somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আক্রোশ - ০৩

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২য় পর্ব- Click This Link


মোহনপুরকে ঠিক শহর বলা যায় না।  কারণ শহরের কান ঝালাপালা করা কোলাহল এখানে খুব একটা কানে আসে না। নেই যানবাহনের চ্যাঁ ভ্যাঁ চিৎকার, কলকারখানার কালো ধোঁয়া। নেই যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ আর নাক বন্ধ করা পঁচা দুর্গন্ধ। তারমানে এই নয় যে এখানে গাড়িমোটর, কলকারখানা এসব নেই। একটা শহরে যা যা থাকে তার সবটাই মোহনপুরে বিদ্যমান।

এখানে আছে বড় বড় পিচঢালা রাস্তা, রাস্তায় চলছে হরেক রকমের যানবাহন। আছে বড় বড় শিল্পকারখানা। কিন্তু সবকিছু এখানে নিয়ম মেনে চলে। তাই চ্যাঁ ভ্যাঁ এখানে কানটাকে ঝালাপালা করে না। মোহনপুরে ঢুকলেই সবার আগে যা নজরে পড়ে তা হলো সবুজের সমারোহ। যানবাহন আর কলকারখানার মৃদু শব্দকে ছাপিয়ে এখানে রাজত্ব করে পাখির কলকাকলি। মোহনপুর হলো গ্রাম্য স্নিগ্ধতায় ভরা এক অপূর্ব মায়াবী শহর।

  নাহ, এই শহরটা মূল থেকেই এমন ছিল না। আবার হঠাৎ করেই মোহনপুর এমন মোহনীয় রূপ ধারণ করেনি। এই শহরটা এমন রূপ ধারণ করেছে তিলে তিলে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার সম্পুর্ণ কৃতিত্ব যার, তার নাম হলো পল্লব আহমেদ। পল্লব আহমেদ মোহনপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র।

মেয়র বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পঞ্চাশোর্ধ একজন বয়স্ক মানুষের চেহারা। কিন্তু পল্লব আহমেদ সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে অল্পবয়সী মেয়র। বিগত তিন বছর ধরে সে মোহনপুর পৌরসভার  মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছে সফলতার সাথে। তার সুখ্যাতি এখন সারা বাংলাদেশে লোকের মুখে মুখে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমেই মোহনপুর আজ সারা বাংলাদেশের একটি আদর্শ শহর।

          আঠারো বছর বয়সে মোহনপুরে পা রাখে পল্লব। মোহনপুরে আসার পেছনে তার উদ্দেশ্যটা গোপন কিন্তু বিশাল। ভাল ভাল ছাত্ররা যেখানে এইচ এস সি পাস করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পারি জমায় সেখানে পল্লবের মত মেধাবী ছেলে এইচ এস সি পাস করে ঢাকা থেকে চলে আসে মোহনপুরে। মোহনপুর সরকারী কলেজে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়।

এখানে কোন আত্মীয়স্বজন না থাকায় হোস্টেলে থেকেই সে পড়ালেখা করতো। ধীরে ধীরে যে উদ্দেশ্যে তার আগমন সেই পথে হাঁটা শুরু করে সে। আর তার প্রথম পদক্ষেপটা সে গ্রহণ করে ছাত্র রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই অল্প কদিনের ভেতর ছাত্রদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে সে। চোখে মুখে ছিল এক দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়। তুখোড় বক্তৃতায় মুগ্ধতার আলো ছড়িয়ে সহজেই মানুষের মন জয় করে নেয়ার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল ওর।

অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো আর নিপীড়িতের সেবা করা ব্রত হয়ে উঠলো তার। ধীরে ধীরে সারা মোহনপুরে ছড়িয়ে পড়ে তার নেতৃত্বের দীপ্তি। প্রায় সাতটি বছর এই মোহনপুরে কাটিয়ে এই শহরেরই একজন মানুষ, একজন নেতা, প্রাণের নেতা হয়ে উঠে সে। ঠিক পঁচিশ বছর যখন বয়স হলো তখন সময় হলো নির্বাচনে দাঁড়ানোর। যে উদ্দেশ্যে এই মোহনপুরে তার আগমন সেই উদ্দেশ্যেটা সফল করার জন্য তার প্রয়োজন ছিল অসামান্য ক্ষমতা।

কারণ তার লড়াইটা যে এই মোহনপুরের ক্ষমতাধর কয়েকজন ব্যক্তির সাথে। সংসদীয় ক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তার স্থানীয় ক্ষমতা। তাই সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে সে প্রার্থী হলো পৌর নির্বাচনে। জয় তার নিশ্চিত ছিল। ফলে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে মোহনপুর পৌরসভার মেয়রের পদে আসীন হয় পল্লব।

সেই থেকে শুরু হয় মোহনপুরকে ঢেলে সাজানোর কাজ। যেন এক নেশায় পেয়ে বসে তাকে। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনার স্তূপ নেই। রাস্তায় যানবাহনের সারি ঠিকই আছে কিন্তু নেই কান ঝালাপালা করা হর্ণ। এর কারণ সবাই এখানে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। আছে শক্ত ট্রাফিক আইন। রাস্তার দুই  পাশে রয়েছে নাম না জানা সব গাছের সারি। এ যেন এক সবুজের শহর।

মোহনপুরে থাকতে থাকতে কখন যে মোহনপুরকে এতটা ভালবেসে ফেলেছে তা পল্লব নিজেও জানে না। আজ সে নিজেকে  মোহনপুরেরই একজন ভাবে। মোহনপুরের মানুষও তাকে এই শহরেরই একজন ভাবতে শুরু করেছে। মোহনপুরের কেউ আজও জানে না পল্লবের আসল পরিচয়। মোহনপুরের কেউ আজও জানে না পল্লবের ভ্রুণের জন্ম আসলে এই মোহনপুরেই।
চলবে
(গল্পের সকল ঘটনা, চরিত্র, স্থান কাল্পনিক)

রচনাকাল- ১৮-০৪-২০১৮
©নিভৃতা

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×