ন কাজ কাম করবার জন্য। এটা আমি আমার বাবা থেকে পেয়েছি।
তবে জীবনে যেহেতু একাই সব কিছুর অধীকারী হওয়া সম্ভব নয়, তাই মাঝে মধ্যে ধার করতেই হয়। আর ধর করবার সময় একটা কথা শোনা লাগে, "নিজের মনে করে ব্যবহার করবেন"।
আমি এই কথাটার সাথে মোটেও একমত নই! কারণ? উদাহরণ দেই। একবার কোন একটা কারণে প্রচন্ড রেগে গিয়ে কিবোর্ড আছড়ে ভাঙ্গলাম। ঘড়ি খেয়াল করি নাই যে তত সময়ে রাত ১টা বাজে। এসাইনমেন্ট/রিপোর্ট ফরম্যাটিং তখন আমার একটা ব্যবসা মত আরকি। অগ্যতা পাশের রুমের একজন থেকে কিবোর্ড ধার করতে হলো। ধার করবার সময় তিনি বলে দিলেন, "নিজের মনে করে ব্যবহার করবেন"! বলে সে নিজেই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কারণ তার কিছু সময় আগেই আমি নিজের কিবোর্ড নিজের মনে করেই ভেঙ্গে ফেলেছি। অন্যের মনে করলে খুব সম্ভবত সেটা করতাম না।
জীবনে বহুবার সাইকেল ধার দিয়েছি মানুষকে, কিন্তু একবারও সাইকেল ধার নেই নাই। যতবার সাইকেল ধার দিয়েছি, ঠিক ততবারই সাইকেল হাতে পেয়েছি খারাপ অবস্থায়। হয় চেন নষ্ট হয়েছে, না হয় টায়ার পাংচার হয়েছে না হয় অন্য কোন সমস্যা হয়েছে! পরে ঢাকায় এসে যখন সাইকেল কিনলাম (নিজের পকেটের সাধ্যেরও বাইরের দামে), তখন 'না' বলা শিখলাম। কিন্তু একজন একবার এমন ভাবে ধরলো, আর সে এত এক্সপার্ট যে না করতে পারলাম না। ঘন্টা খানেক পরে তিনি ফোন দিয়ে ঝাড়ি দিলেন, বললেন, ভাই, সাইকেল দেবার আগে বলে দিবেন না যে প্যাডেল ভাঙ্গা! আমি হতবাক!
আর একবার একজন আমার কাছ থেকে ট্রাইপড ধার নিয়েছিলো। ওটা ঐ সপ্তাহেই আমি কিনেছি। ঐ লোক খাগড়াছড়ি যাবেন, তাই ধার করে নিয়ে গেলেন। পরদিন সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বললেন যে ট্রাইপড নাকি আগে থেকেই ভাঙ্গা ছিলো!
আমি কখনও কারও কাছ থেকে কিছু ধার নিলে খুব যত্ন করে রাখি। নিজের মনে করে ব্যবহার করি না; ফেরৎ দিতে হবে হিসাব করে ব্যবহার করি।
আমি নিজের গাড়িতে বাচ্চা-পোলাপাইন নিয়ে উঠলে মোটেও কেয়ার করি না যে খাবারদাবার তারা কিভাবে খাচ্ছে, আর কোথায় ফেলছে। গাড়ির সিটের উপরে জুতা পরে উঠে লাফাচ্ছে নাকি সস ঢেলে দিচ্ছে! মাসে একবার বাসার কাছের পাকিস্তানি গাড়ি ধোয়ার দোকানে নিয়ে গিয়ে পরিস্কার করিয়ে আনি।
কিন্তু গাড়ি কখনও নষ্ট থাকলে গাড়ি ভাড়া নেই। তখন আমি খুব কেয়ারফুল থাকি। বাচ্চাদের গাড়ির ভিতরে জুতা পরে বসতে দেই না, কারণ তারা সিটের উপরে দাড়াবেই। গাড়ির ভিতরে কোন খাওয়ার সুযোগ দেই না। গাড়ি ফেরৎ দেওয়ার আগে খুব ভালো করে পরিস্কার করে দেই।
---------------------------------------
এগুলি কেন বলছি? নিজের ঢোল নিজে পেটাবো এজন্য নয়। চরম বিরক্তি নিয়ে বলছি!
নতুন বাসায় উঠেছি কিছুদিন আগে। বাসায় ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং এর কাজের জন্য একজন বাংলাদেশী মিস্ত্রি ডেকেছিলাম। বাচাধন কোন মই, হাতুড়-বাটাল, ড্রিল ছাড়াই এসে হাজির। যেহেতু আমার কাছে ওগুলির সবই আছে, তাই তাকে ওগুলি দিয়ে কাজ করতে দিলাম। সে দুইদিন পর এসে হাজির। বলে একটা কাজ পেয়েছে, জরুরী ভিত্তিতে তার মইটা আর ড্রিলটা দরকার। আমি ড্রিল দেই নাই, মই দিয়েছি। দেওয়ার আগে তাকে খুব ভালো করে সব চেক করে নিতে বলেছি, এবং বলেছি কোন রকম কোন স্ক্রাচও যেন না পড়ে।
ভায়া ২ঘন্টা পর হাজির ভাঙ্গা একটা মই নিয়ে! সে জানে না কি করে ভেঙ্গেছে!
Photo by Ahnaf Tahsin Rafi on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩৭