এইতো মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। ওহ্ না.... তাও তো অনেকদিন হয়ে গেল। দেখতে দেখতে প্রায় বছর ঘুরে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরের কথা.....
আমরা কয়েকজন বন্ধুর একটা সার্কেল। সবাই মিলে প্ল্যান হচ্ছে কক্সবাজারে যাওয়ার... কিন্তু অনেক সমস্যা... একেকজনের একেক রকম..... কারও অফিস খোলা.... আবার কারও সেমিষ্টার ফাইনাল সামনে.... আবার কেউ কেউ মহা উৎসাহী।
যাই হোক... ঠিক হলো... ৫ জন যাব। যেই কথা সেই কাজ। পরেরদিন সকালে গিয়ে চট্টগ্রামের ট্রেনের টিকেট কিনলাম। অতিরিক্ত কিছু ভর্তুকিও দিতে হলো.... টিকেটের crisis.....
রওয়ানা হলাম... রাতের ট্রেনে... । প্রথমেই বিপত্তি... ট্রেন তিন ঘন্টা লেট। টিকেট কাউন্টার থেকে বারবার বলছে,"যারা যারা টিকেট ফেরৎ দিতে চান তারা কাইন্টারে যোগাযোগ করুন।" কি আর করা... অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় তো দেখছি না।
অবশেষে ট্রেন আসল.... অনেক দৌড়াদোড়ি করে জায়গায় পৌছলাম..... শুরু হলো কানের কাছে অবিরাম ঝক্কর ঝক্কর..... । আমাদের একটা প্ল্যান ছিল... যেই আমাদের সাথে সিট শেয়ার করবে তার কপালেই রাতভর হবে তান্ডব...... কিন্তু ঐ ব্যাটা তো মহা পন্ডিত নিকলা......(হা হা হা...)। সে আমাদেরও ওস্তাদ.... । যাই হোক, ভৈরব পর্যন্ত ভালই গেলাম কিন্তু তারপরেই শুরু হলো বিপত্তি। কোথা থেকে থরথর করে বিনা টিকেটের যাত্রী পুরা ট্রেন ভরে গেল। তাও তখন রাত বাজে ২:৩০। কুমিল্লা গিয়ে তো অত্যাচারই শুরু হয়ে গেল....... পা-টাও নড়ানো যায় না।
যাচ্ছি ট্রেনে করে ... প্রচন্ড শীত... বাইরে কনকনে হাওয়া... ভোরের দিকে জানালা খুলে বাইরে তাকাতেই ঘন কুয়াশার হাতছানি। ওয়াও... it was gr8... এক নিমেষেই সকল ক্লান্তি হাওয়া...... যাওয়ার পথে দুপাশের পাহারগুলো বিস্ময়কর দেখাচ্ছিল।
চট্টগ্রামে পৌছাতে সকাল ৯টা বেজে গেল। ট্রেন থেকে একটু দেরী করেই নামলাম ... ভীড় থেকে বাচবার আশায়!
যাই হোক... সবাই মিলে নামলাম... আমাদের সাথের ঐ ব্যাটাও নামল.. ফোন নম্বর দিল.... কিন্তু ঐ দিকে মনোযোগের সময় কই.... আমাদের মন পড়ে আছে সমুদ্রের ঐ জলরাশিতে....
ষ্টেশন থেকে বের হয়ে যাচ্ছি কোন ভাল রেষ্টুরেন্টের খোজে যাতে সকালের নাস্তাটা করা যায়... পেটে ক্ষুধায় চো চো করছে... কিন্তু যাও খেলাম পানি খাওয়ার সময়তো মাথা নষ্ট... এরকম বিস্বাদ পানিও হয় নাকি......
রিকশায় করে যাচ্ছি... অলিগলি ধরে... উদ্দেশ্য কক্সবাজার যাবার বাস ধরা... গিয়ে পৌছালাম বাস কাউন্টারে.. একটার পর একটা বাস যাচ্ছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে.... কিন্তু কোন বাসই মনঃপুত হচ্ছে না... কি আর করা.... অগত্যা উঠে পড়লাম একটাতে... যদিও বাসটি ছিল চাঁপা আর একটুও আরামদায়ক না..... প্ল্যান ছিল বাসে উঠেই মারাত্নক একটা ঘুম দিব.. কারণ সারারাত তো ট্রেনে মানুষের সাথেই
কলাতলী মোড়ে গিয়ে রিকশাওয়ালদের বললাম হোটেলের কথা...তো তারা ২জন রাজী হইল যাওয়ার জন্য.... আমাদের নির্দিষ্ট হোটেলে যাওয়ার জন্য.... কিন্তু হোটেলে পৌছে কি এক মজা পাইলাম যা কিনা জীবনের একটা মহা স্মরণীয় ঘটনা.... রিকশাওয়ালারা মোটেও আমাদের টের পেতে দেয়নি যে, আমাদের হোটেলটি হেটে যেতে মাত্র ৩ মিনিট সময় লাগে... কি মহা বড় বেকুব যে হলাম... সবাই মিলে... এই কথা মনে পড়লে এখনও হাসি।
পর্যটনের মৌসুম হওয়ায় সব হোটেলগুলোতে মহা ভীড়.... হোটেলের একটা ফাকা রুম পাবার আশায় লোকজন এই হোটেল ঐ হোটেল দৌড়াদৌড়ি করছে... আমাদের দুইটা রুম বুকিং দেওয়া ছিল বলে রক্ষা..... কিন্তু আমাদের দেয়া হলো একটা ডাবল বেডের রুম .... কি আর করা.... আমাদের একটা রুমেই উঠতে হল।
সবাই গোসল সেরে খাওয়ার জন্য বের হব... কারণ বেলা তো কম হল না.... প্রায় ৪টা বাজে।
হোটেলে খেতে গিয়ে আরেক বিপর্যয়... আতপ চালের ভাত.... এইগুলা কি আর মজা লাগে। অবশ্য ইলিশ মাছগুলো ভাল ছিল....
হাটতে শুরু করলাম.... খেয়ে দেয়ে....লক্ষ্য ছিল বিচে যাব... কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ার কথা... কিন্তু কেউ অপেক্ষা করতে চাইল না....
তো গেলাম .... বিচে.... ওয়াও! সে এক অনন্য অনুভূতি... সাগরের পাহাড় সমান ঢেউয়ের চেয়ে বেশী ভাল লাগল.... মানুষের অকৃত্রিম আনন্দভরা বিস্ময়যুক্ত চোখ..... না দেখলে কোন দিনও বিশ্বাস করা যায় না একেক সময় সাগরের একেক চেহারা... একেক রূপ! সকালে গিয়ে দেখি আরেক চেহারা..... যেটাকে কোনভাবেই আমি আগের দিনের অপরাহ্নের সাথে মিলাতে পারছিলাম না.....
পরের দিন সকালে আমাদের প্ল্যান ছিল... কক্সবাজারের আশেপাশেই থাকব। তো আমরা নাস্তার টেবিলে সিদ্ধান্ত নিলাম হিমছড়ি যাওয়ার। পরিকল্পনা মত একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করলাম।
হিমছড়ি যাওয়ার পথ গুলো যেন অপরূপ নৈসর্গিক কিছু উপযুক্ত প্রমাণ। শুনেছিলাম আগে ওখানে যেতে হলে সৈকতের উপর দিয়ে গাড়ি করে যেতে হয়। কিন্তু দেখলাম নতুন রোড হয়েছে.. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কল্যাণে। কিছুক্ষন পরপর পোষ্টগার্ড। কিছুটা বিরক্ত হলেও পরে এর মাহাত্ব বুঝতে পারলাম। কক্সবাজারের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে হলে এটার দরকার আছে। পর্যটকদের সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রেখেই হয়তো এটা করা হয়েছে। যাই হোক.... দুপাশের কাটা কাটা পাহাড়। মাঝে মাঝে উপর থেকে তীব্র বেগে নিচে নেমে আসা জলরাশি দেখে বিমোহিত হলাম।
হিমছড়িতে গিয়ে দেখি মানুষ আর মানুষ। অনেকেই পিকনিক করতে এসেছেন আবার অনেকে ঘুরতে। উচাঁ উচাঁ পাহাড়... সেটা বেয়ে বেয়ে মানুষ উপরে উঠছে। অনেকেই পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে আবার কেউ সিড়ি দিয়ে। যেহেতু আমাদের মধ্যে তারুণ্য ছিল, তাই একজন বন্ধু বাদে সবাই ঢাল বেয়ে উঠলাম। কিন্তু উঠতে যেয়ে বুঝলাম আসল ঝামেলা। যেহেতু ট্র্যাকিং অভিজ্ঞতা বা প্রস্তুতি কোনটাই নাই তাই বেশ বেগ পেতে হলো। অনেক কষ্ট উপরে উঠলাম, যদিও একবার পা পিছলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু সেটা সামলালাম। পাহাড়ের উপর থেকে সাগর যেন মনে হচ্ছিল এক অচেনা জায়গা। কিছুতেই নিজের দেখার সাথে মেলানো যাচ্ছিল না। কিন্তু মানুষের ভীড় এসব ভাললাগায় কিছুটা চিড় ধরায়। ছবিটবি তুলে নিচে নেমে গেলাম। হিমছড়ির আরেক দিকে যেখানে ঝর্ণাটা আছে সেদিকে পা বাড়ালাম।
এখানেও অনেক ভীড়। দেখলাম কেউই পানির নিচে যাচ্ছে না। সবাই শুধু এর পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলছে অথবা দাড়িয়ে অন্যদেরকে সঙ্গ দিচ্ছে। আমার সব বন্ধুরাও তেমনই করছে। কিন্তু আমার কি যেন হলো... মোবাইল, ওয়ালেট অন্য বন্ধুর কাছে দিয়ে পানির নামার প্রস্তুতি নিলাম। ঝর্না দেখতে এসে ঝর্ণার পানিতে না ভেজার কোন যুক্তি নেই। আমি পানির নিচে যাওয়ার সময় লক্ষ্য কনলাম পর্যটক আমার দিকে আগ্রহ করে তাকিয়ে আছে। তখন এর কারণ না বুঝতে পারলেওপরে বুঝলাম। কারণ আমাকে দেখে আরও চার পাঁচজন পানিতে ভিজতে চলে আসল। পানির তীব্র বেগে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
কাঁকভেজা হয়ে কক্সবাজারে ফেরার সময় বুঝতে পারলাম ভেজার আসল মাহাত্ন্য। কেমন জানি শীথ শীত লাগছিল। সবাই বলল... দেখিস আবার জ্বরটর বাধাস না যেন। পথের মাঝে আরেক জায়গায় থামলাম। সেখানেও ঝর্ণা দেখতে।
হোটেলে ঢুকেই সবাই রেডী হয়ে যাচ্ছিল বিচি যাওয়ার জন্য। দুপুরের কিছু আগে বারটা কি তার আশেপাশে বাজে। সবার মনে তীব্রভাবে সমুদ্রের জলরাশিতে ভেজার আগ্রহ। আবার ভেজাভেজি... কপালে মনে হয় দুঃখ আছে। আর যাই হোক অসুস্থ হওয়া যাবে না কারণ এখান থেকে বাসায় যেয়েই আবার বগুড়ায় যেতে হবে আইইউবি এর এল.এফ.ই প্রোগ্রামে যেতে হবে। যেহেতু সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই একটু চিন্তা যে হলো না তা বলব না। কিন্তু মন তো আর পানি দেখলে মানে না। বন্ধুদের সাথে ভিজলাম.. ঝাপাঝাপি করলাম। মজাই হলো... । হোটেলে ফেররার সময় অবসন্যতা অনুভব করলাম। যাওয়ার পথে ফারুকীর নাটক ৪২০ এর কিছু শূট্যিং হচ্ছে দেখলাম। হটকেক মোশারফ করিমের সাথে ছবি তুললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



