To-Do জিনিষটা আমার কাছে বেশ আগে এক সময় "বাহুল্য" মনে হতো। মনে হতো এটার তেমন কোন দরকার নাই। কিন্তু আমি গত ৫/৬ বছর থেকে To-Do লিষ্ট তৈরী ও সেটা ফলো করা শুরু করেছি।

আমি নোটিফিকেশন সহ্য না করতে পারা মানুষদের একজন। হোক সে নোটিফিকেশন মোবাইলে, কিংবা বাস্তব জীবনে। আমাকে কেউ আমার কাজের কথা স্বরণ করিয়ে দিবে (বিশেষ করে চাকরীর ক্ষেত্রে), এটা আমার পছন্দের না।
To-Do ব্যবহারের আগে আমি প্রায়ই এটা ওটা ভুলে যেতাম। এবং পরে মনে পড়লে তাড়াহুড়া করে করতাম। আর কিছু কিছু বিষয় ছিলো নির্দিষ্ট সময়ের পরে হয়ত করাই যাবে না, সেগুলি সেভাবেই থাকতো। ফলে আমি অনেক জিনিষই মিস করেছি।
স্কুল অথবা কলেজ লাইফে একবার রুটিন তৈরী করেছিলাম, ৪:৩০ থেকে ৫:৩০ - বাংলা, ৫:৩০ থেকে ৬:৩০ ইংরেজী, ৬:৩০ থেকে ৭:৩০ পদার্থ...... দেখা গেলো ঘুম থেকেই উঠেছি ৮:৩০ এ! এরপর এক কথায় রুটিন এবং To-Do লিষ্ট আর তৈরীই করি নি। ব্যবসা, এবং চাকরী জীবনেও তেমন একটা আর ও পথ মাড়াইনি।
আমার আব্বার এই জিনিষ ব্যবহারের গুন আছে। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার মনস্থির করলে তিনি একটা লিষ্ট পকেটে রেখে ঘুরতেন। কি কি নিতে হবে সেটা মনে আসতেই টুক করে লিখে ফেলতেন। রওনা দেওয়ার কিছু আগে লিষ্ট ফটোকপি করে নিতেন। এরপর এক এক করে সব কিছু ব্যাগে ভরতেন, আর টিক দিতেন। গ্রাম থেকে ফিরে আসবার সময় ঐ ফটোকপি করা লিষ্টে টিক দিতেন। দেখা যেতো পুরা ট্যুরে দিয়ে এসেও তার কিছুই হারায় নি বা আনতে মিস হয়নি।
২০১৭ তে সৌদী আরবে এসে নতুন করে শুরু করলাম To-Do এর ব্যবহার। শুধু To-Do লিষ্ট তৈরীই না, রীতিমত সেটা ফলো করা শুরু করে দিলাম। মাত্র কয়েকদিনেই ফল পাওয়া শুরু করলাম।
এখন আমার তিনটা To-Do লিষ্ট। একটা অফিসের জন্য, একটা পরিবারের জন্য, একটা আমার নিজের জন্য। পরিবারের টুকটাক কাজ, টিউব চেঞ্জ করা, কফির ফিল্টার কেনা, পানি ওয়ার্ডার করা ইত্যাদি সব কাজ থাকে এই লিষ্টে। স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে নিয়েছি লিষ্টটা। সে দরকারী কাজ গুলি লিষ্ট করে। আমি সময় করে সেগুলি করে ফেলি।
প্রথম প্রথম ১০টা To-Do এর ১০টাতে টিক দিতে বহু সময় চলে যেতো। কিছু কিছু দিনের পর দিন থাকতে থাকতে একটা সময় বাদই দিয়ে দিতে হতো। কিন্তু এখন আর তেমন বাকি থাকে না।
গতমাসে ছুটি কাটিয়ে যেদিন অফিসে জয়েন করলাম, একদিনেই To-Do লিষ্টে ১০০+ কাজ ঢুকে গেলো। প্রথমে লিষ্ট তৈরী করলাম, তারপর প্রায়োরিটি সেট করলাম; এরপর নেমে পড়লাম। দেখা গেলো মাত্র ৭দিনের (কর্ম দিবসের) মধ্যেই কাজ প্রায় সব শেষ। বাকি থাকলো অল্প কিছু কাজ, যা শুধুমাত্র আমার একার হাতে না, অন্য কারও ইনপুটও দরকার আছে।
To-Do আপনাকে প্রতিদিনই ঝালাই করতে হবে। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নিন, ৫মিনিটের বেশী সময় দিবেন না। সকালে উঠে কাজ গুলিকে অতি প্রয়োজনীয়, প্রয়োজনীয়, কম গুরুত্বপূর্ণ ইত্যাদি ভাবে সাজিয়ে নিন। এবার একে একে কাজ করা শুরু করে দিন।
সব দিন যে আপনার প্লান মত যাবে, তা কিন্তু নয়। দেখা যাবে অতি প্রয়োজনীয় জিনিষের মধ্যে এমন একটা কাজ আসবে, যেটা আগে করা দরকার। এই কাজের জন্যও আপনাকে আগে থেকেই হিসাব করে সময় রাখতে হবে। আমি প্রতিদিন 'উটকো ঝামেলা' কাজের জন্য ১ঘন্টা আলাদা করে রাখি। যদি কোন 'উটকো ঝামেলা' আসে, তাহলে সেটা দ্রুত সম্ভব শেষ করে অন্য কাজে মনোযোগ দেই; আর যদি না আসে, তাহলে সেই সময়টা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় দেই।
To-Do লিষ্ট তৈরী করবো বলাটা সহজ, তৈরী করাটাও সহজ। কিন্তু ফলো করাটা কঠিন। কিন্তু একবার যদি বিষয়টা প্রাক্টিসের মধ্যে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে দেখবেন লিষ্ট তৈরী করাটা সহজ, ফলো না করাটাই কঠিন! লিষ্ট ফাঁকা হয়ে গেলেই কেমন যেন শান্তি এবং ফাঁকা ফাঁকা লাগবে।
কিছু মোবাইল এ্যাপ, যা ব্যবহার করতে পারেন:
১. Google Keep - আমি পার্সোনাল ও পরিবারের জন্য এইটাই ব্যবহার করি।
২. Microsoft To Do - যেহেতু অফিসে মাইক্রোসফট এনভায়রনমেন্ট, তাই এটা অফিসের জন্য ব্যবহার করি। তাছাড়া ডেস্কটপ ও মোবাইল এ্যাপ দুটিই থাকাতে সুবিধা হয়।
৩. Todoist, Any.do, Habitica.... এগুলিও বেশ জনপ্রিয়।
তবে, চেষ্টা করুন একটাই এ্যাপ ব্যবহার করতে। সেটাই অনেক!
Photo by Glenn Carstens-Peters on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



