হাত্তা ভ্রমনের ২য় দিন:
সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাড়াতাড়ি। আসলে নিজের বিছানা ছাড়া অন্য কোথাও আমার ভালো ঘুম হয় না।
কিন্তু জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দেখে বেশ ভালো লাগলো। মনে হলো সূর্য উঠার আগে বাইরে গিয়ে বসলে চমতকার একটা সূর্যাদয় দেখা যেতো।
সকালে ১০টা পযন্ত নাস্তা পরিবেশেন করা হয়। আমরা ৮টার দিকে ডানাকে ঘুম থেকে তুলে তৌরি হয়ে নাস্তা খেতে নিচে গেলাম।
https://www.instagram.com/p/CZEKrnTheSQ
এরাবিক নাস্তা। সদ্য বেক করা রুটি, চিজ মানাকিস, আরো অনেক জিনিস। খুবই মজা লেগেছিলো।
খেয়ে দেয়ে রুমে গিয়ে একেবারে গাট্টি গোল করেই বের হলাম, চেক আউট করেই হোটেল হাত্তা হানি সেন্টারের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম।
দুপুরে হোটেলের বাইর।
https://www.instagram.com/p/CX_5coxhZke
হাত্তা হানি গার্ডেন শহর থেকে একটু বাইরে। খানিকটা পথ পাথুরে রাস্তা দিয়ে যেতে হলো। ঐখানে গিয়ে দেখি আরো অনেক গাড়ী বাইরে পার্ক করা।
ভেতরে যাবার পরে সেখানে গাইডেড টুরের দাম জিগাইলাম। ৩ জনের খরচ হবে ১৩০ দিরহাম। আমি বললাম যে শুধুই ডানা যাবে ৩০ দিরহাম। পরে ঐ সুন্দরী বলে আজ ৫০% ডিসকাউন্ট চলতেছে আমি দিতে পারি ৩ জনের খরচ ৬৫ দিরহাম। আমি ক্রেডিটকাড বারাইয়া বললাম ধন্যবাদ।

আমরা তিনজন কাপরের তৌরি এক রকমের প্রোটেক্টেড পোষাক পরে, ভিডিও দেখে মৌচাকে ঢিল মারতে গেলাম। বাচ্চাদের জন্য খুবই চমতকার একটা প্রোগাম এটা। কিভাবে বাক্সে মধু পালন করা হয়, কোন গাছের ফুলে কোন টাইপের মধু হয় এবং পরে ওরা একটা মৌচাক খুলে আমাদের রানী মৌমাছি এবং অন্য মৌমাছি সম্পর্কে অনেক তথ্য আমাদের জানালো। টুরের শেষে আমাদের ৬ প্রকারের মধু টেস্ট করতে দিলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো সিডার ফুলের মধু। যার ১ কেজি ওরা ৫৮৭০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
দামশুনে মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা গানের কথা মনে পইড়া গেলো

আমাদের ছোট্ট একটা ভিডিও।
https://youtu.be/uJDgkk_XBgk এই ভিডিওটা ঐ টুর গাইডের বিস্তারিত বিবরন আছে, এডিড করা হয় নাই অনেক লম্বা। যদি কারুর অনেক সময় থাকে তবে দেখতে পারেন।
https://hattahoney.ae/honeybee-garden/
মৌচাকে ঢিল মারা শেষ করে চলে গেলাম ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হইতে। গতকাল ডানা বায়না ধরেছিলো ঘোড়ায় চড়বে বলে।
ওরা ৫০ দিরহামে আপনাকে ৩০ মিনিট ঘোড়ায় চড়িয়ে পাশের পাহাড়ী রাস্তায় ঘুরিয়ে আনবে। কিন্তু ডানা ছোট বলে একা যেতে পারবেনা। পরে আমরা ৩ জনই ২ ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া হাটিয়া হাত্তা দেখতে বাহির হইলাম।

ঘোড়া ভাড়া দে্য়া হয়।
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়া চলিলো। ( ঘোড়াকে সরি বলা উচিত ছিলো, ওজন যেইভাবে বাড়ছে বেচারার কস্টই হইছে)
যদিও চিন্তা করতেছিলাম ঘোড়ার পিঠে উঠা কি ঠিক হবে কিনা। তবে জীবনে একবারই তো উঠবো তাই ট্রাই করলাম।
শারমিন, ডানার কাছে ঘোড়ার চড়ার অভিঙ্গতা খুবই ভালো লেগেছিলো।
ঐখান থেকে গেলাম হাত্তা হিল পার্কে ছোট পার্ক কিন্তু একটা পাহাড়ের চুড়ায় ওয়াচ টাওয়ার আছে। সেটা পযন্ত আমি আর ডানা উঠলাম, শারমিন মাঝ পথেই খ্যান্ত দিলো। আমরা উপরে উঠলাম। ঐদিন আকাশ ছিলো নীল, সাদা মেঘ, উপরে উঠে দৃশ্য দেখে ক্লান্তি দুর হয়ে গেলো।
https://www.instagram.com/p/CYIpCuQBTtG
হিলটপে উঠে খিদে লেগে গেলো তখন গেলাম হাত্তা হ্যেরিটেজ ভিলেজের সামনে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে। ঐখানের খাবারের রিভিও দেখেছিলাম বেশ ভালো। আমরা যখন গেলাম তখন পুরা রেস্টুরেন্ট ফুল। আমরা টেবিল অনুরোধ করে ফোন নাম্বার দিয়ে হ্যেরিটেজ ভিলেজে ঘুরতে লাগলাম।
https://photos.app.goo.gl/9e7WUwquQ93zpqDQA ছোট একটা ভিডিও হেরিটেজ ভিলেজের।
প্রায় ১৫ মিনিট পরে আমাদের কল আসলো যে টেবিল রেডি। আমরা চিকেন আর রাইসের একটা ডিস অডার করলাম। দেখতে আমাদের দেশি খিচুরির মতন, স্বাদও তেমন আহামরি কিছু না। শুধুই নামের জন্য এতো ভিড় বলে মনে হলো।
খেয়ে দেয়ে আমরা রওয়ানা হলাম হাত্তা এডভেন্চার হাবের উদ্দেশে। ঐখানে অনেক খেলার আয়োজন আছে এবং ঐখান থেকে পাহাড়ে ট্রেকিং এবং মাউন্টেন বাইকিং করার ব্যবস্থা আছে। আমাদের উদ্দেশ্য হাত্তা সাইন পযন্ত ট্রেকিং করা।
আমি আর ডানা দুজনে রওয়না দিলাম হাত্তা সাইন পযন্ত যাবো বলে। কিন্তু কিছু পথ যাবার পরে দেখলাম যে হাত্তা সাইন অনেক দুরে এবং ঐখানে যাবার রাস্তা আমাদের হোটেলের পাশ থেকে অনেক কাছে।
তবে আমরা প্রায় ৩০ মিনিট পাহাড়ী পথে হেটে ফিরে আসলাম। ডানাও পাহাড়ী পথে ট্রেকিং করে খুবই খুশি। এই প্রথম এই বার পাহাড়ে হাটা, অনেক ছাগল চড়ানো দেখা।
হাত্তা এডভ্যন্চার হাব
ট্রেকিং এবং মাউন্টেন বাইকিং এর ম্যাপ।
ট্রেকিং শুরু করে ঐ খান থেকে
আমরা ছোট্ট একটা রক ক্রেইন বানালাম হাত্তায়।
এই ৩০ মিনিটের মাঝে শারমিন ৩ বার ফোন দিছে, ডানা ঠিক আছে তো, ক্লান্ত হয় নাই তো? চইলা আসো!!!
কিন্তু পাহাড়ে হাটতে গেলে শুধুই মনে হয় আরেকটু সামনে যাই, সামনে আর কি আছে দেখে আসি

এখান থেকে ফিরার পথে ডানা পানির রাইডে উঠার বায়না ধরলো।
ডানার হাসের রাইড শেষ করে রওয়া দিলাম বাসার উদ্দেশে। ৯৫ কিমি: পথ আসতে মাঝখানে আবার পথ হারালাম। গুগুল ম্যাপ আবারো ৩০ কিমি: বেশি ঘুরিয়ে দুবাইয়ের পথে নিয়ে এলো। আশা যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৬০ কিমি পথ বেশি ঘুরতে হয়েছে আমাদের।

ফেরার পথে শারমিনের আবদার দেশি খাবার খাবে। গেলাম দুবাইতে ইন্টারন্যাসনাল সিটিতে শরফুদ্দিন রেস্টুরেন্টে
গরুর মাংস, বড় চিংড়ি মাছ, ভর্তা, যত পারো ডাল আর ভাত

আরেক দিন সময় করে শরফুদ্দিন রেস্টুরেন্টের খাবারের উপরে ভিডিও তৌরি করতে যাবো।
খাইয়া ডাইয়া বাসায় এসে তাড়াতাড়ি ঘুম। সারাদিনের ক্লান্তিতে গাড়িতেই ঘুম এসে যাচ্ছিলো প্রায়।

সব মিলিয়ে ১ রাত ২ দিনের ট্রিপ খুবই ভালো লেগেছে আমাদের। সামনে সময় করে যাবো রাসআল খাইমা অথবা ফুজাইরা তে।
তখন হয়তো আরেকটা ব্লগে বিস্তারিত লিখবো। ধন্যবাদ।
হাত্তা ভ্রমন ( Hatta, UAE) - ০২ Click This Link
হাত্তা ভ্রমন ( Hatta, UAE) - ০১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫০