somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসনা ছুরি - ০৬

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




৫ম পর্ব - Click This Link


রীণা একটু ইতস্তত করলো। তারপর বলল,
---আসলে বুঝতে পারছি না ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেবো কিনা।

---তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর জিনিসের মধ্যে অনেক সময় অনেক বড় কিছু লুকিয়ে থাকে। কোন কিছুই উপেক্ষা করবেন না। বলুন।

---আসলে তিতলির আচরণ একটু অস্বাভাবিক। অনেক জ্ঞানীদের মত কথা বলে। ঠিক ছোটদের মত না। এই বয়সের বাচ্চারা যা করে ওর মধ্যে সেসবের কিছুই নেই। তার উপর নিজের বাবা মাকে ও পছন্দ করে না। এমন কি একটি কথাও ও ওদের সাথে বলে না। অথচ আমার সাথে একদিনেই অনেক মিশে গিয়েছে। অনেক কথাও বলছে। অথচ ও আমাকে চেনে না। কিন্তু আবার এও বলেছে ওর বাবা মা ওকে খুব আদর করে। কখনোই বকাঝকা করে না।

---ওর এই অস্বাভাবিকতা কিন্তু ভাবনার বিষয়। ওকে ভাল করে জিজ্ঞেস করুন। হয়তো ওর কিছু মনে থাকতেও পারে।

---এই অস্বাভাবিকতা ছোট বয়সে মাকে হারিয়েছে বলেও হতে পারে। ওকে এই বিষয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না। ওর বয়স খুবই অল্প। মনের উপর চাপ পড়বে স্যার।

---এমনভাবে জিজ্ঞেস করুন যাতে ও বুঝতে না পারে।

---ঠিক আছে। আরেকটা কথা স্যার, তিতলি ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে। কিন্তু ছোট তো। এখনো আকৃতিটা ঠিক মত দিতে পারে না। কী আঁকছে বোঝা মুশকিল। জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর দেয় না। কিন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে আঁকে ও। আর আমার কাছে কেন জানি মনে হয় ও একই জিনিস বার বার আঁকার চেষ্টা করে। আশ্চর্যের বিষয় বাচ্চারা যেখানে রঙ বেরঙের ছবি আঁকতে ভালবাসে সেখানে তিতলির সব ছবি সাদাকালো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কী কারণে ও কেবল কালো রঙ দিয়ে ছবি আঁকে। ও বলল কালোরঙ দিয়ে আঁকতেই নাকি ওর ভাল লাগে।

---ওর আঁকা কিছু ছবি নিয়ে আসবেন সাথে করে।
---স্যার আমি কালই চলে আসতে চাই। আমার খুব খারাপ লাগছে। বুঝতেই পারছেন নিজের বোনের স্থানে অন্য কাউকে সহ্য করা খুব সহজ না। আর এ কারণেই আমি এতদিন এই বাড়িতে আসিনি।

---আমি বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট। ঠিক আছে কালই চলে আসুন।

আট

ফোনটা রেখে ভাবনায় পড়ে গেল রীণা। এতদিন পর এভাবে এই বাড়িতে আসাটা ওর ঠিক হয়নি। মি: আশরাফের কথা রাখতে এখানে আসতে হল ওকে। ওর বোনের মৃত্যুর ব্যাপারে মি: আশরাফের এমন আগ্রহ ভীষণ অবাক করেছিল ওকে। সাহস করে ও জিজ্ঞেসও করে ফেলেছিল,
---স্যার আমি বুঝতে পারছি না আমার বোনের মৃত্যু নিয়ে আপনি এত আগ্রহী কেন।
---আমার আগ্রহের কারণ আপনি পরে জানতে পারবেন। তার আগে আমার একটা কাজ করতে হবে।
---কী কাজ স্যার?
---আপনাকে মি: আবীরের বাড়িতে যেতে হবে।
রীণা চমকে উঠে বলেছিল,
---অসম্ভব স্যার। আমাকে আপনি এই অনুরোধ করবেন না। তিন বছর হয়ে গেল আমি আর ঐ বাড়িতে পা দেইনি। ঐ মেয়েটির মুখোমুখি হওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি সহ্য করতে পারব না স্যার। আপনি জানেন না আমার বোন আমার জন্য কী ছিল।
---জানি বলেই বলছি। আর মনে করুন এই কাজটা চাকরিরই অংশ।

রীণা খুবই ইতস্তত বোধ করছিল। আবার মি: আশরাফের কথা ফেলতেও পারছিল না। মি: আশরাফ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলেছিলেন,
---আপনার বোন আত্মহত্যা করেনি মিস রীণা। আপনার বোনকে খুন করা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।
রীণা বিস্ময়ে থ হয়ে গিয়েছিল। কোন রকমে বলেছিল,
---কী বলছেন এসব স্যার? না না, আপনার কোন ভুল হয়েছে। আমার বোনকে কে খুন করতে যাব?
---সেটা বের করতেই তো তোমার ঐ বাড়িতে একবার যাওয়া ভীষণ প্রয়োজন।
---না স্যার আমার পক্ষে এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাছাড়া আমার বোন আত্মহত্যাই করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
---আর যদি না করে থাকে? তুমি কি সেটা চুপচাপ মেনে নিয়ে বসে থাকবে।
---মোটেই না। আমার বোনকে যদি কেউ খুন করে থাকে তার প্রতিশোধ আমি নিবোই। কিন্তু আমি জানি আমার বোন খুন হয়নি।
---আচ্ছা কেবিনে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় আগাগোড়া একটু ভেবে দেখুন।

রীণা নিজের কেবিনে চলে এসেছিল। কিন্তু মনের ভেতর ততক্ষণে সন্দেহের বীজটা বোনা হয়ে গিয়েছিল। কিছুতেই মাথা থেকে ব্যাপারটা সরাতে পারছিল না। কিছুক্ষণ পর রীণা আবার মি: আশরাফের কেবিনে গেল।
---স্যার কোনভাবেই ব্যপারটা আমার মাথা থেকে সরাতে পারছি না।
---কোন ব্যাপারটা?
---আমার বোনকে খুন করা হয়েছে। আপনি আমার ভেতরে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
---আমার দুর্ভাগ্য যে আপনার মাথায় সন্দেহটা ঢুকাতে হল। মাথায় যদি এতটুকু ঘিলু থাকতো তাহলে আর সন্দেহ ঢুকাতে হত না। এমনি বুঝতে পারতেন।
রীণার খুব রাগ হল। কেটে কেটে বলল,
---- আমার মাথায় যদি কিছুই না থাকে তো আমাকে কাজে রেখেছেন কেন।
---কাজটা আপনাকে ছাড়া হবে না তাই রেখেছি। নয়তো কোন দুঃখে আপনার মত বুদ্ধির ঢেকিকে কাজে রাখবো বলেন।
---স্যার, আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।
রাগে লাল হয়ে রীণা বলল।
---যাক অপমানটা বোঝার বুদ্ধি অন্তত আছে। আমি ভেবেছিলাম ঐটাও বুঝি নাই।
রীণা চুপ করে বসে থাকে। ভীষণ রাগ হচ্ছিল ওর তখন। এই লোকটাকে একটুও বুঝতে পারে না ও। কোন ভদ্রতা জ্ঞান নেই এই লোকটার। একটি মেয়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা এই লোক জানে না। যেন অসভ্য আদিম একটা মানুষ। রীণা মনে মনে মি: আশরাফেের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলো।

---দাঁত কটমট করে আমাকে গালিগালাজ করে কোন লাভ হবে না। এবার কাজের কথায় আসুন। সন্দেহটা কি দূর করতে চান নাকি মনের মধ্যে রেখে দুধ কলা দিয়ে পোষার ইচ্ছা পোষণ করছেন?
রীণা মুখটা কালো করে বলল,
---দূর করতে চাই।
---তাহলে ঐ বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হোন। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। বরং সন্দেহটা অমূলক কি না সেটা বুঝতে পারবেন।
কিন্তু এই বাড়িতে এসে তেমন কোন লাভ হয়েছে বলে রীণার মনে হয় না। ওর সন্দেহটা যেখানে ছিল সেখানেই থেমে আছে। সন্দেহের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো যুক্তিই ও দাঁড় করাতে পারছে। বরং এখানে এসে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। সবকিছু কেমন যেন বদলে গেছে। বিশেষ করে তিতলিটা কেমন জানি হয়ে গেছে। তিতলিকে এরকম দেখে গিয়ে মনটা স্বস্তিতে থাকবে না রীণার।

নয়

তিতলিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ ধরে হাঁটছিল রীণা। বুকটা ভারী হয়ে আছে। চোখের কোণে জলের দাগ স্পষ্ট। মেয়েটা কিছুতেই আসতে দিতে চাইছিল না। শক্ত করে ধরে রেখেছিল হাতটা। জল ছিল না চোখে। কিন্তু ছিল একটা বোবা কান্না। বেচারী কাঁদতেও জানে না। ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল রীণার। বড় অসহায় লাগছিল তিতলিকে। বড় অসহায় বোধ করছিল রীণাও। এতিমের মত তাকিয়ে রয়েছিল তিতলি ওর দিকে। মন কেবলই বলছিল ভাল নেই তিতলি। ও যেন একটা জীবন্ত লাশ হয়ে পড়ে আছে ঐ বাড়িতে। ইচ্ছে করছিল ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু সে তো সম্ভব নয়।

তানির চোখে তিতলির জন্য কোন মমতার ছায়া দেখেনি রীণা। আর আবীর তো কেমন যেন উদ্ভ্রান্ত। কী যেন এক ভীতি তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছে ওকে। কী যেন এক অপরাধবোধ দুটি চোখে। রীণা লক্ষ্য করেছে ওর চোখে চোখ রেখে একবারও কথা বলেনি আবীর। কী গোপন করতে চায় আবীর? তবে কি মি: আশরাফের কথাই ঠিক। নাহ, এটা হয়তো তানিকে বিয়ে করার অপরাধবোধ। আবীর দীনাকে কতটা ভালবাসতো সেটা রীণা দেখেছে। তাই ভালোবাসার মানুষকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে নিয়ে দিব্যি ঘর করছে, সেই লজ্জাও তো হতে পারে এটা। এজন্যই দীনার বোনের সামনে সে স্বাভাবিক থাকতে পারছে না। আবীরকে অপরাধী ভাবতে কিছুতেই রীণার মন সায় দিচ্ছিল না। অনেক ভাবল ও। কিন্তু ভেবে কোন কূল কিনারা পেল না। এও বুঝতে পারছে না কেন মি: আশরাফ ওর বোনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে চান। এতে উনার কী লাভ?

হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো রীণার সামনে। রীণা চমকে উঠলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×