আধুনিক যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা ইউরোপে তৈরী হয়েছে। যন্ত্র দিয়ে উৎপাদন বেশী হয় তারপর সেইটা বিক্রি করে হাতে লাভ আসে। চার্চের নিয়ন্ত্রণে যারা ছিলেন তারা প্রকৃতি নির্ভর উৎপাদনে বিশ্বাসী ছিলেন। এছাড়া বাইবেলে মুনাফা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, যেমন কোরআনে সুদ খাওয়া নিষিদ্ধ। ঐ সময় ঐ বেনিয়াদের স্বার্থে খ্রীষ্টধর্ম সংস্কার করা হয়। যেখানে মুনাফা করাকে হালাল বলে দেখানো হয়, ইবাদতকে ব্যক্তিগত কাজ বলে দেখানো হয়। অর্থাৎ যন্ত্রদিয়ে আরো বেশী উৎপাদন করা এবং সেগুলি বিক্রি করে আরো বেশী লাভ করার স্বার্থে কিছু মতলববাজ লোকে প্রথমে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্ম তৈরী করেছে, পরে রাষ্ট্রকে চার্চ থেকে পৃথক করেছে। আজকের পশ্চিমা দুনিয়া যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে তার উৎপত্তিই হয়েছিল বেনিয়া স্বার্থে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে মানবতা গণতন্ত্র এগুলির কথা বলে লাভ নেই। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মপ্রচারকারী বেনিয়ারা তারপর সারা দুনিয়ায় উপনিবেশ করে শুধু শোষনই করেনি বরং তাদের সংস্কৃতি,দর্শন, চিন্তাধারাও চাপিয়ে দিয়েছে। এখন এশিয়া,আফ্রিকায় পুরনো সামাজিক অবকাঠামোর যে অবক্ষয় তার জন্য এই বেনিয়ারা পুরোপুরিভাবে দায়ী। তারা এখানে প্রচলিত মাদ্রাসা,টোল,পঞ্চায়েত ভেঙে তারউপর স্কুল,কলেজ, আদালত চাপিয়ে দিয়েছে।
ইসলামের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। ইসলাম পৃথিবীর যে অঞ্চলে বিকশিত হয়েছে সেখানে এসব দ্বিগুণতিনগুণ লাভের কারবার ছিলোই না। সেখানে ব্যবসা বলতে খুবই ডাউন টু আর্থ ধরণের ব্যাপার বোঝাতো। ইসলাম রাজনৈতিকভাবে যখন বিকশিত হয়েছে তখন তাই তাদের অন্যএকটি দেশ দখল করে তার সম্পদ লুঠ করে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই কারণে শুধু শরিয়তের দৃষ্টিতে নয়, ঐতিহাসিকভাবেই প্রোটেস্ট্যান্ট মুসলমান বলে কিছু নেই। এমনকি বুর্জোয়া সমাজবিজ্ঞানে যে সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদের ট্রানজিশন দেখানো হয় তার পুরো বিষয়টাই মুসলিম সমাজের অগোচরে ঘটেছে এবং বাস্তবে এর কোনটাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় ঘটেনি। পশ্চিমারা যাকে এনলাইটেনমেন্ট বলেন মুসলমানদের কাছে তা বস্তুত অপ্রয়োজনীয় ও দুর্বোধ্য।
আজকে পশ্চিমের অনেক তাত্ত্বিক দাবী করে থাকেন যে উপনিবেশগুলিতে তারা যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে এসেছেন তা থেকে সেখানে একধরণের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ তৈরী হয়েছে যারা সেখানে পশ্চিমের মডেলে সমাজ গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু তারা পারছে না সেখানকার, তাঁদের ভাষায় অশিক্ষিত মুসলিম জনগণের জন্যপ্রত্যক্ষ উপনিবেশের অবসান হয়েছে প্রায় ষাট বছর হতে চলল। এখনো কিন্তু কোথাও কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ কার্যত পশ্চিমের ধর্মনিরেপক্ষতাকে গ্রহণ করতে পারেনি। একসময় তুরস্কের কথা বলা হতো কিন্তু আজকের তুরস্ক ভিন্ন কথা বলছে।
শুধু শরিয়তের বিমুর্ত ধারণাতেই না বরং পশ্চিমের তথাকথিত বস্তুবাদী ইতিহাসের বিচারেও ইসলাম বস্তুত একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্রপঞ্চ। রাজনৈতিক ইসলামকে বুঝতে শুধু শরিয়তের কথা বললে তাতে একভাবে পশ্চিমাদেরকে তর্কে জিতিয়ে দেওয়া হয়। তারা মুসলমানদের অজ্ঞ, অশিক্ষিত, গোঁড়া ইত্যাদি বলে, তাঁদের ভাড়া করা মুসলিম নামধারীদের সমর্থন নিয়ে একযোগে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক শোষণ চালিয়ে যান। এই অবস্থার পরিবর্তনে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে মুসলমানদের রাজনৈতিক ঐক্য। রাজনৈতিক ইসলামই পারে আজকের পশ্চিমা বেনিয়াদের সাদ্দাতের বেহেশত কে পরিবর্তন করে একটি প্রকৃত মানবতাবাদী সমাজ তৈরী করতে।
অন্ধ আনুগত্য ফেলে কেউ বিষয়টিকে এভাবে ভেবে দেখেছেন কি?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




