somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসনা ছুরি - ১১

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব - Click This Link



---আবীর সাহেব আপনার বাড়ির ঐ চাতালটা ভাঙতে হবে।
আবীরকে কেউ যেনো প্রচণ্ড জোরে একটা থাপ্পর মারলো। ওর সমস্ত মুখ কালো হয়ে গেলো। বিস্ময়ের সাথে বলল,
---কী বলছেন এসব আপনি? একজন ভদ্রলোকের বাড়িতে এসে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না। এ রকম কোন আইন নেই।
---আইন মেনেই আমরা এসেছি। আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন।
আবীর একটু সময় কিছু ভাবলো। তারপর বলল,
---একটু অপেক্ষা করুন। আমি একটা ফোন করে নেই।
---কোন লাভ হবে না। এই কেইস পত্রিকা পর্যন্ত চলে গেছে। ফলাও করে প্রতিদিন খবর ছাপা হচ্ছে। উপরতলার কেউ এখন আর আপনার হেল্প করতে পারবে না।
আবীরের মুখটা চুপসে গেলো। পুলিশ চাতালটা ভাঙা শুরু করলো। আবীর মুখটা অন্ধকার করে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।


তিতলি অবাক হয়ে সব কিছু প্রত্যক্ষ করছিল। ও বুঝতে পারছিলো সিরিয়াস একটা কিছু হয়েছে। সারা বাড়ি পুলিশে গিজগিজ করছে। ওর প্রিয় চাতালটা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। হঠাৎ ওর রীণার কথা মনে পড়লো। খুব বেশি মন খারাপ হলে রীণাকে ফোন দেয় ও চুপিচুপি। কেউ জানতেও পারে না। সবাই ওরা আজকাল কী সব নিয়ে জানি ব্যস্ত। তিতলির দিকে নজর দেয়ার সময় নেই কারো। তাতে অবশ্য তিতলির ভালই হয়েছে। ও ইচ্ছে মত ফোন দিয়ে তুতন আর রীণার সাথে কথা বলতে পারে। গলাটা নামিয়ে খুবই আস্তে আস্তে কথা বলে ও। কেউ বুঝতেও পারে না ও কার সাথে কথা বলছে। তানি হয়তো ভাবে তিতলি তুতনের সাথে কথা বলছে। তানি যে রীণাকে পছন্দ করে না তা তিতলি খুব ভাল বুঝতে পারে। তাই রীণার সাথে কথা বলার সময় খুব সাবধানে কথা বলে ও। রীণাকে ফোন করলো,

---তুলতুলি সোনা কেমন আছিস তুই?
---ভাল না একদম।
---কেন রে কী হয়েছে?
---জানো খালামনি আমাদের বাসায় না অনেক পুলিশ এসেছে। আমার চাতালটা ওরা ভেঙে ফেলছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল তিতলি। রীণার খুব খারাপ লাগছিল তিতলির জন্য। ঐ চাতালটা ওর ভীষণ প্রিয়। ও তিতলিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
---মন খারাপ করিস না। তোর জন্য আরো সুন্দর চাতাল বানিয়ে দেবো দেখিস। তুই আজ স্কুলে যাসনি?
---না। বাবাই আজ স্কুল যেতে মানা করলো। তুতনটার সাথে আজ দেখা হলো না। আজ না মন খারাপের দিন খালামনি। সব মন খারাপের কাণ্ড ঘটছে আজ।
---এক কাজ কর না, তুতনকে ফোন করে কথা বলে নে।
---কী করে বলব? তুতন তো এখন স্কুলে।
---হ্যাঁ তাই তো। আচ্ছা তুই আমার সাথেই কথা বল।
তারপর একটু থেমে রীণা আবার বলল,
---আচ্ছা, কখনও যদি এমন হয়, তোকে আমার কাছে এসে থাকতে হয়, তুই থাকতে পারবি?
---ওমা, কেন পারব না? তোমার সাথে থাকলে আমার কী যে খুশি লাগবে! কত্ত মজা হবে।
---তোর বাবা মাকে যদি ছেড়ে আসতে হয়, তোর কি ওদের জন্য খারাপ লাগবে?
তিতলি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভেবে উত্তর দেয়,
---না খালামনি, আমার একটুও খারাপ লাগবে না। আমার তো ওদের সাথে থাকতেই খারাপ লাগে। আমি তো ঐ পাখিগুলোকে বলি আমাকে দুটি ডানা দিতে যাতে আমি উড়ে চলে যেতে পারি ওদের থেকে অনেক দূরে।

রীণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেয়েটার মনে আবীর আর তানির জন্য এত বিতৃষ্ণা জমে আছে! দিনের পর দিন এই বিতৃষ্ণা বুকে নিয়ে মেয়েটি বেঁচে আছে। তিতলির জন্য মনটা হুহু করে কেঁদে ওঠে রীণার।



রওশন আরা সব শুনে ছটফট করছিলেন। তানির হাত পা কাঁপছিল। আবীর এসে ভেতরে ঢুকতেই তানি ছুটে এলো ওর কাছে। রওশন আরাও আসলেন পেছন পেছন। এসে বললেন,
---চলো আমরা পালিয়ে যাই।
তানি বলল,
---এখন কী হবে?
---শান্ত থাকো। কিছু হবে না।
ভেতরে ভেতরে ভয় গ্রাস করলেও আবীর শান্ত ভাবে কথাটা বলল। খোঁড়াখুঁড়ি শেষ করতে অনেক সময় লাগলো। বাইরে ডাক পড়লো আবীরের।
বজলুর রশীদ আবীরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
---আবীর সাহেব চাতালটা খুঁড়ে একটা কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এখন আপনি কী বলবেন?
আবীর অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
---কঙ্কাল! কী বলছেন এসব?
---ওটা কার কঙ্কাল মি: আবীর?
---ওটা কার কঙ্কাল আমি কী করে বলবো?
--আপনার বাড়িতে কঙ্কাল পাওয়া গেছে আর আপনি জানেন না ওটা কার কঙ্কাল?
যদিও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তবু একটু হাসার চেষ্টা করে আবীর বলল,
---এই বুদ্ধি নিয়ে পুলিশ কী করে হলেন অফিসার? নাকি পুলিশদের মাথাতে ঘিলু একটু কমই থাকে?
---পুলিশ কী করে হলাম সেই চিন্তা করতে হবে না আপনার। বরং নিজের চিন্তা করুন। ফাঁসির দড়ি তো নাকের ডগায় ঝুলছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আপনার গ্লাসের পাওয়ার বাড়াতে হবে দেখছি।

---শুনুন, আমি এই বাড়িতে চার বছর আগে এসেছি। তার আগে হয়তো এখানে কাউকে কবর দেওয়া হয়েছিল। আশ্চর্য এই সাধারণ ব্যাপার আপনাদের মাথায় ঢুকছে না কেন?

---বাহ! খুব সুন্দর যুক্তি বের করেছেন তো! কিন্তু আপনি এত ঘামছেন কেন আবীর সাহেব। আপনি কোন অপরাধ না করলে আপনার তো এত নার্ভাস হওয়ার কথা না।

আবীর তাড়াতাড়ি কপালের ঘামটা মুছে নিয়ে বলল,
---আমার বাড়িতে একটা মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। তার উপর আপনি এমন ভাবে জেরা করছেন যেন আমিই খুন করে কাউকে এখানে পুতে রেখেছি। এই অবস্থায় যেকোন সাধারণ মানুষই নার্ভাস হয়ে পড়বে, সে অপরাধ করুক আর নাই করুক।
---আপনি সত্যি বলছেন না মিথ্যে তা প্রমাণ করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। এটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। আচ্ছা আমরা কঙ্কালটা নিয়ে যাচ্ছি।
---কঙ্কালটা নিয়ে গিয়ে কী হবে?
---বা রে! কঙ্কালটার রহস্য বের করতে হবে না? পোস্ট মর্টেম হবে। কত বছর আগে মৃত্যুটা হয়েছে তাও বের করতে হবে। ভয় পাচ্ছেন?
---নাহ! ভয় পাবো কেন? আমরাও জানতে চাই কঙ্কালটা কার?
কাঁপা কাঁপা গলায় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল আবীর। বজলুর রশীদ একগাল হেসে বললেন,
---একটু অপেক্ষা করুন। বেরিয়ে আসবে।
---আমি বেশ বুঝতে পারছি কারো প্ররোচনায় আপনারা আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছেন। তিন চার বছর আগেও যদি ঐ মানুষটার মৃত্যু হয়ে থাকে তাতেও কিন্তু আপনারা আমাকে ফাঁসাতে পারবেন না।
---আপনাকে ফাঁসানোর তো কোন দরকার নেই আবীর সাহেব। সত্য এমন এক জিনিস শত চেষ্টায়ও একে গোপণ করা যায় না। আজ হোক কাল হোক ঠিকই একদিন নিজের পথ করে সে বেরিয়ে আসে। আর শুনুন, এখন থেকে আপনারা সবাই চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের নজরবন্দী থাকবেন। কোথাও যেতে হলে আমাদেরকে আগে জানাতে হবে।


পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবীর, তানি ও রওশন আরা মুখ অন্ধকার করে বসে রয়েছেন। অনেকক্ষণ কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না। ঘরে যেন পিন পতন নিরবতা। সবার বুকের মধ্যেই আতঙ্কের ঘণ্টা ঢং ঢং করে বাজছে। এতদিন আগে করা একটি অপরাধ এভাবে অকস্মাৎ ওদের মরণবার্তা হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, এটা ওরা কল্পনাও করতে পারেনি। হঠাৎ নিরবতা ভঙ্গ করে আবীর বলে উঠলো,

---ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঐ বুড়িটাই ভয়ের কারণ ছিল। কিন্তু ঐ বুড়িকে আমি সরিয়ে ফেলেছি।
যেন নিজেকেই সান্ত্বনা দিলো আবীর। তানি বলল,

---কিন্তু ও কাজটা ঠিক মত করেছে তো? আমার কোন কিছু ভাল ঠেকছে না। ধরা পরে যাবো না তো? পালানোরও তো আর কোনো উপায় নেই।
---করেছে। না হলে বুড়িকে দেখা যেতো। দেখছো না দুদিন ধরে বুড়ির কোন খবর নেই।
---তারপরেও তুমি একবার নিশ্চিত হও।
আবীর ফোন বের করে একটা নাম্বারে কল দিলো।
---কাজটা হয়েছে?
---কী বললে? খুঁজে পাচ্ছ না?
---এই কথাটা আমাকে আগে জানাতে পারলে না? টাকা খেয়ে তো দিব্যি বসে আছ।
---চেষ্টা করছ। চেষ্টা দিয়ে আমি কী করবো। অকর্মার ঢেকি কোথাকার।
---তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করো। আজকের মধ্যেই।
ফোনটা রেখে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো আবীর। তানি যেন চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো। রওশন আরা বিলাপ করতে লাগলেন।


উনিশ

---কঙ্কাল! ওটা কার কঙ্কাল?
রীণা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো। রীণাকে সাথে নিয়ে মি: আশরাফ থানায় এসেছেন। ফোনে এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হবে না তাই বজলুর রশীদ ওদেরকে থানায় ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রীণার মনে হয়েছিল চাতাল ভেঙে কোন লাভ হবে না। একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে যা মনে এসেছে তাই এঁকেছে। এর সাথে এই রহস্যের হয়তো সম্পর্ক নেই। কী ই বা থাকতে পারে ঐ চাতেলের নিচে। কিন্তু বজলুর রশীদেের মুখে কঙ্কালটার কথা শুনে ও যার পর নাই বিস্মিত হলো।

---এখনো বুঝতে পারছি না। আপনার বোনকে তো কবরস্থানে কবর দেয়া হয়েছে। তাহলে এটা কার লাশ? কঙ্কালটাকে পোস্ট মর্টেম করতে পাঠানো হয়েছে। কতদিন আগে এর মৃত্যু হয়েছে এটা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে অনেক কিছু বোঝা যাবে।
---তাতেও কোন সুরাহা হবে না।
বলে উঠলেন মি: আশরাফ।
---কারণ তাতেও কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান পাওয়া যাবে না ওদের অ্যারেস্ট করার মত। খুনটা যদি তিন বৎসর আগেও হয়ে থাকে তাতেও প্রমাণ হয়না খুনটা ওরা করেছে।
রীণা বলল,
---কিন্তু এই লাশটা কার তাই তো আমার মাথায় ঢুকছে না। এমনও তো হতে পারে এটা অনেক আগের। ওরা এই বাসাতে আসার আগে কাউকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছিল।
---মি: আবীরও তাই বলছিলেন। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। চাতালটা খোঁড়া হবে শুনে উনি যেভাবে রিঅ্যাক্ট করেছেন তাতে মনে হচ্ছে খুনটার সাথে উনি জড়িত।
মি: আশরাফ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
---হয়তো লাশটা কার তা আমি জানি।
---কার লাশ আপনি জানেন?
---আপনি জানেন?
বজলুর রশীদ ও রীণার কণ্ঠে বিস্ময়ের সুর।
---হ্যাঁ
---কার?
---কুলসুমের।
---কুলসুম? কুলসুম কে?
---কুলসুম হলো ঐ বুড়ির নাতিন। কুলসুম ঐ বাড়িতে কাজ করতো। কুলসুমের স্বামী ওকে ছেড়ে দেওয়ায় দীনার মৃত্যুর মাস খানেক আগে কুলসুমের নানি মানে ঐ বুড়ি কুলসুমকে ঐ বাড়িতে কাজের জন্য এনে দেয়। যেদিন দীনার মৃত্যু হয় ঐদিন থেকে কুলসুমও নিখোঁজ। আর এই কারনেই আমার সন্দেহ হয় দীনা আত্মহত্যা করেনি। ওকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেটা কোনভাবে জেনে যাওয়ায় কুলসুমকেও হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না তাই কিছু বলতেও পারছিলাম না। আজ এই কঙ্কাল পাওয়ায় এখন আমি নিশ্চিত বলতে পারি ঐদিন একটি নয় দুটো খুন হয়েছে।
রীণা চোখে রাজ্যের বিস্ময়। বজলুর রশীদ সপ্রশংস দৃষ্টিতে হেসে বললেন,
---আপনি তো ভাই একটা জিনিয়াস। আপনার তো ডিটেক্টিভ হওয়া উচিৎ ছিল।
মি: আশরাফ হেসে বললেন,
---এখনো পুরোপুরি নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। এর জন্য কঙ্কালটার আর ঐ বুড়ির ডি এন এ টেস্ট করতে হবে। তাহলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
---হুম। ঠিক বলেছেন। কিন্তু বুড়িকে কোথায় পাওয়া যাবে?
---বুড়ি আমার কাছে আছে। আমি ওকে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। কারণ ওরা বাঁচার জন্য যেকোন কিছু করতে পারে। আমি নিশ্চিত ঐ বুড়িকে এখন ওরা মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে। আমি তার আগেই বুড়িকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি।

রীণা অবাক চোখে শুধু তাকিয়েই রইল । ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। বজলুর রশীদ বললেন,

---বাহ! বেশ একটা কাজের কাজ করেছেন মশাই! কিন্তু সমস্যা হলো, ডি এন এ টেস্ট সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এতদিন ওদেরকে এভাবে ছেড়ে রাখা ঠিক না। ওরা এখন বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। জানেন তো জখমি বাঘ খুবই ভয়ঙ্কর হয়। আপনাদের বিশেষ করে মিস রীণা ও তার পরিবারের জন্য এখন বিপজ্জনক সময়। আমার মনে হয় যে প্রমাণ আমরা পেয়েছি সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ওদের উপর এখন খুনের মামলা করা যায়। এতে ওদেরকে অ্যারেস্ট করে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এগুলো করতে সময় লাগবে। মানে ততদিন ওদেরকে জেলে আটকে রাখা যাবে। এর মধ্যে ডি এন এ টেস্টের রিপোর্টও হাতে এসে যাবে। হয়তো ওদের মুখ থেকেও অনেক কথা তখন বের করে আনা যাবে। আর এই সময়টা ওরা জেলে থাকলে আপনাদের উপর বিপদের আশঙ্কাটাও কমে আসবে।

মি: আশরাফ বললেন,
---তাহলে এখন আমাদের করণীয় কী?
---বুঝাই যাচ্ছে ওরা তিন জনই মিলে কাজটা করেছে। ওদের তিন জনকে আসামি করে মিস রীণা এবং ঐ বুড়ি আলাদা আলাদা দুটি খুনের মামলা করবেন। তার আগে বুড়ির সম্পুর্ণ জবানবন্দী নেয়া দরকার।

বিশ

আকাশে যেমন পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ এসে জড়ো হয়ে, হঠাৎই আকাশটাকে কালো করে ছেয়ে ফেলে, অপেক্ষা করতে থাকে বৃষ্টি হয়ে গলে পড়ার, ঠিক তেমনি পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতেই কোথা থেকে পুঞ্জ পুঞ্জ অভিমান এসে জড়ো হতে থাকলো রীণার মনে। মনটা ভারী হয়ে উঠেছে ভীষণ। এখনি অভিমানগুলো কান্না হয়ে গলে গলে পড়বে। আর সেটা যদি হয় তবে সে হবে বড় লজ্জার। রীণা এটা কিছুতেই হতে দিতে পারে না। সে কিছুতেই চোখে জল আসতে দিবে না। বড় কষ্টে কান্নাটাকে গিলে চলেছে ও। জানালার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে আছে। মি: আশরাফ ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,

---কী ব্যাপার চুপ করে আছ যে?

কথাটা কানে যেতেই আর পারলো না রীণা। সব মেঘ বৃষ্টি হয়ে গেলো। সব অভিমান কান্না হয়ে গলে গলে পড়তে লাগলো। আর রীণা তখন অভিমান ভুলে গিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো ছি, ছি কী লজ্জা! কী লজ্জা! রীণার চোখে জলের ধারা দেখে তাড়াতাড়ি গাড়িটাকে সাইড করে থামালেন মি: আশরাফ। উদগ্রীব হয়ে রীণার হাতে হাতটা রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
---আরে আরে এই মেয়ে তুমি কাঁদছ কেন? ভয় পেয়েছ? আরে ভয়ের কিছু নেই। আমি আছি না। আমি তোমাদের সবাইকে প্রোটেক্ট করবো।
রীণা কোন রকমে কান্না থামালো ঠিকই কিন্তু আরো একরাশ লজ্জা এসে জড়ো হলো মনের কোণে। মি: আশরাফ ওর হাতে হাত রেখেছেন। কান্না ভুলে গিয়ে মনটা এবার এক অদ্ভুত ভাল লাগায় টালমাটাল হয়ে উঠলো। একই সাথে লজ্জাও হচ্ছে ভীষণ। হঠাৎই করে বসা এই ছেলেমানুষীর লজ্জা। সেই লজ্জার সাথে যোগ হয়েছে মি: আশরাফের এই সস্নেহ স্পর্শের লজ্জা। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে টকটক করছে। যেন এখনই সব রঙ ছিটকে পড়বে গাল থেকে। কী যে হলো আজ ওর? তুচ্ছ একটা ব্যাপার নিয়ে ছেলেমানুষের মত কান্নার কোনো দরকার ছিল! বোকা কোথাকার! রীণা নিজেই নিজেকে ভর্ৎসনা করলো। চোখের জল মুছে কোনরকমে বলল,
---কিছু না স্যার। এমনি।
---এমনি এমনি কেউ কাঁদে নাকি? তুমি তো কত সাহসী মেয়ে। ভয় পেয়ে কাঁদার মেয়ে তো তুমি নও।
---না না ভয় পাইনি স্যার। আপনি চলুন। আমি ঠিক আছি।
---না। আগে বলো তুমি কাঁদছিলে কেন? নইলে আমি এখান থেকে নড়ছি না।
কী যে ঝামেলায় পড়া গেলো। কী করে বলে ও, কেন কাঁদছিল? সে কী বলা যায়! তুচ্ছ একটা ব্যাপার নিয়ে ও কাঁদছিলো। সেটা বলা যে বড় লজ্জার বিষয়! কিন্তু মি: আশরাফের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তিনি না শুনে কিছুতেই যাবেন না। শেষ পর্যন্ত রীণা হার মানে। মাথাটা নিচু করে কোন রকমে বলে,
---আপনি কুলসুমের কথা আমাকে আগে কেন বললেন না? তারপর বুড়িকে তুলে এনে নিরাপদে রেখেছেন এসব কিছুই আপনি আমাকে বলেন নি। তাই একটু অভিমান হয়েছিল। সেই অভিমানই কান্না হয়ে গেলো।
---হা হা হা হা।
মি: আশরাফ রীণার কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। রীণার নাক কান মুখ লজ্জায় লাল হয়ে ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলো। মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো। মি: আশরাফ কোন রকমে হাসি থামিয়ে বললেন,
---আহ! অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসলাম। তোমাকে ধন্যবাদ অভিমানটা করায়। না হলে এমন হাসি হাসতে পারতাম না।
রীণা মুখ নিচু করে বসে আছে। কিছুতেই মুখ তুলে তাকাতে পারছে না ও।
---আরে বোকা মেয়ে, এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে বুঝি কাঁদতে হয়। ওগুলো আমি তোমাকে আগে বলিনি কারণ আগে আমি ব্যাপারটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। এবার মুখটা তোল তো। কান্না থামিয়ে এবার তোমার ঐ মোহনীয় হাসিটা দাও। তুমি কি জানো তোমার ঐ হাসি মোনালিসাকেও হার মানায়?
শিরায় শিরায় রক্ত কেন যে টগবগ করে নাচতে লাগলো! কেন যে ঐ দুটো কথা কানে মধু ঢালতে লাগলো! কেন যে ঐ মানুষটা বার বার ওকে আকুল করে তোলে! ভেসে যেতে ইচ্ছে করে রীণার। মনের ভেতর কে যেন গুন গুন করে গেয়ে উঠলো,"আমার শুধু ইচ্ছে করে সঙ্গে ভেসে যেতে, ভাসতে ভাসতে সবটা নদী বুকের কাছে পেতে।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৪৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×