ছেলেটার নাম গাজন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সদ্য জয়েন করেছে। ১৮ মাসের লম্বা ট্রেনিং। একদিন রাতের বেলা কোথাও ডিউটি করার সময় বানরের আক্রমনের শিকার হল। এমনিতে বাচ্চা ছেলে, তার উপর এখানে একেবারেই নতুন। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঠাশ করে গুলি করে দিল। গুলির শব্দে চারদিক থেকে সবাই দৌড়ে এলো। কি ব্যাপার গুলি কেন? ও আচ্ছা বানর। ও কিছুনা, আমাদের এখানে এটা প্রায়ই হয়ে থাকে এবং বানর কাউকে আঘাত করেনা। অতএব ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যা-ই হোক তোমাকে একটা রিপোর্ট করতে হবে কি কারণে তুমি একটা গুলি খরচ করেছ। রিপোর্ট হতে হবে ইংরেজিতে এবং এ ক্ষেত্রে কারো সাহায্য নেওয়া যাবেনা। বেচারা গাজন পড়ল মহা সমস্যায়। সদ্যই এস এস সি পাস করে মফস্বল থেকে আসা একটা ছেলে আর কতটুকুই ইংরেজি জানে। তবু ও লিখতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। রিপোর্ট লেখা শুরু হল.।
Monkey attack, Gajon fire
Monkey safe, Gajon safe
1 bullet lost
অভিনব এই রিপোর্ট নিয়ে চারদিকে যখন হাসির রোল পড়েছে, গাজনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন এজন্য যে, অল্প পুজি নিয়ে এর চেয়ে সুন্দর এবং ভাল রিপোর্ট আর কেউ লিখতে পেরেছে কি না আমার জানা নেই। এইদিক থেকে গাজন অনেক বড় একটা কাজ করেছে।
বর্তমান মহাজোট সরকার মন্ত্রিসভা গঠন করার পর অনেকেই বলেছিলেন ‘কচি-কাচার মেলা। আবার অনেকেই এ ও বলেছিলেন, আমাদের দেশে দুর্নীতি যে পর্যায়ে গেছে তাতে একজন যোগ্য প্রবীণ কিন্তু দুর্নীতিবাজ মন্ত্রি’র চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য কিন্তু ভাল মানুষ মন্ত্রী অনেক বেশি দরকার। দুর্নীতি’র কারণে যে পরিমান অপচয় হয়, একজনের অযোগ্যতার কারণে এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না। গাজনের মত কম বুদ্ধি নিয়ে আমরা কেউ কেউ বলেছিলাম, এই কম যোগ্যতাসম্পন্ন মন্ত্রীরাই যদি ভবিষ্যতে দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠে! দেশ তখন কোন পর্যায়ে থাকবে।
দেশ এখন কোন পর্যায়ে আছে সেটা সবাই যানে। মাঝে মাঝে কি মনে হয়না আমাদের অতি আদরের বুড়োরাই তো ভাল ছিল। অন্তত চাঁদে গিয়ে জমি কেনার চিন্তা ওরা করতে পারতনা। অনলাইন মানি বুকারস কোম্পানিতে কিভাবে ডিজিটাল মানি রাখতে হয় এইটা ছিল ওদের কল্পনার ও অতীত। বড়জোর একটা দুইটা দেশীয় দুর্নীতিই ছিল এদের সর্বচ্চ দৌড়। বিশ্বব্যাংক কে বোকা বানাবে কিভাবে। আর বাবুল ভাই’র বিখ্যাত সেই ডায়লগ কে না জানে,
“আমরা আর্মি ডরাই না, দারোয়ান ডরাই। আর্মি বুঝে শুনে গুলি করবে হাঁটুর নীচে, আর দারোয়ান কিছু না বুঝেই মারবে চোখ বরাবর।“
যে যেটা ভাল জানে তাকে দিয়েই সেটা করানো উচিত। তাহলে অন্তত সর্বচ্চমাত্রার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
রাজনীতিবিদ যদি দুর্নীতিবাজ ও হয়, তার একটা লিমিট থাকে। এর প্রমান আমরা অতীতে ও পেয়েছি অনেক। বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ বলে চিহ্নিত সাবেক স্বৈরশাসকরাই। এর কারন ও আছে। এরা নিজেরাই জানে এরা অবৈধ, আর তদেরকে টিকে থাকতে হলে দরকার প্রচুর জনসমর্থন। আমাদের মত দেশে যেখানে শিক্ষার হার কিছুদিন আগে ছিল করুন অবস্থায়, সেখানে জনগনের বড় অংশটাকে কিভাবে তাদের পক্ষে আনা যায় সেই কাজটাই গর্হিতপথে তারা করে গেছেন এবং দেশের বারটা বাজিয়ে গেছেন অবলীলায়, যে কাজটা রাজনীতিবিদরা কখনো করার চিন্তা ও করেন নাই। আজকে যে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১ নম্বর, ২ নম্বর হয় এটা ও উনাদেরই অবদান। উনারা এত সুন্দর একটা শুরু করে দিয়েছিলেন বলেই মিডল অর্ডারে ঝানু রাজনীতিবিদরা ভাল ইনিংস খেলতে পেরেছেন, এবং বর্তমানে টেল এন্ড মানেই ‘অল রাউন্দার’। এরা ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী। এরা দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুবই ভাল করছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে চোর-পুলিশ খেলছে এবং দেশের আরও বারটা বাজাচ্ছে। আর অধিনায়ক, আম্পায়ার মিলে তাদেরকে বিপুল উতসাহ ও দিয়ে যাচ্ছে। আর বিপক্ষ দলের অধিনায়কের(নাকি অধিনায়িকা) হাত নিশপিশ করছে তার খেলার দিনে তিনি কিভাবে এই কাজটা আরও সুচারুভাবে করবেন।
বানর দিয়ে শুরু করা লেখাটা বানর দিয়ে শেষ না করলে মহামান্য বানরের প্রতি অবিচার করা হবে। আফটার অল আমাদের পূর্বপুরুষ বলে কথা।
ভদ্রলোক টুপি বিক্রির ব্যবসা করত। প্রতিদিন মাথায় একটা টুকরিতে করে সব টুপি নিয়ে বাড়ি ফিরত। একদিন রাস্তায় বানরের দল তার সব টুপি কেড়ে নিয়ে গাছে উঠে বসে রইল। অনেক কাকতি-মিনতি করে ও যখন দেখল বানর কিছুতেই তার টুপি ফেরত দিবেনা, তখন সে সেই চিরায়ত পদ্ধতি অবলম্বন করল। সে জানত বানরকে কোন কিছু দিয়ে ঢিল দিলে বানর সেই জিনিস দিয়েই আরও অনেক বেশি ঢিল ছুড়তে থাকে। সে তার পকেটে থাকা টুপিটা বের করে বানরকে ঢিল ছুড়তেই সব বানর দল বেঁধে তাদের সংগ্রহে থাকা টুপি দিয়ে মুহুর্মুহু ঢিল ছুড়তে থাকল। আর এভাবেই ভদ্রলোক তার সব টুপি ফেরত পেল।
ভদ্রলোকের ছিল এক ছেলে। সে তার ছেলেকে এই টুপির ব্যাবসাই শেখাল এবং বানরের কাছ থেকে কি ভাবে ছিনিয়ে নেয়া টুপি ফেরত আনতে হয় তা ও শিখিয়ে দিল। একদিন ভদ্রলোক মারা গেল এবং যথারীতি তার ছেলে তার টুপি ব্যাবসার হাল ধরল। ঘটনাক্রমে ছেলেটা ও একদিন বানরের আক্রমনের শিকার হল এবং বানরের দল তার সব টুপি ছিনিয়ে নিল। অনেক চেষ্টা করে ও সে যখন তার টুপি ফেরত আনতে পারলনা তখনই তার মনে পড়ল তার বাবার শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতির কথা। যথারীতি সে তার পকেটে থাকা টুপি দিয়ে সজোরে বানরের দলের উদ্যেশ্যে ঢিল ছুরে মারল। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করল বানরের দল তার দিকে কোন ঢিলই ছুড়ছে না। বরং বানরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে বানরটি অর্থাৎ দলের নেতা বানরটি গাছ থেকে নেমে তার দিকে আসছে। বানরটি তার সামনে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটা কিছু বুঝে উঠার আগেই বানরটা তার গালে ঠাশ করে একটা চড় মেরে বলল, “ তুই কি ভেবেছিস তোর বাবাই শুধু ওই গল্পটা বলে গেছে, আমাদের বাবারা আমাদের কিছুই বলে যায়নি?”
আমাদের নতুন প্রজন্ম কিন্তু দেশের ইতিহাস জানে। অতএব দরবেশ দিয়ে আর বেশিদিন চালিয়ে নেয়া যাবেনা। আর দরবেশের বিপরিতে যে ইমাম সাহেবরা আছেন? আপনারা ও খুশিতে আত্নহারা হওয়ার কোন কারন নেই। দেশে এখন গাজনরা তৈরি হচ্ছে।
বিশেষ দ্রস্তব্যঃ এখানে ‘দরবেশ’ এবং ‘ইমাম’ শব্দ দুটো আমাদের অতি সাম্প্রতিক প্রচলিত রাজনৈতিক অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


