নতুন প্রেমে পড়েছেন কিন্তু সদ্য প্রেমে পরা প্রেমিকার মতিগতি ঠিক আন্দাজ করতে পারছেন না?
.
মোবাইলে যখন তখন প্রেমিকা'কে ফোন করলে লাইন বিজি দেখায়, ধরেও না! আবার কারণ জিজ্ঞেস করলে উল্টা পাল্টা উত্তর দেয়?
.
ডেটিং এর সময় চাইলে অনেক পরে টাইম দেয়? আবার ডেটিংয়ে আসলেও উড়ু উড়ু ভাব থাকে সারাক্ষণ?
.
আপনার সামনেই হুট করে অপরিচিত কারো ফোন কল এলে গলার টোন বদলে যায়? চোরা চোখে তাকিয়ে সামনে থেকে উঠে যায়?
.
এইধরণের পরিস্থিতি যদি আপনাকে নিয়মিত সহ্য করতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সেই প্রেমিকার পছন্দের তালিকায় এখন বেশ পিছনের দিকে খুব বিপদজনক অবস্থানে আছেন। এবং অতি সত্ত্বর ব্যবস্থা না নিলে এই প্রেমিকা চিরতরেই অন্যকারো হয়ে যাবার সমূহ সম্ভবনা আছে!
.
ভয় পেয়ে গেলেন?
টেনশন হচ্ছে?
মাথার চুল চুল্কাচ্ছেন?
কী করবেন এখন?
আচ্ছা আসলেই কি কোন উপায় আছে মেয়েকে একবারে নিজের কাছে নিয়ে আসতে?
.
জী, আছে। তবে সেটা একেবারেই সিস্টেমেটিক এপ্রোচে হতে হবে।
যদি এইধরণের ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে দিনাতিপাত করতে থাকেন তাহলে ধরে নিন আপনার জন্যই এই পোস্ট লেখা হয়েছে।
.
নীচের লেখা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং কার্যক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন।
.
প্রথমেই আপনার প্রেমিকার মারাত্মক পছন্দের দামী কোন রেস্টুরেন্টের নাম যোগাড় করুন। যত দামী হবে তত বেশি সহজ হয়ে যাবে কাজটা।
.
এবার সময় এবং সুযোগ বুঝে তাকে কোন একটা ট্রীট দেয়ার নাম করে সেখানে দাওয়াত দিন। যদি সত্যই এই রেস্টুরেন্ট তার পছন্দের হয়ে থাকে তাহলে মেয়ে কোনভাবেই ইগনোর করতে পারবে না।
.
এরপরের কাজগুলি অবশ্যই সিরিয়াল ধরে করবেন। আগের কাজ পিছে কিংবা পিছের কাজ আগে হলে কিন্তু ভজঘট পাঁকিয়ে যাবে, সাবধান!
.
প্রেমিকা'কে নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে ঢুকেই আপনার মোবাইল থেকে সেখানে একটা চেক-ইন স্ট্যাটাস দিন ফেসবুকে। প্রথম স্টেপ শেষ!
.
এরপর খাবারের অর্ডারের দায়িত্ব সেই প্রেমিকাকে দিয়ে দিন। বিশাল একটা টাকা পয়সার ধাক্কা লাগার সমূহ সম্ভাবনা আছে। সুতরাং আগে থেকেই ভালোমতো প্রিপারেশন নিয়ে যাবেন। বড় কোন কিছু পেতে চাইলে অনেক ছোট ছোট জিনিসের মায়া ত্যাগ করতে হয়!
.
অর্ডার দেয়া শেষ হলেই, প্রেমিকার পাশে যেয়ে বসুন এবং কিছু বাছাই করা প্রেমের আবেগঘন ডায়ালগ দিন। (ডায়ালগের জন্য গুগল মামার সার্চ অপশন কাজে লাগান)। নিজের প্রেমিকা'কে কী বলতে হবে সেটাও কি আরেকজনের কাছে শিখতে চান?
.
পছন্দের রেস্টুরেন্টে আসা এবং নিজের পছন্দমতো অর্ডার দেয়ার কারণে এই প্রেমিকার মন কিছুটা হলেও এখন সফট থাকবে। এবার তার সাথে বেশ কয়েকটা পাশাপাশি (সুযোগ পেলে আবেগঘন/কাছাকাছি হলে আরো ভালো হয়) ছবি ঝটপট তুলে ফেলুন। পারলে প্রেমিকার মোবাইলেও কয়েকটা তুলে দিন। এই স্টেপ শেষ।
.
এরপর নেক্সট স্টেপ, আপনার প্রেমিকা কত সুন্দর দেখতে সেটা বারবার মনে করিয়ে দিয়ে শেষের দিকে তার দিকে কিছুটা ইতস্ততভাবে তাকিয়ে থাকবেন চুপ করে। সাথে সাথেই জানতে চাইবে ঘটনা কী? উত্তরে যা যা বলবেন তাহলোঃ
-তোমার মেকআপ আজকে কে করিয়ে দিয়েছে বলো তো? কিছু জায়গায় ঠিকমতো মেকআপই হয়নি। যে করে দিয়েছে সে মনে হয় খুব হিংসুটে। আজকে যেন তোমাকে বেশি সুন্দর না দেখায় তাই এইকাজ করেছে।
.
আশা করা যায় এতেই সাময়িক কাজ হয়ে যাবে। নিশ্চিত থাকুন প্রেমিকা নিজে মেকআপ করেছে এটা কিছুতেই স্বীকার করবে না অথবা বলবে আপনার ঠেলায় তাড়াহুড়ার করার জন্যই এই অবস্থা! হাসি মুখে নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে তাকে এখানেই কিছুটা ঠিক করে ফেলতে বলুন। মেয়েদের ভেনিটি ব্যাগ হচ্ছে ছোটখাট মিনি বিউটি পার্লার। আপনার প্রেমিকা ডেটিংয়ে এসেছে কিন্তু সাথে সাঁজুগুঁজুর কিছুই আনেনি সেটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার!
.
আপনার প্রেমিকা যখন মেকআপ ঠিক করা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে তখন ল্যাভেটরিতে যাবার কথা বলে উঠে আসুন!
.
বাথরুমে বসেই অতিদ্রুত প্রেমিকা'কে ট্যাগ করে একটা সেই রকম আবেগঘন স্ট্যাটাস সহ ক্লোজ কিছু ছবি দিয়ে একটা পোস্ট দিয়ে দিন। লোকেশন দেবেন সেই রেস্টুরেন্টে। তাড়াতাড়ি বের হয়ে প্রেমিকার কাছে চলে আসুন। মুখের মেকআপের সমস্যা নিয়ে একটার পর একটা খুব ছোট ছোট খুঁত ধরতে থাকুন (খবরদার বড় কোন খুঁত ধরবেন না, ডেটিং করার শখ কিন্তু জনমের মতো ছুটিয়ে দেবে আপনাকে!)। আগামী বেশ কিছুক্ষণ কোনভাবেই আপনার প্রেমিকাকে তার মোবাইল ফোনের ধারে কাছেও যেতে দিবেন না।
.
খাওয়া চলে আসলে তাকে সার্ভ করতে বলুন। খাবার সহ তার একটার পর একটা ছবি তুলতে থাকুন। মেয়েদের একবার ছবি তোলার মুড এসে গেলে সেটা অনেককক্ষণ থাকে। এটাকেই কাজে লাগান।
.
ত্রিশমিনিট তাকে মহাব্যস্ত রাখতে হবে আপনার, সেটা যেভাবেই হোক।
.
আশা করা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই যা হবার তাই হয়ে গেছে। আপনার প্রেমিকার সিরিয়ালের উপরের দিকে সব প্রেমিকের ততক্ষণে খবর হয়ে গেছে নিশ্চিত। ফোন দেয়া শুরু করে দেবে কিন্তু এখন আপনার প্রেমিকা ফটো তোলা এবং পছন্দের খাবার নিয়ে ব্যস্ত। এখন এইসব ছেলেদের ফোন এলেও লজ্জা এবং কৃতজ্ঞতাবশত ফোনকল কেটে দেবে, না হয় রিসিভ করেই ব্যস্ত আছি বলে কেটে দেবে। দ্বিতীয়টা হলে আপনার কপাল আরও খুলে যাবে।
.
সামনের রাস্তা এখন ফকফকা পরিষ্কার হতে কেবলই শুরু হয়েছে!
.
খাবার শেষ করে সেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসার কিছুক্ষণ পরে কোন আগাম সর্তকতা ছাড়াই যুদ্ধ বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে।
.
ভুলেও আপনার প্রেমিকা’কে বাসায় পৌছে দিয়ে আসার কোন প্ল্যান করবেন না। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই ভাগবেন, যত দ্রুত সম্ভব। নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিন।
.
আপনার প্রেমিকা শীঘ্রই টের পেয়ে যাবে কী ঘটনা ঘটে গেছে! কিন্তু ততক্ষণে আপনি হওয়া হয়ে গেছেন। মোবাইলে ফোন করেও পাবে না।
.
কমপক্ষে চার ঘন্টা পরে মোবাইল অন করেই প্রেমিকা’কে নিজেই ফোন দিন। মোবাইলে চার্জ শেষ গিয়েছিল দেখে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেটা জানাবেন প্রথমেই! এরপর আপনাকে যা ইচ্ছে বলুক, আপনি শুধুই চুপ করে শুনুন, প্রতিবাদ তো দূরের কথা, মুখই খুলবেন না।
মনে রাখবেন বোবার কোন শত্রু নেই! কোনকালেই ছিল না!
.
পোস্ট ডিলিট করার অনুরোধ আসলে সেই পোস্টের ভালো মতো স্ক্রিনশট তুলে কারা কারা মন্তব্য এবং ইমোজি দিয়েছে সেটারও ছবি তুলে রাখুন।
.
এরপর সেই পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে অতিশয় ভদ্র ছেলের মতো ফোন দিয়ে সেটা প্রেমিকা জানিয়ে দিন। তার কাছে অবশ্যই ধন্যবাদ দাবী করুন। গালি গালাজ করলেও এই দাবী ছাড়বেন না। তাকে বলবেন শুধু সে বলেছে দেখেই এই পোস্ট আপনি ডিলিট করেছেন, সারা পৃথিবীর অন্য যে কেউ বললেও আপনি এটা করতেন না। ফোন কল আপনার প্রেমিকা না কাটা পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করুন।
.
এইবার আপনার অপেক্ষার পালা।
.
আপনার প্রেমিকা একের পর এক ভিসুভিয়াস, কিলিমাঞ্জারো ইত্যাদির সমান আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থামাতে রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে যাবে। তখন আপনিই হবেন তার একান্তই পাশে থাকার মানুষ।
.
সিরিয়ালে উপরের দিকে যারা ছিল তারা ভালোমতোই খোঁজ নেবে আপনার প্রোফাইলে। এই জন্যই প্রথমেই রেস্টুরেন্টে চেক-ইন দিতে বলেছিলাম। এখন ইনভেস্টমেন্টের সময়। গুগল মামার সার্চ অপশন দিয়ে যেইসব আবেগঘন ডায়ালগ যোগাড় করেছিলেন সেইগুলি দিয়ে একটার পর একটা পোস্ট দিতে থাকুন।
.
লাস্ট স্টেপঃ-
দুর্দান্ত প্রেমের কবিতা ছাপা হয় এইরকম কোন সাইট ইন্টারনেটে আগেই খুঁজে বের করে রাখবেন। কমপক্ষে একশোর কবিতা দরকার আপনার (খবরদার কোন অশ্লীল বা নোংরা কিছু না, পিউর প্ল্যাটনিক লাভ টাইপের!)। কবিতার ভাষা যত বেশি আবেগঘন হবে, তত বেশি কাজ হবে।
.
এইবার শুরু হবে নন-স্টপ ম্যাসেঞ্জারে প্রেমের কবিতা পাঠানোর প্রসেস। ধরে নিন আপনার প্রথমদিকে পনের থেকে বিশটা দেখা মাত্রই রাগের চোটে ডিলিট করে দেয়া হবে। সুতরাং ভাল ভাল কবিতা আগে দিবেন না।
.
দিনে আট বা দশটা করে কবিতা পাঠাতে থাকুন। এবং প্রতিটা কবিতার নীচে কবির নাম ভালোভাবে দিয়ে দিবেন।
.
কমপক্ষে ত্রিশটা কবিতা পার হলে এবার দুর্দান্ত বাছাই করা একটা কবিতা ভুল করে নিজের নাম বসিয়ে তাকে পাঠিয়ে দিন। এবং অপেক্ষা করুন। কোন রেসপনস না আসলে আবার পনের’টা কবিতার পর একই কাজ করুন।
.
রেসপন্স আসবে। কবিতা মেয়ে পড়বেই। যত পড়বে, রাগ ততই কমবে। কমতে কমতে যখন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে তখনই ফোন দেবে আপনাকে। কবিতা আপনি সত্যই আপনি লিখেছেন নাকি জানতে চাইবে!
Remember everything is fair in love and war!
.
জীবনে যে কোনদিন এর আগে কবিতা লেখেন নি! তার প্রেমে পড়েই এবং রেস্টুরেন্টে তার সাথে এত ভালো একটা ডেটিংয়ে এসেই এই প্রথম কবিতা লেখা শুরু করেছেন এটা সুন্দরভাবে তাকে বুঝিয়ে দিন।
.
এরপরও যদি আপনার প্রেমিকার কোন রেসপন্স না আসে তাহলে বুঝতে হবে এই মেয়ে অনেক আগেই অন্যের হয়ে গেছে। শুধু শুধু এখানে বৃথা চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। বৃথা অরন্য রোদন করে কোন লাভ নেই!
.
নতুবা কেল্লা ফতে হয়ে যাবার কথা সাথে সাথেই! খবরদার ভুলেও তাকে পাবার জন্য যা যা করেছেন সেটা আগ বাড়িয়ে জানাবেন না, পারলে এই ঘটনা বেমালুম ভুলে যান। মেয়ে আপনার লেখা নিয়মিত কবিতা চাইবে। আগে বাড়িয়ে আবার প্রতিদিন পাঠানো শুরু করবেন না। প্রতি সপ্তাহে একটার বেশি কোনভাবেই পাঠাবেন না। নব্য কবিদের সপ্তাহে একটার বেশি কবিতা লেখাটা শোভনীয় নয়!
.
আশা করা যাচ্ছে এভাবে কবিতা পড়া এবং পাঠাতে পাঠাতে আপনিও শীঘ্রই কবি হয়ে উঠবেন। কি আছে জীবনে? সাহস করে লিখে ফেলুন!
.
তারপর সেইগুলি কবিতাগুলি সামু ব্লগ সহ বিভিন্ন সাহিত্য কেন্দ্রেও পোস্ট দিয়ে দিন! অচিরেই নামকরা কবি হিসেবে আপনি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠবেন।
.
কি চমকে উঠলেন?
আরে, এটা তো রম্যলেখা। আপনারা এত সিরিয়াস হয়ে পড়ছিলেন কেন?
অবশ্য যারা বেশি সিরিয়াস ছিলেন তাদের জন্য সমবেদনা এবং উৎকন্ঠা রইলো।
.
আপনি কিন্তু আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা কিংবা …… নিয়ে আসলেও চিন্তিত!
.
এর আগে আমি ব্লগে কবিতা লেখার সহজ পাঠ দিয়েছিলাম, কেউ কেউ বলেছে তাতে নাকি কাজও হয়েছে। সুতরাং…….
.
উৎসর্গঃ লেখাটা উৎসর্গ করা হলো শ্রদ্ধেয় রম্য লেখকদের গুরু গিয়াস উদ্দিন লিটন ভাইকে।
.
.
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, অগাস্ট ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৮