ফ্লাইটে বসেই টের পাচ্ছিলাম যে আবহা পৌঁছে বৃষ্টির মধ্যে পড়তে হবে। এমনিতেই আবহা বেশ ঠান্ডা শহর, তার উপরে বৃষ্টি হলেতো কথাই নাই!
আবহায় ফ্লাইট ল্যান্ড করলে বাসে করে টার্মিনালে আসা লাগে। আর কোন উপায় নাই। বৃষ্টিতে প্রায় আধা ভেজা হয়ে বাসে উঠলো সবাই। বাহিরে বের হয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিলাম, আগামী ৩দিনের জন্য। শহরটা আমার বেশ পরিচিত, তবুও গুগল ম্যাপে লোকেশন লাগিয়ে হোটেলের পথ ধরলাম।
হোটেলে পৌঁছে প্রায় ২০মিনিট প্যাচাপেচি করে বুঝতে পারলাম যে আমার অফিস থেকে বুকিং এজেন্টকে ঠিকই আমার জন্য হোটেল বুক করতে বলা হয়েছে, কিন্তু বুকিং এজেন্ট কোন প্যাচ লাগিয়ে ফেলেছে। ফলে আমার জন্য কোন রুম বরাদ্দ হয় নাই! এই কাজ আজই প্রথম না, আগেও ঘটেছে আমার সাথে।
আমি বুকিং এজেন্টের অফিসে ফোন দিলাম। রাত ১২:৩০ বাজে, ওপাশ থেকে আধো ঘুম আধো জাগা অবস্থায় একটা মেয়ে ফোন ধরলো। এই মেয়েটার গলা আমার পরিচিত; নাম প্রিয়া, বাড়ি মুম্বাই। ও কল ধরেছে দুবাই থেকে, এজেন্ট অফিস দুবাইতে!
কল ধরতেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম সে কেমন আছে, আমাকে চিনতে পারছে কি না। এরপর খুব নরম ভাবে তাকে জানালাম সমস্যার কথা। সে বললো চেক করছে।
আমি হোটেলের নিচে চলে এলাম। হোটেলের বাইরে একটা কফি শপ আছে। এখানে আমার বিকালে ও সন্ধ্যায় বসতে ভালো লাগে। পাহাড়, মেঘ আর পাহাড়ের গা বেঁয়ে নেমে যাওয়া রাস্তা দেখা যায়। অদ্ভুত একটা পরিবেশ। মনের ভিতরে এমন একটা জায়গায় একটা ছোট্ট বাড়ি করবার ইচ্ছা জাগে প্রতিবারই।
ঘন্টা খানেক পর প্রিয়া কল করলো, আমাকে অনুরোধ করলো আমার পকেট থেকে টাকা দিয়ে একটা রুম বুক করে নিতে, আগামীকাল সকালেই তারা সমস্যার সমাধান করে দিবে। আর টাকা আমার একাউন্টে পাঠিয়ে দিবে। আমি জানালাম যে আমাকে খুব ভোরে হোটেল ছাড়তে হবে, আর গভীর রাতে আসবো। সো আমার পক্ষে রুম চেঞ্জ করা সম্ভব হবে না। আবার রাত্রে এসেই যে রুম চেঞ্জ করবো সেটাও আমার জন্য কনভিনিয়েন্ট না। তাই তিনদিনই এক রুমে থাকবো। সে বললো সমস্যা নাই।
আমি তাকে বিষয়টি ইমেইলের মাধ্যমে কনফার্ম করতে বললাম।
ইমেইল আসবার পর আমি হোটেলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে তাদের এখানে আজকে রাত্রে সবচাইতে দামি রুম কোনটি আছে, তারা হিল ভিউ একটা এপার্টমেন্ট আছে, ভাড়া মাত্র ২,৫০০ রিয়াল। আমি বললাম ওটাই দাও।
সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ দুবাই থেকে ফোন, এটা এক্সপেক্ট করছিলাম। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে এক লোক প্রায় চিৎকার করে বললো যে তুমি ২,৫০০ রিয়াল দিয়ে রুম বুক করেছো কেন? আমি তাকে বললাম ব্যস্ত আছি, রাত ১১টার পর কল দিতে। সে তবুও কথা চালিয়ে যেতে চাইলো, আমি ভিষণ জোরে তাকে এক দাবড় দিলাম। গলার ভিতরে মনে হলো চিরে গেছে!
রাত ১১টায় ফোন দিলো প্রিয়া। মনে হলো সে ১১টা বাজার জন্য ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। সে আমার কাছে নরম ভাবেই জানতে চাইলো যে কেন আমি অত ভাড়ার রুম নিয়েছি। আমাদের আগের বুকিং অনুযায়ী রুমের ভাড়া ছিলো ৩০০ রিয়াল। আমি বললাম এই রুম এভেইলএভেল ছিলো। আমি কিন্তু বলিনি যে শুধুমাত্র এই রুম এভেইলএভেল ছিলো, তবুও সে সেটাই বুঝে নিলো।
অনুরোধ করলো রুম চেঞ্জ করতে। কিন্তু আমি তাকে আমাদের এগ্রিমেন্টের কথা স্বরণ করিয়ে দিলাম। মেয়েটা যেন খাবি খেলো, সে আমাকে বললো সেটা সম্ভব হতো যদি আমি এগ্রিমেন্টের মধ্যে থাকতাম। আমি বললাম যে তুমি যে মেইল পাঠিয়েছো সোটায় এসব লেখা ছিলো না!
ঘাড় ত্যাড়ামি করে আমি তিনদিনই ঐ রুমে থেকে গেলাম। প্রথম দিনের ভাড়া ২,৫০০ হলেও পরের দু দিন ২,০০০ করে ছিলো। এদিকে পরদিন দুপুরে আমি বেশ কয়েকটা ফোন কল পেলাম আমাদের অফিস থেকেও। আমি অফিসে জানিয়ে দিলাম যে কাজ ফেলে যদি হোটেলে গিয়ে আমি রুম চেঞ্জ করতে যাই, তাহলে কাজের ক্ষতি হবে, এবং এই ক্ষতির দায় আমি নিবো না। অফিসও চুপ করে গেলো।
---------------
এই ঘটনার পর আমাকে টাকা ফেরৎ পেতে প্রায় সপ্তাহ খানেক অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। তবে এই ঘটনা এখনও অফিসের সবাই পজেটিভ ভাবে নেয়, এবং উদাহরণ হিসাবে নেয়। কারণ এই ধরণের সমস্যা এই বুকিং এজেন্ট হরহামেসাই করতো। কিন্তু আমি এমন চটকনা দেওয়ার পর আমরা এখন হোটেলে পৌছানোর আগেই তারা সব এরেঞ্জমেন্ট করে রাখে।
Photo by Rikaz Basyouni on Unsplash