somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসিদ্ধ দুইজন সাহাবী, খুলাফায়ে রাশিদিনের নামে কুৎসা রটনা এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দীনের অনুসারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ ইব‌ন আব্দুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর, যিনি আমাদেরকে কল্যাণকর সকল পথ বাতলে দিয়েছেন ও সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আরো সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিবারবর্গ (আহলুল বাইয়াত) এবং উনার সাহাবীদের উপর, যারা তার আনীত দ্বীন ও আদর্শকে পরবর্তী উম্মতের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার উপর।]

অল্প কিছুদিন আগে ইসলামের প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বিরুদ্ধে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সবচেয়ে ছোট কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হত্যা, তার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা এবং প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বাসা আক্রমণ করে তাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাবার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারমূলক একটা পোস্ট ব্লগে দেয়া হয়েছিল।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই পোস্টটা লিখেছিল নিজেকে মুসলিম দাবীকারী ব্যক্তি সত্যপথিক শাইয়্যান। তার সেই পোস্টের লিংক নিচে দেয়া হলোঃ ইসলামের প্রথম যুগে নারীদের উপর অত্যাচার

সেই পোস্টে দাবী করা হয়েছিলঃ
সবাই ভয়ে যখন আবু বকরের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া শুরু করলেন, হযরত আলী (আঃ) বেঁকে বসলেন। তিনি আবু বকরকে নেতা মানলেন না। এটা শুনে উমর রেগে গিয়ে হযরত আলী'র বাসায় হানা দিলেন। হযরত আলী'র স্ত্রী বিবি ফাতেমা (আ) দরজা বন্ধ করে আগলে দাঁড়ালেন। হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর কন্যা বিবি ফাতেমা কিছুতেই নিজের স্বামীকে আবু বকরের দরবারে নিতে দিবেন না। এক পর্যায়ে, উমরের লাথিতে দরজা ভেঙ্গে পড়লো। দরজার একটি অংশ গিয়ে আঘাত করলো প্রিয় নবী (সা)-এর মেয়ের গায়ে।
সেই সময়ে বিবি ফাতেমা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দরজার আঘাতে সাথে সাথে তাঁর গর্ভপাত হলো। আর, তাঁর রক্তাক্ত দেহের উপর দিয়েই মুসলমানদের কথিত দ্বিতীয় খলিফা উমরের বাহিনী হযরত আলীকে বেঁধে আবু বকরের দরবারে নিয়ে গেলো। পরবর্তীতে, বিবি ফাতেমা মারা গেলে, তাঁর ওসিয়ত মোতাবেক আবু বকর আর উমরকে জানাযায় আসতে বাধা দেওয়া হয়।
মুসলমানদের খলিফারা যুগে যুগে নারীদের অপমান করেছে। করেছে অত্যাচার। মুসলমানদের বিখ্যাত ইতিহাসবিদরাই তা লিখে গিয়েছেন। সেজন্যেই, ভালো মুসলমানরা আবু বকর, উমর, উসমান আর মুয়াবিয়াকে অভিসম্পাত করে।

আমি সম্মানিত পাঠকদের এই লেখার তিনটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করছিঃ
এক) সাহাবী হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচনের সময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কোনভাবেই স্বেচ্ছায় সেই বাইয়াত গ্রহণ করেননি।
দুই) সাহাবী হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত এ উমর বিন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সবচেয়ে ছোট কন্যা হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হত্যা, তার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা এবং প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বাসা আক্রমণ করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
তিন) মুসলমানদের খলিফারা যুগে যুগে নারীদের অপমান করেছে। করেছে অত্যাচার। মুসলমানদের বিখ্যাত ইতিহাসবিদরাই তা লিখে গিয়েছেন। সেজন্যেই, ভালো মুসলমানরা আবু বকর, উমর, উসমান আর মুয়াবিয়াকে অভিসম্পাত করে। (নাউজুবিল্লাহ)

যেহেতু সে ব্লগে লেখা দিয়েছে, আমি উপযুক্ত যুক্তি তর্ক সাপেক্ষেই তার এই দাবীগুলি কতটা অসাড়, মিথ্যাচার এবং ভ্রান্ত ধারনা প্রমান করে দেবো। তার এই কাজ নতুন কিছু না, যুগ যুগ ধরেই মুসলিম প্রথিতযশা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই ধরনের নোংরা অপপ্রচার চলে আসছে। এইসব পথভ্রষ্ট মানুষরা জানে না, আল্লাহ স্বয়ং যাদের জীবিত অবস্থায় আশারায়ে মুবাশ্বারাহ হিসেবে ঘোষনা দেন, তাদের সম্মান সামান্যতম মানুষ কীভাবে কমাবে? মহাসমুদ্রের মাঝে ইটের কনা ছুড়ে দিলে বিশাল জলসমুদ্রের কি কিছু যায় আসে?

দুঃখজনক হলেও সত্য যে ইসলামের বিরুদ্ধে এই সমস্ত নোংরা অপপ্রচার কিংবা মিথ্যাচার দেখলে অনেক মুসলিমদেরকে এড়িয়ে যেতে দেখা যায়। অথচ তারা জানে না ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দেখলে সেটার প্রতিবাদ করা নৈতিক এবং ইসলামিক দায়িত্ব।
(১) হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিতঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোন নবীকে যে কোন উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নাতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হয় যে, তারা যা বলে, তা করে না এবং তারা তা করে, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সেও মু’মিন। আর এরপর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই”। (সূত্রঃ হাদিস নাম্বার ১৫৯১, Click This Link)
(২) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতঃ “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান”। (সূত্রঃ আহমাদ ১১০৭৪, মুসলিম ১৮৬, মুসলিম ১৮৮, আসহাবে সুনান, হাদিস নাম্বার ১৫৯০, Click This Link)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ সকলেই দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন ইনসাফকারী। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সাহাবীদেরকেই ইনসাফকারী বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের উপর আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহ্ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শনকারী খলীফাগণের সুন্নাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং উক্ত খলীফাগণের প্রত্যেকেই ইনসাফকারী”। অন্যত্র আছে, যার সনদও সহীহ, “আমার সব সাহাবীই ইনসাফকারী”। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, “তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সাহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাস বলেন, “আমার সুন্নাত ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত পালন করা তোমার অবশ্য কর্তব্য, এই সুন্নাতকে তোমরা হাতে-দাঁতে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। আর সাবধান! ইসলামী শরীয়তে তোমরা নতুন কিছু আবিস্কার করবে না, কেননা প্রত্যেক নব আবিস্কৃারই হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই হচ্ছে ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা। (সূত্রঃ আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ্)

রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না। তাঁদেরকে যারা ভালোবাসে, আমার মুহাব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে, আর যারা তাঁদেরকে হিংসা করে, আমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।” (সূত্রঃ মিশকাতুল মাসাবিহ)।
হযরত ইবনে উমর (রাদিয়াল্লালাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাস বলেছেন, “যখন তোমরা ঐসব লোকদেরকে দেখবে যারা আমার সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ করে, তখন তোমরা বলবে, তোমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার লানত, তোমাদের এই মন্দ আচরণের জন্য”। (সূত্রঃ তিরমিজী)।

সাহাবীদের মর্যাদা ও তাঁদের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে শরীফে বলা হয়েছে, “তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবীগণ) সত্যনিষ্ঠ বা সত্যবাদী।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৫)।
“এমন সব লোকই (সাহাবীরা) সত্যিকারের মুমিন (যাঁদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদেরজন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিযিক”। (সূরা আনফাল, আয়াত : ৪)।
সম্মানিত সাহাবীগণের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে রয়েছে অসংখ্য হাদিস। আমি আরো কয়েকটি উল্লেখ করছি।
(১) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা আমার সাহাবীগণকে গাল-মন্দ করো না। কেননা তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচ এর সমান সাওয়াবে পৌঁছুতে পারেনা”। (সূত্রঃ বুখারি ৩৩৯৭)
(২) হযরত জাবির (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, “জাহান্নামের আগুন সেই মুসলমানকে স্পর্শ করতে পারে না, যে আমাকে দেখেছে। অর্থাৎ আমার সাহাবীরা কিংবা আমাকে যারা দেখেছে তাঁদেরকে দেখেছে। অর্থাৎ তাবেঈরা।’ (সূত্রঃ তিরমিজি ৩৮০১)।
(৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, “যে আমার সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল। যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।” (সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ ১৯৬৪১)।
ইসলামের এই শত্রুদের সাবধান করে আল্লাহ নাযিল করেছিলেন এই আয়াতঃ "বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছো তার জন্য”।
(সূত্রঃ সুরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ১৮)

উক্ত লেখক যেই দুজন সাহাবীকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেছে, তাদের নিয়ে আমাদের রাসূল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে গেছেনঃ
(১) ‘‘আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমার, এই দু’জনের অনুসরণ করবে’’। (সূত্রঃ তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব।
(২) ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একজন মহিলা আগমণ করল। তিনি তাকে পুনরায় আসতে বললেন। মহিলাটি বললঃ আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তাহলে কার কাছে যাব? মনে হচ্ছে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাউতকে উদ্দেশ্য করেছিল। তিনি তখন বললেনঃ তুমি এসে যদি আমাকে না পাও, তাহলে আবু বকরের কাছে যাবে’’। (বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব)
(৩) আম‌র ইব্‌নু ‘আস (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, আইশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বক‌র)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, উমার ইবন খাত্তাব, অতঃপর আরও কয়েকজনের নাম করলেন। (সূত্রঃ সহী বুখারী আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯৭)
এই ব্লগারের লেখা যদি সত্য হয় তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম তার সবচেয়ে আদরের মেয়ের হত্যাকারীদের সবাইকে অনুসরণ করতে বলে গেছেন, নাউজুবিল্লাহ।

এই ব্লগার আহলুল বায়াত এর সম্মান করার নামে যে দুইজন সাহাবীদের নামে অজস্র মিথ্যাচার করেছেন তাদের মাঝে প্রথম হচ্ছেন প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) এর উপাধি ছিল ‘সাদিক’ (সত্যবাদী) এবং ‘আতিক’ (দোযখের আগুন থেকে আল্লাহ্‌ কর্তৃক রক্ষাপ্রাপ্ত)। পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বনবীর পর অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মাধুর্য ব্যবহার, ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা, অগাধ জ্ঞানের গভীরতা, কালজয়ী আদর্শিক একনিষ্ঠতা, কুরআনের নীতি-জ্ঞানে পরিপক্বতা, দায়িত্ব পালনে কর্তব্য-নিষ্ঠা, অধিকার বস্তবায়নে ত্যাগের মহিমা আর নিঃস্বার্থ প্রজা পালনে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যত রাষ্ট্রনায়ক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তিনি হলেন ইসলামী খিলাফাতের প্রথম খলিফা, হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি আশারায়ে মুবাশ্বারার একজন। হজরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত প্রাপ্তির দ্বিতীয় দিনেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনিই হলেন বয়স্ক ও পুরুষদের মধ্যে এবং কুরাইশ বংশের ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি। দ্বীনি দাওয়াত নিয়ে কোথাও গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সঙ্গে নিয়েই যেতেন। হিজরতের কঠিন সফরে হজরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)ই ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সফরসঙ্গী। আল্লাহ তাআলা তাঁর শানেই সুরা আল-লাইলের ৫, ৬ ও ৭ আয়াত নাজিল করেছিলেন। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “বন্ধুত্ব ও সাহায্য আবু বকরই আমাকে বেশি করেছিলেন। ইহজগতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই করতাম।“ একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম) হযরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)কে হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর আগে আগে চলতে দেখে সতর্ক করলেন এবং বললেনঃ “তুমি কি এমন ব্যক্তির আগে আগে চলো, যিনি ইহকাল ও পরকালে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ?’ তিনি আরো বলেছেনঃ “দুনিয়ায় এমন কোনো ব্যক্তির ওপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়নি, যে পয়গম্বরদের পর হযরত আবু বকর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।” ইসলামের প্রতি উনার অপরিসীম অবদানের জন্য তাকে ‘ইসলামের ত্রাণকর্তা’ বলা হয়। এ অবদানের স্বীকৃতির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “দুনিয়াতে আমি প্রত্যেক মানুষের এহসানের পরিপূর্ণ বদলা আদায় করেছি কিন্তু সিদ্দিকে আকবরের ত্যাগের প্রতিদান আদায় করতে পারিনি। হাশরের ময়দানে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাকে ওই প্রতিদান দেবেন।”

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রানপ্রিয় বন্ধুকে অপমানজনক এত নোংরা মন্তব্য করার শাস্তি নিশ্চয়ই আল্লাহই আপনাকে দেবেন। সবার জন্য আল্লাহ হিদায়াতের বন্দোবস্ত করেন না।

এরপর উনি কটু মন্তব্য করেছেন হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নামে, উনার অভিযোগ উনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে ছোট কন্যা হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হত্যা, তার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা এবং প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বাসা আক্রমণ করে থেকে তাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। অথচ উকবা ইবনে আমির (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “আমার পরে যদি কেউ নবী হত, তবে সে হতো উমার।” [আহমাদ (১৭৪০৫), তিরমিজি (৩৬৮৬), আল হাকিম (৪৪৯৫)]
উনি আরো বলে গেছেন, “আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমার, এই দু’জনের অনুসরণ করবে’’। (তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব। সিলসিলায়ে সাহীহা হাদীছ নং- ১২৩৩)
হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু)র ঘটনা। আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিতঃ “একদিন আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। নবীজী উমর রাদিআল্লাহু আনহুর হাত ধরা ছিলেন। উমর রাদিআল্লাহু আনহু তাকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার জান ছাড়া আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্ত্বার কসম! তোমার কাছে আমি যেন তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় হই। তখন উমর রাদিআল্লাহু আনহু তাকে বললেনঃ আল্লাহর কসম, এখন থেকে আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ উমর! এখন তুমি সত্যিকারের ঈমানদার হলে”। (সূত্রঃ সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড হাদীস ৬৬৩২)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লালহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, “একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখলাম লোকদেরকে আমার সামনে আনা হচ্ছে। ঐসব লোক জামা পরিহিত ছিল। তাদের কারো জামা সিনা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আবার কারো জামা তার চেয়ে নীচ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তারপর আমার সামনে উমরকে আনা হলো। তার গায়ে এরূপ একটি জামা ছিল যে, সে মাটিতে টেনে চলছিল। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি এর অর্থ কি করেছিলেন? তিনি বললেন, দীন ইসলাম”। (সূত্রঃ সহিহ আল বোখারী, ৩৪২৩ নং হাদিসের (আম্বিয়া কিরাম অধ্যায়)

ঐতিহাসিকভাবে এটা প্রমাণিত যে, সাহাবীদের মধ্যে যথেষ্ট মিল ছিল। আহলুস সুন্নাহ বলতে আমরা সকলে আহলুল বাইতের প্রতি যথেষ্ট ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করি। অর্থাৎ আহলুস্ সুন্নাহর কারনে আমরা সবাই হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত ফাতেমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এবং তাদের সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাকি সাহাবীদের প্রতি আমরা অযথাই নোংরা অযাচিত মন্তব্য করে যাবো। হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) নিজেই বলে গেছেন, “আমার ব্যাপারে দুই দল লোক ধ্বংস হবে। একদল অত্যধিক প্রেমিক, যারা আমার প্রশংসায় এমন গুনাবলী বলবে, যা আমার মধ্যে নেই। আরেকদল হিংসা বশীভুত হয়ে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটাইবে। (সূত্রঃ মুসনাদে আহমদ হা/নং ১৩৭৬, মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/নং ৫৩৪)
(১) ইমাম জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) তার পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকির (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) ইন্তেকাল করলে হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযার নামায পড়তে আগমন করেন। তখন হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু)কে বললেন, আপনি জানাযার নামায পড়ান। তখন হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূলের খলীফা! আপনার আগে আমি যেতে পারবো না। তখন হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) সামনে এগিয়ে জানাযার নামায পড়ালেন। (সূত্রঃ কানযুল উম্মাল-১২/৫১৫ হা/নং ৩৫৬৭৭)
(২) ইমাম জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) তার পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকির (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন যে, খাতুনে জান্নাত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এঁর ইন্তেকাল মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময়ে হয়। তখন হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত উসমান (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত যুবায়ের (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযার নামাযের জন্য উপস্থিত হন। হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) জানাযার নামায পড়ানোর জন্য আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)কে বললেন। হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, হে আবুল হাসান! আঁপনার উপস্থিতিতে আমি কীভাবে জানাযা পড়াই? হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, আপনি এগিয়ে আসুন! আল্লাহর কসম! আপনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি হযরত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এঁর জানাযা পড়াবে না। অতএব হযরত আবু বকর (রাদিআল্লাহু আনহু)ই হযরত ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এঁর জানাযার নামায পড়ান। আর সেই রাতেই তাঁকে দাফন করা হয়। (সূত্রঃ আররিয়াজুন নাজরাহ ফী মানাকিবিল আশারাহ লিমুহিব তাবারী-১/১৫৬)

উনি যাদের সমর্থনে এই নোংরা লেখা লিখেছেন, ইমাম জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) এবং তার পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকির (রহিমাহুল্লাহ) সেই সম্প্রদায়ের বারো ইমামদের দুইজন। এরা তাদের নিজেদের ইমামগণের কথাই বিশ্বাস করে না। সাহাবীদের নামে জঘন্য মিথ্যাচার এদের জন্মগত আচরণে পরিনত হয়েছে।

উক্ত লেখক দাবি অনুযায়ী ইসলামের প্রথম দুজন খলিফা, হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত উমর বিন খাত্তব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে আদরের কন্যা হযরত ফাতেমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)র নির্মম মৃত্যুর জন্য দায়ী। এমনকি ওনার গর্ভস্থ সন্তান হত্যার জন্যও দায়ী। কোন মুসলিম অপর কোনো মুসলিমের বিনা কারণে মৃত্যুর কারণ হলে সে সরাসরি জাহান্নামে যাবে। সরাসরি দুইটা খুন বা হত্যার অপরাধে হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বেহেস্তে যাওয়ার উপযুক্ত নন (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তারা সরাসরি বেহেশতে যাবেন এটা ঘোষণা করেছেন। এখান থেকে সুস্পষ্ট যে উক্ত লেখক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করার অপচেষ্টা করছেন। তাদের নামে, তাদের চরিত্রের নামে মিথ্যা কলঙ্কের অপবাদ দিচ্ছেন।

আবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি সহি হাদিসের সনদে এই সাহাবীদেরকে নিষ্পাপ এবং সর্বদা অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে বলেছেন। উক্ত লেখক দাবি অনুযায়ী আল্লাহর রাসূল দুজন খুনিকে, যারা উনার কন্যা এবং কন্যার সন্তানকে খুনের অপরাধে দায়ী তাদেরকে অনুসরণ করতে বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বেহেশতে নারীদের সরদার হবেন। তাকে হত্যার অপরাধে নিশ্চয়ই এই সাহাবীদের কেউ কখনো বেহেশতে যেতে পারবেন না। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুইজনের বেহেস্তে যাবার ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন।‌

এই লেখকের এর দাবি যদি সত্যি হয় তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুরআন শরীফের ঘোষণা এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহী হাদিস মিথ্যা প্রমাণিত হয় (নাউজুবিল্লাহ)। উনার প্রতিটা দাবী ইসলামের মূলনীতির সরাসরি সাংঘর্ষিক।
উনি আবার দাবী করেছে ইসলামের ইতিহাসে নাকি এইসব ঘটনা লেখা আছে। চলুন তাহলে ইসলামের পরিশুদ্ধ ইতিহাস থেকে দেখে আসি উনার দাবী সত্য না মিথ্যা?

ধর্মীয় লেখার বাইরে যেয়ে ইসলামি ইতিহাস থেকে আমি প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) প্রণীত “আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত)” এর ষষ্ঠ খন্ড থেকে এর স্বপক্ষে প্রমাণ দিচ্ছি। ছবি গুলিতে আমি সেই পৃষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ লাইন পেন্সিল দিয়ে আণ্ডারলাইন করে দিয়েছি। উক্ত লেখকের সবগুলি অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।
(১) উনি দুইজন প্রিয় সাহাবীদের বিরুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম এর কন্যার হত্যার মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)’র খলিফা হিসেবে বাইয়াত গ্রহণ করার সময়ে। তিনি দাবী করেছেন, উক্ত সময়ে হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) কোনভাবেই হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)’র খলিফা হিসেবে বাইয়াত মেনে নেননি । এবং জোর করে উনার বাসায় আক্রমন করে উনার স্ত্রীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে উনাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) সর্ম্পূণ স্বেচ্ছায় এই বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এর প্রমান এই বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ের পৃষ্ঠা ৪৬৩, ৪৬৪, ৪৬৫ তে দেয়া আছে। আমি নিজের হাতে তোলা ছবি এখানে দিয়ে দিলাম।
(২) এখানে আরো বলা আছে হযরত ফাতেমা (রাদিআল্লাহু আনহা) মহানবীর মৃত্যূর আরো ছয়মাস পরে মারা গেছেন। উক্ত লেখক দাবী করেছেন হযরত ফাতেমা (রাদিআল্লাহু আনহা) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)’র খলিফা হিসেবে বাইয়াত গ্রহণ করার সময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু)’র দ্বারা নির্মমভাবে আহত হয়ে মারা গেছেন। এটাও ডাহা মিথ্যা। উনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাহিস ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর আরো ছয়মাস পরে মারা গেছেন। মীরাছ নিয়ে উনি বাবার মারা যাবার পর খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু)র কাছে গিয়েছিলেন। উক্ত মীরাছ হাদিস মোতাবেক না পাওয়ার আরো বেশ কিছুদিন পরে উনি মারা গেছেন। অর্থাৎ উনাকে হত্যার যে মিথ্যা অভিযোগ উঠেছে সেটা থেকে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং হযরত উমর ইবন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) পুরোপুরি নিষ্পাপ। এর প্রমান এই বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ের পৃষ্ঠা ৪৬৫, ৫১৭ তে দেয়া আছে। আমি নিজের হাতে তোলা ছবি এখানে দিয়ে দিলাম।
কোন ইসলামী ইতিহাসের বইতে এইসব হাস্যকর, কাল্পনিক, বানোয়াট এবং সাহাবীদের অমর্যাদা করে কিছু লেখা থাকতে পারে না। সম্ভবও না।



ইসলামী আইনশাস্ত্রে শরিয়াহর এবং ফীকহ শাস্ত্রের উৎস হিসেবে নিন্মোক্ত মানদন্ডকে ক্রমানুসারে ধরা হয়ঃ
১) কুরআন শরিফ
২) হাদিস এবং সুন্নাহ
৩) ইজমা
৪) কিয়াস
ইজমা এবং কিয়াস ইসলামের নামে নতুন কোন বিধান রচনা করে না, বরং কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে পালন করার উপযুক্ত করে তুলে। সুতরাং যা যা পবিত্র কুরআন শরিফে কিংবা সহী হাদিসে দেয়া আছে সেটা অন্য কোন মানুষের রচিত কোন লেখা বা কথা দ্বারা কোনভাবেই প্রতিস্থাপণ হতে পারে না। কারন হাদিস সমূহও যে ওহীর সূত্রে প্রাপ্ত এবং তাশরী’আতের অন্যতম উৎস সেটা পবিত্র কুরআন শরীফেরই উল্লেখ করা আছেঃ-
১। “আর তিনি মনগড়া কথাও বলেন না, এতো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (৫৩:৩-৪)
২। “তিনি যদি আমার নামে কিছু রচনা চালাতে চেষ্টা করতেন আমি অবশ্যই তাঁর ডানহাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে নিতাম তাঁর জীবন ধমনী” (৬৯:৪৪-৪৬)
৩। “রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (৫৯:৭)
৪। মহানবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই বলে গেছেনঃ “জেনে রাখ, আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে দেয়া হয়েছে এর অনুরূপ আরও একটি জিনিস”। (আবূ দাঊদ, ইবনমাজা, দারিমী)

উনার উদ্দেশ্যই খারাপ, কারণ পোস্টের শিরোনামটাই অসৎ উদেশ্যে লেখা হয়েছে। উক্ত লেখক তার লেখা সাপেক্ষে একটা হাদিস কিংবা কুরআন শরীফের আয়াতও দেখাতে পারেনি। পারেনি তাবেঈ দ্বারা রচিত কোন লেখা প্রমান হিসেবে দিতে। হাদিস কিংবা কুরআন শরীফের সুস্পষ্ট প্রমানের বিরুদ্ধে সে নিয়ে এসেছে কিছু বাতিল গ্রন্থ। ইসলাম নিয়ে যার নূন্যতম জ্ঞান থাকবে সেই বুঝবে কতটা হাস্যকর এবং নির্বোধের মতো এই অবিবেচক কাজ। আল্লাহর বাণী এবং রাসূলের হাদিসের বিপরীতে তার দেয়া সমস্ত সূত্র পুরোপুরি পরিতাজ্য।

উনি যার সম্মান বাড়ানোর জন্য এইসব পথভ্রষ্ট লেখা দিচ্ছেন তিনি নিজেই তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে গেছেন। হযরত আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) এর পুত্র মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমার পিতা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর কোন ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি বললেনঃ আবু বকর সিদ্দিক (রাদিআল্লাহু আনহু) , আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোন ব্যক্তি? তিনি বললেন: উমর (রাদিআল্লাহু আনহু), (সূত্রঃ সহীহ্ বুখারী,হাদিস নং ৩৬৭১; মেশকাত হাদিস নং ৫৭৭০)

এদের পক্ষে এইসব লেখা অসম্ভব কিছু না। কারন এরা ধর্মীয়ভাবে বিশ্বাস করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর মাত্র ৫/৬ জন বাদে সকল সাহাবীরা ইসলাম থেকে খারিজ, মুরতাদ, কাফির হয়ে গিয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)। এরা এটাও বিশ্বাস করে যে আল্লাহ যেই কুরআন শরীফের বিশুদ্ধতা নিজেই রাখবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন, সেই পবিত্র কুরআন শরীফ পরিবর্তন করা হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ) (সূত্রঃ আল কুলাইনী: উসূলুল কাফী: ১/২৮৫)। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফে ঘোষনা করা হয়েছে, “নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি আর আমরাই তার সংরক্ষক।” (সুরা আল হিজরঃ ৯)
এরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দেয়া কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” পর্যন্ত পরিবর্তন করে বানিয়েছে “লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ আলী ওয়ালী উল্লাহ” (নাউযুবিল্লাহ)।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিজেদের পরিবার-পরিজন সহ এই ফিতনা রেখে রক্ষা করুন এবং পাপী লেখকের এই জঘন্য পাপের উপযুক্ত শাস্তি মহান আল্লাহ তায়ালাই তাকে প্রদান করবেন, আমীন।

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারী ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:১৭
৫১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×