somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২২ মাস বয়সী শিশুর পেটে যমজ সন্তান!

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা এর আগে এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে মাত্র একবার। দ্বিতীয়বারের মতো বিরল এ ঘটনার সাক্ষী হলেন চট্টগ্রামের কয়েকজন চিকিৎসক। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মাত্র ২২ মাস বয়সী এক শিশুর পেট থেকে অপারেশন করে বের করা হলো দুটি বাচ্চা! যাদের ওজন এক কেজি ৩০০ গ্রাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটু’ (ভ্রুণের ভেতর ভ্রুণ)। জটিল এ অপারেশনের পর অদিতি নামের শিশুটি এখন সুস্থ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ‘ফিটাস ইন ফিটু’ কেন ও কী কারণে হয় তা বিজ্ঞানীরা এখনো আবিষ্কার করতে পারেন নি। তবে বিশ্বে প্রতি ৫ লাখে একজন শিশুর পেটে এ জাতীয় সন্তানের ভ্রুণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর আগে ২০০৬ সালে পাকিস্তানে প্রথমবারের মত এক শিশুর পেটে এক সঙ্গে দুটি সন্তানের ভ্রুণের জন্ম হয়েছিল। সে হিসাবে অদিতি দে’র ঘটনাটি এক সঙ্গে দুটি সন্তান জন্ম নেয়ার দ্বিতীয় ঘটনা।
চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত যমজ শিশু মায়ের গর্ভাবস্থায় জটিল কোন কারণে একটি ভ্রুণের মধ্যে আরেকটি ভ্রুণ প্রবেশ করলে একটি ভ্রুণের স্বাভাবিক বিকাশ হলেও আরেকটির হয় না। অস্বাভাবিক ভ্রুণটি স্বাভাবিক ভ্রুণের মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ করে। এতে স্বাভাবিক ভ্রুণটি মায়ের গর্ভ থেকে মানব শিশু হিসেবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে তার ভিতরে থাকা ভ্রুণের কারণে দুর্বল হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অদিতির মায়ের পেটে তিনটি সন্তানের ভ্রুণ তৈরি হয়। এর মধ্যে দুটি ভ্রুণ এ শিশুর পেটে চলে যায়। পরে এগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বে এটি কেন বা কী কারণে হয় তার কারণ এখনো উদঘাটন করতে পারেন নি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে শিশুর পেটে এক শিশু জন্ম নিলেও এক সঙ্গে দুটি সন্তানের ভ্রুণ জন্ম নেয়ার ঘটনা বিশ্বে এটি দ্বিতীয়। এর আগে ২০০৬ সালে পাকিস্তানে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে।
এদিকে অদিতির পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারি উপজেলার কাটির হাট এলাকার নয়ন কুমার দে’র কন্যা অদিতি দে। পেট-ব্যথা এবং পেটে শক্ত কিছু অনুভব করায় অদিতিকে গত ২৩ অক্টোবর রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকগণ অদিতিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মেজবাউল হকের কাছে রেফার করেন। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অদিতির পেটে টিউমার হয়েছে মনে করে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে আল্ট্রাসোনোগ্রামের রিপোর্টে অদিতির পেটে হাড় ও মাথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপর বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নন্দন কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে গত শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটার সফল অপারেশনে শিশুর পেট থেকে বাচ্চা দুটি বের করা হয়। চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতালে সম্পন্ন জটিল এ অপারেশনে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন অধ্যাপক পান্না লাল সাহা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সত্যজিত ধর।
অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডা. নন্দন কুমার মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রথমে আমরা ধারণা করছিলাম অদিতির পেটে কিডনি টিউমার হয়েছে। পরে পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বড় চাকার মত গোলাকার কিছু একটার অবস্থান। আরো পরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা করে তার পেটে থাকা বাচ্চার হাড় ও মাথা দেখা যাওয়ায় আমরা অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরো জানান, এ ধরনের কেস হলো জন্মগত ত্রুটি। এটাকে প্যারাসাইটিক টুইন বা পরজীবী যমজের ঘটনাও বলা যেতে পারে।
এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, ৪০৭ নম্বর কক্ষে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে অদিতি দে। হাতে স্যালাইন, পেটে ব্যান্ডেজ। কিছুক্ষণ পর পর শিশুটিকে কান্না করতে দেখা যায়।
এ সময় অদিতির পাশে ছিল তার মা সুমি দে এবং বাবা নয়ন দে। অদিতির বাবা কাউখালী কলমপতি পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার নয়ন দে জানান, আমার মেয়ে তার দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছে। এ ধরনের একটি রোগ অপারেশনের মাধ্যমে হয় তা আমার মেয়ের ক্ষেত্রে না হলে বিশ্বাসই করতাম না। তিনি সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন করায় চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আরো কিছু ফিটাস ইন ফিটো’র ঘটনা: আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন জার্নাল থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে সর্বপ্রথম ‘ফিটাস ইন ফিটু’র ঘটনা ঘটে। তবে সেটি ছিল একটি শিশুর পেট থেকে অপারেশন করে আরেকটি শিশু বের করার ঘটনা। এছাড়া একইভাবে ২০০৭ সালে ফিলিপাইনে এবং ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশের রাজশাহীতে এমন ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বে ‘ফিটাস ইন ফিটুর’র মোট ৯০টি ঘটনা ঘটেছিল। তবে এর সবগুলোই ছিল একটি শিশুর পেট থেকে অপারেশন করে আরেকটি শিশু বের করার ঘটনা। একইসাথে এসব ঘটনার বেশিরভাগই রোগী ছিল ছেলে শিশু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে বাংলাদেশের রাজশাহী এবং বগুড়াতেও দুটি ফিটাস ইন ফিটুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রা.মে.ক) তিথি নামে ১০ মাসের এক শিশুর পেট থেকে একটি মৃত শিশু বের করা হয়। ওই সময় টিউমার ভেবে তিথির পেটে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে চিকিৎসকরা মৃত শিশু দেখতে পান। ঘটনাটি ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষ ঘটনা।
এর আগে ২০১১ সালে বগুড়ায় আবদুল মালেক নামে ৪০ বছর বয়সী এক পুরুষের পেটে সন্তানের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল চিকিৎসকরা। তবে এটি পরিপূর্ণ মানব শিশু ছিল না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নাগপুরে ১৯৯৯ সালে সঞ্জু ভগত (৩৬) নামের এক ব্যক্তির পেটে এ ধরনের মানব শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ২০১০ সালের মার্চ মাসে সাত বছর বয়সী একটি ছেলে শিশুর পেট থেকে অপারেশনের মাধ্যমে আরেকটি শিশু বের করার ঘটনা ঘটে। তবে পুরুষ শিশু বা ছেলের পেটে বাচ্চার অস্তিত্বকে চিকিৎসকরা ‘টেরাটোমা’ রোগ বলেই চিহ্নিত করেছেন।

সুত্র
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×