সম্ভবত বাবা উঠেছেন, এখন তার পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাথরুম থেকে পানির শব্দ, এরপর তার কাশি। পায়ের শব্দ আবার বাবার ঘরের দিকে গেল। বাবা চেয়ার টেনে বসলেন ।
হাসান, এই হাসান ! শুনছিস ?
হ্যাঁ বাবা, বল।
আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারিস? একটু আদা দিবি চায়ের মধ্যে।
ঠিক আছে বাবা। তুমি বস, আমি চা করে আনছি।
হাসান উঠে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। চুলায় গরম পানি দিয়ে আদা কুচি করে বাবার নির্দিষ্ট মগে ফেলল। বাবা বরাবরই দুধ-চিনি ছাড়া চা খান তবে ইদানিং মাঝে মাঝে একটু আদা নেন, যেমন সকালের চায়ে তাকে একটু আদা দিয়ে হয়।
এই নাও বাবা চা। তোমার কি শরীর খুব খারাপ?
এই বয়সে আর শরীরের খারাপ-ভাল কিরে? তবে কাশিটা মনে হয় খুব বেড়েছে। দেখি একবার ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে। তোর ব্যবসার কি অবস্থা? নতুন কোনও ছবির খোঁজ পেলি ? আগের সব ছবিগুলো কি বিক্রি হয়েছে?
বাবা, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এখানে অনেক পরিশ্রম আর রিটার্নটা তেমন নয়। অনেক কষ্ট করে যেসব ছবি জোগাড় করি সেগুলোর ক্রেতা আবার সংখ্যায় কম। এ ধরনের ছবি যারা কেনে তারা রেগুলার কাষ্টমার কিন্তু দাম খুব কম পাওয়া যায়। অবশ্য সে লক্ষ্য করেছে এই ছবিগুলোর ক্রেতারা বেশিরভাগ সময় এখন তার কাছে আসে কারন খুব কম ব্যবসায়ী আছে যাদের কাছে এমন ছবির কালেকসান আছে।
বেশ গম্ভীর একটা নিঃশ্বাস ফেললেন কালান সাহেব। বললেন তাহলে তো বেশ ভালই। দেখবি খুব তাড়াতাড়িই ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে যাবে। আর এদেশে চাকরির যে অবস্থা তাতে ব্যবসাটা কোনওরকম চললেও চাকরির চেয়েও ভাল।
এই জন্যই তো আর চাকরির পেছনে ছুটোছুটি করিনি বাবা।
আচ্ছা এরকম একটা ব্যবসার বুদ্ধি তোকে কে দিল?
ইউনির্ভাসিটিতে পড়বার সময় আমার এক বন্ধুর চাচা এমন কিছু অরিজিনাল পেইন্টিং খুঁজছিল যেগুলো নামি কোনও আর্টিষ্টের নয়। আর্টিষ্ট নতুন কিংবা যার কোনও নাম-যশ নেই এমন হতে হবে। তবে ছবিগুলো হতে হবে জীবন্ত।
আমার আরেকজন বন্ধু আছে যে খুব শখ করে মাঝে মাঝে ছবি আঁকে । কোনও এক অদ্ভুত কারনে সবসময় সে ছবি আঁকে না। কিন্তু তার পেইন্টিংগুলোর মধ্যে কিছু একটা থাকে। ওর কয়েকটা ছবি সে জোগাড় করে আর তখন থেকেই এটাকে ব্যবসায়িক রুপ দেবার চিন্তাটা মাথায় আসে। তাছাড়া, তুমি তো জানই ছবি ব্যাপারটা আমাকে খুব টানে।
কালান সাহেব আর কথা বাড়ালেন না। তা এত সকালে তুই আবার কোথাও যাবি নাকি? বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে একটু । তাও ভাল যে রাতের মতন অমন পাগল করা বৃষ্টি নেই। তা একটু সাবধানে যাস।
ঠিক আছে বাবা। তুমি বেশি চিন্তা কোরো না। তোমার কিছু লাগলে বল, আমি আসার সময় নিয়ে আসব। বুয়াকে বোল জম্পেস করে খিচুড়ি রাঁধতে। আজ যা বৃষ্টি তার খিচুড়ি দারুন হবে। আমি দুপুরের আগেই চলে আসব।
না-রে আমার কিছু লাগবে না।
বাবার ঘর থেকে বের হয়ে হাসান তৈরি হয় নিল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে একটু আকাশ দেখল। মন খারাপ করা একটা সকালে বাইরে বের হতে হাসানের ভাললাগে না কিন্তু উপায় নেই। আজ টাকাটা পাবার কথা। বাড়ি থেকে বের হতেই একটা সি-এন-জি পাওয়া গেল। সোজা ধানমন্ডি, ২৭ নম্বর রোড।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




