সৌদী আরবে গত কয়েক বছর ধরে সরকার বেচা-বিক্রি-কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি হচ্ছে। প্রথমত তারা সব জায়গায় কার্ড দিয়ে পন্য ও সেবা কেনা যাবে এটা নিশ্চিত করতে চাইছে। আর ভ্যাট যাতে ঠিক ভাবে কালেকশন হয় সেটা চাইছে।
এখন শুধুমাত্র বাঙ্গালী মার্কেট গুলার দোকান গুলা বাদে এবং গাড়ি রিপেয়ারিং এর দোকান বাদে অন্য প্রায় সব জায়গায় কার্ডেই কেনা কাটা করা যায়। বাঙ্গালী মার্কেটে সৌদী দেখলে কার্ড রিডার এগিয়ে দেয়, অন্য দেশী দেখলে পন্যই বিক্রি করবে না দরকারে, কিন্তু কার্ডে টাকা নিবে না!
ফলাফল স্বরূপ, সৌদী আরব এখন অনেকটাই ক্যাশলেস এবং ডিজিটাল মানির দিকে ঝুকেছে গত কয়েক বছরে। আর খুব শিগ্রহী সরকার এমন ব্যবস্থা করছে (খুব সম্ভবত এবছরের শেষের মধ্যেই) যে কেনাকাটা করলে সাথে সাথে সরকারের দফতরে ভ্যাটের হিসাব চলে যাবে।
কোন দোকান থেকে কেনাকাটায় যদি চালান না দেওয়া হয়, তাহলে ফাইন মাত্র ১০,০০০ রিয়াল।
------------------------------
কয়েকদিন আগে আমার এক বোতল পানি দরকার। যেখানে আছি সেখানে সারি দিয়ে কয়েকটা নামি-দামী রেষ্টুরেন্ট। পানি কিনতে গিয়ে দেখি সবাই বিদেশী ব্রান্ডের পানি বিক্রি করে, ৫রিয়াল ৩৩০ এমএল এর এক বোতলের দাম! যেখানে ৫ রিয়ালে ১০ বোতল পাওয়ার কথা, সেখানে এক বোতল কেনার মানেই হয় না।
কয়েকটা দোকান খুজেছি, সবাই ভদ্র ভাবেই বলেছে যে এখানে শুধু দামী পানিই আছে। শেষ যে দোকানটায় গিয়েছি, ওটায় দুই বাংলাদেশী ও দুই ভারতীয় কাজ করছে। তাদের জিজ্ঞাসা করে যখন বের হয়ে যাবো, তখন পিছন থেকে বাঙ্গালি একজন বলে উঠলো, এহ, ফইন্নি আইছি পানি কিনতে! বলতেই অন্য সবাই হেসে উঠলো! আমি জানি এদের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই, তাই বেরিয়ে এলাম।
গতকাল একটা কাজে ঐ এলাকায় আবার গিয়েছি, দেখি ঐ দোকানের সামনে ট্যাক্স-ভ্যাট ডিপার্টমেন্টের লোক ও পুলিশ।
জানতে পারলাম এ সৌদী কিছু খাবার কিনেছে, ওরা দাম রেখেছে ভ্যাট সহই, কিন্তু কোন রিসিপ্ট দেয় নাই। সৌদীতে এমন করলে অনেক সময়ই সৌদীরা এটাকে রিপোর্ট করে দেয়। আর এই সব কেস সরকার খুব গুরুত্বের সাথে নেয়।
বিষয়টা এমন না যে আপনি রিসিপ্ট চাইলেন, কিন্তু দিলো না তাহলে অপরাধ। বিষয়টা এমন যে আপনাকে ওরা রিসিপ্ট নিজ থেকে দিলো না, সেটাই অপরাধ।
সুপার শপ গুলিতে কেনা কাটা করতে গেলে প্রায়ই আমি রিসিপ্ট না নিয়ে এগিয়ে যাই, দেখা যায় পিছন পিছন কেউ দৌড়ে এসে রিসিপ্ট দিয়ে যায়।
যাই হোক, জানা গেলো ঐ দোকানে ১০,০০০ রিয়াল জরিমানা দেওয়া হয়েছে। মোটামুটি চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায় যে এই টাকাটা ঐ দোকানে ঐ সময়ে যে ক্যাশে ছিলো, তার পকেট থেকেই দোকান মালিক কাটবে। কারণ এই সব অপরাধ রেষ্টুরেন্টের নামে লিষ্ট হয়, এক বছরে একাধিকবার এমন কেস ধরা পড়লে লাখ লাখ রিয়াল জরিমানা গুনতে হয়।
মনের কোন এক কোনায় একটু আনন্দই লেগেছিলো প্রথম ধাক্কায়। সাথে সাথেই আবার খারাপ লেগেছে। বেশী খারাপ লেগেছে প্রথম ধাক্কায় ভালো লাগার জন্য।
Photo by CardMapr.nl on Unsplash