

আজকের (২০/০৭/২০১৪) প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রধান যে নিউজটা, 'ইসরায়েলের উন্মত্ততা চলছেই' শিরোনামে। চমৎকার একটি সূচনা করা হয়েছে নিউজটির- আহত শিশুর আর্তনাদ, সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না কিংবা বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়....। নিউজটি আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ছিলাম। একটু এগোলাম, দেখলাম নিউজটির দ্বিতীয় প্যারায় ইসরায়েলের চলমান 'উন্মত্ততা' বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের....। এখানে উন্মত্ততা শব্দটিকে কোটেশনের মধ্যে দেয়া হয়েছে। কোন শব্দকে এভাবে কোটেশন চিহ্নের মধ্যে দেয়ার মাধ্যমে বুঝানো হয়, এই শব্দটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তার মানে কী?? ফিলিস্তিনে উন্মত্ততা চালাচ্ছে না ইসরায়েল??? এক জায়গায় নয়, এরপর বেশ কয়েক জায়গায় ইসরায়েলি 'উন্মত্ততা' শব্দটিকে কোটেশন চিহ্নের মধ্যে দেয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, নিউজটির মাঝামাঝি এক জায়গায় পাবেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক ফিলিস্তিনি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। ওই জঙ্গিটি নাকি একটি মেশিনগান নিয়ে ইসরায়েলকে পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। তাই তাকে জঙ্গি বলা হয়েছে।
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, উগ্রপন্থী সংগঠন হামাস। উল্লেখ্য, হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের এমন এক সংগঠন যারা ইসরাইলকে অবৈধ রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত করে। তারা ইসরায়েলের সাথে কোন আপোসহীন চিরস্থায়ী সংগ্রামে লিপ্ত। এর কারণ, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে। আজকের ইসরাইল মূলত একসময়ের ফিলিস্তিন। হামাসের এই যুক্তির সঙ্গে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিমই একমত।
তাহলে প্রথম আলো কী করছে? ওদিকে ইসরায়েল বোমা মারছে নির্বিচারে। ইসরায়েল সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনে অস্ত্র নিয়ে, আর প্রথম আলো কী করছে, তথ্য সন্ত্রাস। চিন্তা করে দেখুন মাত্র একটি শব্দ দিয়ে মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে দেয়া সম্ভব। উন্মত্ততাকে কোটেশনের মধ্যে দিয়ে, হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধাকে জঙ্গি বলে, ও হামাসকে উগ্রপন্থী সংগঠন বলার মাধ্যমে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এটি সাধারণ পাঠকের পক্ষে বুঝা অনেকটাই কঠিন। আমরা যারা সাংবাদিকতার ছাত্র তারা খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারি বিষয়গুলো।
আর প্রথম আলোর এই সংবাদের ছবিটি খুবই মানবিক আবেদনসন্পন্ন। এক বাবা তার নিহত শিশুর লাশ কোলে হতবাক দাড়িয়ে আছেন। এই ধরনের ছবি দেখে যেকোন মানুষের মনে নাড়া দিবে। নিউজটির বেশিরভাগ জায়গাতেই ফিলিস্তিনেদের প্রতি সমবেদনা নিয়ে ও ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধেই লেখা হয়েছে। এর কারণ, ব্যবসা। একটি পত্রিকা বা মিডিয়া কিন্তু কেবল 'মানবসেবা'ই করে না, ব্যবসাও করে। আর প্রথম আলো খুব ভালো করেই জানে, বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট কেমন? বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই ফিলিস্তিনের প্রতি সমবেদনাশীল। তাই তারা মোটাদাগে কাজটি না করে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাজটি করছে। মোটাভাবে করতে গেলে ধরা পড়ে যাবে, তাই। তারা মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই মানুষের মনের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে অত্যন্ত সুকৌশলে, কিছু শব্দ ও শব্দমালা দিয়ে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


