somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ছোটগল্প] নুহাশের জাদুর কলম এবং একটি ... :(

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই গল্পটি লিখার সময় কেঁদে দিয়েছিলাম আমি, এর আগে এমন কখনো হয়নি আর]
প্রচন্ড রেগে গিয়ে নুহাশের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট শিটটি ছুড়ে ফেলে দিলেন মিসেস শাহানা।
- চার সাবজেক্টে ফেল করেছ! পাশের বাসার ভাবীর মেয়েটা ফার্স্ট হয়েছে, আর তুমি? পড়ালেখা করা লাগবেনা তোমার আর!
-আচ্ছা!
-কি আচ্ছা!! বেয়াদব ছেলে কোথাকার , মুখে মুখে কথা বলে!
-তুমিই তো বললে!
- আবার! লায় দিতে দিতে মাথায় উঠেছে একদম! যাও! পড়তে বসো।
নুহাশ মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে হেটে নিজের রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে। ও, নুহাশের কথাতো বলাই হয়নি। পুরো নাম নুহাশ ইবনে ইবতিহাজ। ক্লাস সিক্স এ পড়ে সে। ছোটবেলায় তার বাবা মারা গিয়েছেন রোড এক্সিডেন্টে। তারপর থেকে মা ই তার সব। স্কুল পরীক্ষায় বরাবরই রেজাল্ট খারাপ তার। এইতো, ফাইনাল পরীক্ষায় পাঁচ সাবজেক্টের চারটাতেই ফেইল করেছে।
এ নিয়ে খুব মন খারাপ নুহাশের। পড়তে তার একদমই ভালো লাগে না। একঘন্টা পড়ার চাইতে সারাদিন না খেয়ে ক্রিকেট খেলতে বললেও তার খারাপ লাগবে না। পড়তে বসলেই শুধু ঘুম পায় তার। পড়তে ভালো লাগে না, লিখতে ভালো লাগে না, কিন্তু ক্রিকেট খেলতে খুব ভালো লাগে। এইতো সেদিন পেস বল করে পাড়ার এক বড় ভাইয়ের 'মিডল স্ট্যাম্প" উড়িয়ে দিয়েছে, :P ভাইয়ার সে কি চিৎকার! পরে ওই ভাইকে হাসপাতালে নেয়া লেগেছিল।
যাকগে, গল্পে ফিরে আসি। ছোটবেলা থেকেই নুহাশের খুব স্বপ্ন , তার একটা জাদুর কলম থাকবে। সে সারাদিন ক্রিকেট খেলবে কিন্তু একটু ও পড়ালেখা করবে না। আর পরীক্ষা যখন হবে নুহাশ শুধু কলম ধরে থাকবে আর সেই কলমটা নিজে থেকেই সব লিখে দিবে। পরীক্ষায় বরাবরই ফার্স্ট হবে সে। আসলে, মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয় তার। ফার্স্ট হলে মা খুব খুশি হত, এটা নুহাশ বুঝে কিন্তু ক্রিকেট খেলা দেখলেই আর কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারে না।
একদিন রাতের ঘটনা। নুহাশ স্বপ্ন দেখছে। সে একটা গহীন বনে হেটে চলেছে, চারিদিক অন্ধকার। হঠাৎ করে আকাশ থেকে তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে উজ্জ্বল রঙের গোলমত কি যেন একটা নুহাশের সামনে পড়ল। নুহাশ ভয়ে ভয়ে আস্তে করে ওটার সামনে দাড়াতেই হুট করে ওটা খুলে গেল আর একটা ভাজ করা কাগজ বেড়িয়ে এলো। নুহাশ কাগজটা হাতে নিলো, ওটা থেকে তীব্র আলো বেরুচ্ছে! নুহাশ পড়া শুরু করল " জাদুর কলম খুঁজে পাবার গোপন নকশা'! আরে এটাই তো খুঁজছিল ও এতোদিন! একদমে পুরোটা পড়া শেষ করলো নুহাশ। পড়া শেষ হওয়া মাত্রই বজ্রপাতের মতো তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠল চারিদিক। নুহাশের পায়ের নিচের মাটি দুভাগ হয়ে সরে যাচ্ছে! নুহাশ সেই অন্ধকার গহবরের মধ্যে পিছলে পড়ে গেল, হারিয়ে যাচ্ছে সে অতলে!!
ঝট্‌ করে ঘুম থেকে উঠে বসল ও। ঘেমে গিয়েছে একদম, বুকটা এখনো ধরফর করছে! এক গ্লাস পানি খেয়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলো নুহাশ। সেদিন থেকেই নুহাশের মাঝে পরিবর্তন এসে গেলো। পরীক্ষার আর দুমাস বাকি আছে। নুহাশ বিকেল হলে একটু খেলতে বের হয় তাছাড়া দিনের বাকি সময়টা তার পড়াশুনা করতে করতেই কেটে যায়। দেখতে দেখতে দু মাস পার হয়ে গেলো আর পরীক্ষাও শেষ হলো। এখন রেজাল্টের অপেক্ষা! পরীক্ষা অতোটা ভালো হয়নি কিন্তু নুহাশ রোজ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে শুধু একটাবার ফার্স্ট হবার জন্য, তাহলে যে মায়ের মুখে একটু হাসি দেখতে পাবে সে!
আজ নুহাশের রেজাল্ট দিবে।
বুকে প্রচন্ড ভয় নিয়ে নুহাশ ক্লাসে বসে অপেক্ষা করছে রেজাল্টের জন্য। ক্লাসের ফার্স্টবয়,সেকেন্ড বয় সবার সামনের বেঞ্চে বসেছে। আর নুহাশ গিয়ে বসেছে একেবারে শেষের বেঞ্চে। ঠিক যখন দশটা বাজে তাদের ক্লাস টিচার রেজাল্ট নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে নুহাশের হার্টবিট যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো! ওদের ক্লাসে প্রথম পাঁচজনকে প্লেস হিসেবে ধরা হয়। স্যার একে একে পঞ্চম, চতুর্থ, তৃতীয়, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের নাম ঘোষণা করলেন। কোথাও নুহাশের নাম নেই। নুহাশের খুব মন খারাপ। এবারো হলো না। frown emoticon এখন, প্রথম যে হয়েছে তার নাম ঘোষণা করবেন স্যার। প্রথম স্থান অধিকারকারীর নামটা দেখে অবাক হয়ে চোখ কচলে নিলেন স্যার, তিনি ভুল দেখছেন না তো! " প্রথম স্থান অধিকার করেছে নুহাশ!!'ঘোষণা করার সাথে সাথে সবাই অবাক চোখে একসাথে নুহাশের দিকে তাকালো! নুহাশের চোখে তখন আনন্দের বাধ ভেঙ্গে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আনন্দে সবার সামনে হু হু করে কেঁদে দিলো নুহাশ। মা এবারের রেজাল্ট দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবেন।
খুশিতে উজ্জ্বল মুখ নিয়ে রেজাল্ট শিট হাতে করে এক দৌড়ে স্কুল থেকে বের হয়ে এলো সে ,মাকে গিয়ে রেজাল্টটা জানাতে যেন তর সইছে না আর। রাস্তার এপারে দাঁড়িয়ে দেখলো তার মা রাস্তার অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, নুহাশের স্কুলের দিকেই আসছিলেন। মাকে দেখে মুখের হাসিটা আরো বিস্তৃত হলো নুহাশের। রাস্তায় তখন গ্রীণ সিগন্যাল ছিলো , তবে দু একটা রিকশা ছাড়া কোন গাড়ি ছিলো না। ডানে বামে তাকিয়ে নুহাশ এক দৌড়ে রাস্তার মাঝখানে চলে এলো। অমনি রাস্তার বাঁক পেরিয়ে কোত্থেকে বিশাল এক লরী নুহাশের দিকে এগিয়ে আসছে! নুহাশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো, তার পা যেন রাস্তার সাথে মিশে গেছে। প্রচন্ড গতির তীব্র আক্রোশে নুহাশকে রাস্তার সাথে পিষে দিল লরীটা। নুহাশের রক্তে ভিজে গেলো পুরো রাজপথ। রেজাল্ট শিটটা শরীরের পুরো শক্তি দিয়ে বুকের মাঝখানে চেপে ধরলো নুহাশ, যেন কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! প্রচন্ড কষ্টে চোখের জল টপটপ করে রাজপথে ঝরে পড়ল নুহাশের। শেষবার প্রচন্ড চিৎকারে 'মা" বলে ডাকবে, হঠাৎ করে দপ করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়ে এলো পৃথিবীর সব আলো। নুহাশের নিথর দেহ পড়ে রইলো রাজপথের মাঝখানে।
নুহাশকে ঘিরে আশেপাশে তখন লোক জমে গিয়েছে। ছেলেকে বুকে নিয়ে নুহাশের মায়ের আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে তখন। মৃত ছেলেকে বুকে নিয়ে মায়ের হাহাকারে চোখের জল বাধ মানলোনা কারো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×