somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা To-Do তৈরী করুন, সেটা ফলো করুন - ডেভলপমেন্ট ১০১ - পর্ব ০২

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

To-Do জিনিষটা আমার কাছে বেশ আগে এক সময় "বাহুল্য" মনে হতো। মনে হতো এটার তেমন কোন দরকার নাই। কিন্তু আমি গত ৫/৬ বছর থেকে To-Do লিষ্ট তৈরী ও সেটা ফলো করা শুরু করেছি।


আমি নোটিফিকেশন সহ্য না করতে পারা মানুষদের একজন। হোক সে নোটিফিকেশন মোবাইলে, কিংবা বাস্তব জীবনে। আমাকে কেউ আমার কাজের কথা স্বরণ করিয়ে দিবে (বিশেষ করে চাকরীর ক্ষেত্রে), এটা আমার পছন্দের না।

To-Do ব্যবহারের আগে আমি প্রায়ই এটা ওটা ভুলে যেতাম। এবং পরে মনে পড়লে তাড়াহুড়া করে করতাম। আর কিছু কিছু বিষয় ছিলো নির্দিষ্ট সময়ের পরে হয়ত করাই যাবে না, সেগুলি সেভাবেই থাকতো। ফলে আমি অনেক জিনিষই মিস করেছি।

স্কুল অথবা কলেজ লাইফে একবার রুটিন তৈরী করেছিলাম, ৪:৩০ থেকে ৫:৩০ - বাংলা, ৫:৩০ থেকে ৬:৩০ ইংরেজী, ৬:৩০ থেকে ৭:৩০ পদার্থ...... দেখা গেলো ঘুম থেকেই উঠেছি ৮:৩০ এ! এরপর এক কথায় রুটিন এবং To-Do লিষ্ট আর তৈরীই করি নি। ব্যবসা, এবং চাকরী জীবনেও তেমন একটা আর ও পথ মাড়াইনি।

আমার আব্বার এই জিনিষ ব্যবহারের গুন আছে। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার মনস্থির করলে তিনি একটা লিষ্ট পকেটে রেখে ঘুরতেন। কি কি নিতে হবে সেটা মনে আসতেই টুক করে লিখে ফেলতেন। রওনা দেওয়ার কিছু আগে লিষ্ট ফটোকপি করে নিতেন। এরপর এক এক করে সব কিছু ব্যাগে ভরতেন, আর টিক দিতেন। গ্রাম থেকে ফিরে আসবার সময় ঐ ফটোকপি করা লিষ্টে টিক দিতেন। দেখা যেতো পুরা ট্যুরে দিয়ে এসেও তার কিছুই হারায় নি বা আনতে মিস হয়নি।

২০১৭ তে সৌদী আরবে এসে নতুন করে শুরু করলাম To-Do এর ব্যবহার। শুধু To-Do লিষ্ট তৈরীই না, রীতিমত সেটা ফলো করা শুরু করে দিলাম। মাত্র কয়েকদিনেই ফল পাওয়া শুরু করলাম।

এখন আমার তিনটা To-Do লিষ্ট। একটা অফিসের জন্য, একটা পরিবারের জন্য, একটা আমার নিজের জন্য। পরিবারের টুকটাক কাজ, টিউব চেঞ্জ করা, কফির ফিল্টার কেনা, পানি ওয়ার্ডার করা ইত্যাদি সব কাজ থাকে এই লিষ্টে। স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে নিয়েছি লিষ্টটা। সে দরকারী কাজ গুলি লিষ্ট করে। আমি সময় করে সেগুলি করে ফেলি।

প্রথম প্রথম ১০টা To-Do এর ১০টাতে টিক দিতে বহু সময় চলে যেতো। কিছু কিছু দিনের পর দিন থাকতে থাকতে একটা সময় বাদই দিয়ে দিতে হতো। কিন্তু এখন আর তেমন বাকি থাকে না।

গতমাসে ছুটি কাটিয়ে যেদিন অফিসে জয়েন করলাম, একদিনেই To-Do লিষ্টে ১০০+ কাজ ঢুকে গেলো। প্রথমে লিষ্ট তৈরী করলাম, তারপর প্রায়োরিটি সেট করলাম; এরপর নেমে পড়লাম। দেখা গেলো মাত্র ৭দিনের (কর্ম দিবসের) মধ্যেই কাজ প্রায় সব শেষ। বাকি থাকলো অল্প কিছু কাজ, যা শুধুমাত্র আমার একার হাতে না, অন্য কারও ইনপুটও দরকার আছে।

To-Do আপনাকে প্রতিদিনই ঝালাই করতে হবে। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নিন, ৫মিনিটের বেশী সময় দিবেন না। সকালে উঠে কাজ গুলিকে অতি প্রয়োজনীয়, প্রয়োজনীয়, কম গুরুত্বপূর্ণ ইত্যাদি ভাবে সাজিয়ে নিন। এবার একে একে কাজ করা শুরু করে দিন।

সব দিন যে আপনার প্লান মত যাবে, তা কিন্তু নয়। দেখা যাবে অতি প্রয়োজনীয় জিনিষের মধ্যে এমন একটা কাজ আসবে, যেটা আগে করা দরকার। এই কাজের জন্যও আপনাকে আগে থেকেই হিসাব করে সময় রাখতে হবে। আমি প্রতিদিন 'উটকো ঝামেলা' কাজের জন্য ১ঘন্টা আলাদা করে রাখি। যদি কোন 'উটকো ঝামেলা' আসে, তাহলে সেটা দ্রুত সম্ভব শেষ করে অন্য কাজে মনোযোগ দেই; আর যদি না আসে, তাহলে সেই সময়টা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় দেই।

To-Do লিষ্ট তৈরী করবো বলাটা সহজ, তৈরী করাটাও সহজ। কিন্তু ফলো করাটা কঠিন। কিন্তু একবার যদি বিষয়টা প্রাক্টিসের মধ্যে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে দেখবেন লিষ্ট তৈরী করাটা সহজ, ফলো না করাটাই কঠিন! লিষ্ট ফাঁকা হয়ে গেলেই কেমন যেন শান্তি এবং ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।

কিছু মোবাইল এ্যাপ, যা ব্যবহার করতে পারেন:
১. Google Keep - আমি পার্সোনাল ও পরিবারের জন্য এইটাই ব্যবহার করি।
২. Microsoft To Do - যেহেতু অফিসে মাইক্রোসফট এনভায়রনমেন্ট, তাই এটা অফিসের জন্য ব্যবহার করি। তাছাড়া ডেস্কটপ ও মোবাইল এ্যাপ দুটিই থাকাতে সুবিধা হয়।
৩. Todoist, Any.do, Habitica.... এগুলিও বেশ জনপ্রিয়।

তবে, চেষ্টা করুন একটাই এ্যাপ ব্যবহার করতে। সেটাই অনেক!

Photo by Glenn Carstens-Peters on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×