ধর্ষণ এবং পোশাক নিয়ে বিগত কয়েকদিন পূর্বে চ্যানেল২৪-এ মোশাররফ করিমের দেয়া বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ পক্ষে বলেছে। আবার বেশিরভাগই ঐ কথার বিপক্ষে সমালোচনা, প্রতিবাদ, গালি, এমনকি হুমকি পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে। সব পক্ষের প্রায় সবার কথাই এ পর্যন্ত শুনে আসছি। বাংলাদেশের মত স্বল্প শিক্ষিত অনুন্নত দেশে ঐ বিপক্ষ মতের সংখ্যাই যে বেশি হবে তা খুবই স্বাভাবিক।
ধর্ষণ যে করে তাকে আমরা ধর্ষক বলি। ধর্ষক একটি পুরুষ বাচক শব্দ। ধর্ষকী বা ধর্ষকের কোন নারী বাচক শব্দ আমার জানা নেই।সাধারনভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন (বিবাহ অযোগ্য বাদ দিয়ে) প্রাকৃতিক ভাবেই খুব স্বভাবিক একটা ব্যাপার। নারীর প্রতি পুরুষের আবার পুরুষের প্রতি নারীর। তাহলে সব ধর্ষক পুরুষ কেন?
আবার, ধর্ষণের কারন হিসেবে এক শ্রেণীর পুরুষ নারীর পোশাককেই মুলত দায়ী মনে করে। আবার নারী কি ধরনের পোশাক পরবে তাও তারা বাতলে দেয়। ধর্ষনের ঘটনা ঘটলে ধর্ষিতা নারীকেই অনেক সময় দোষী সাব্যস্তও করে। এই শ্রেনীর পুরুষ আর ঐ ধর্ষক পুরুষের মধ্যে কি কোনো যোগসুত্র রয়েছে? উভয় ক্ষেত্রেই আমরা দেখছি এক ধরনের জোর-জবরদস্তি বা কতৃত্ববাদি মানসিকতা। অসভ্য, বর্বর মানসিকতা না হলে কিভাবে অপর পক্ষের উপর নিজস্ব কাম বাসনা অথবা পরিধেয় ব্স্ত্র কিরুপ হবে সেই শর্ত জোর পূর্বক চাপিয়ে দেওয়া যায়? অথচ ঐ শ্রেণীর পুরুষ নিজেরাই দায়ী!
ধরা যাক আগামীকাল থেকেই সব নারী বোরখা পরা শুরু করলো। ধর্ষক চোখ তখন বোরখার উপরেই উঁচু-নিচু খুঁজবে। বোরখা কতটুকু টাইট; কিংবা টাইট না থাকলেও কল্পনায় তা টাইট হয়ে যাবে। বোরখার ভেতরের মানুষটিকে পেতে তখন মরিয়া হয়ে উঠবে। কারণ ধর্ষক মন তো তখনও দিব্যি রয়েই গিয়েছে। বোরখা ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খুবলে খাবে তখন। ধর্ষক থেকে শিশু, কিশোর, বালক, আপন মেয়ে কেউই নিস্তার পায়না সেও তো আমরা জানি।
একজন দাম্মাম হুজুর আহমাদুললাহ কে একজায়গা বলতে শুনলাম, 'সন্মানিত ভায়েরা, জুতা আবিস্কারে একটা গল্প কথিত আছে কোনো এক রাজা জুতা আবিস্কার হওয়ার আগে তিনি বলছিলেন যে আমি যখন বের হবো তখন কাঁটা ইত্যাদি আমার পায়ের নিচে পড়তে পারে.........সারা রাজ্য ঝাড়ু না দিয়ে আপনার পা দু'টো ঢেকে ফেললেই তো হয়।' গল্পটি দিয়ে উনি বোঝাতে চাইলেন সারা দুনিয়ার পুরুষের মন ঠিক না করে নারীকে ঢেকে দিলেই তো হয়! কিন্তু আমি বলবো উনার কথাটাই বরং উল্টো হয়ে গেলো। সারা দুনিয়ার নারীর শরীর ঢাকার কথা না বলে শুধুমাত্র ধর্ষকের বিরুদ্ধে বললেই উনার উদাহরনটা মানানসই হতো। আবার এক জায়গা বললো '...মূরগীর স্বাধীনতা শেয়াল চায় এই বাস্তবতা যদি কেউ না বুঝে তাহলে তার মত বোকা আর কেউ হতে পারেনা।' উনি এখানে পুরুষকে শেয়াল আর নারী কে মূরগী হিসেবে বোঝাতে চাইলেন! নারী পুরুষের সাম্যতা এই শ্রেণী কোনোদিন মেনে নেয়নি। এরাই আমাদের সমাজের উপরেল্লেখিত সেই কতৃত্ববাদি শ্রেণী! মোশাররফ করিম এদের কাছেই শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছে!
এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার
.....
রাত্রি সে তো স্বভাবে মলিন
তাতে সয়ে থাকা যায়
ভোরের পথের দিকে চেয়ে থাকা যায়
সে ভোর অন্ধ হলো কি হবে এখন
তার যে কথা ছিলো আলো দেবার
ও কি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা
ও কি পাখির কূজন নাকি হাহাকার
[ জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




