somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেদিন লাবণী কেঁদেছিল

২৪ শে মে, ২০১১ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার হল , মুখ ফুটে "কোথায় যাও" ছাড়া আর কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে । অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা । কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই ভালবাসা বলে।


আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল । হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে হয় । মা - বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায় করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে যায় । সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায় চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি ই বলেছেন " প্রেম স্বর্গ থেকে আসে " ।
অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু তার ভালবাসার জন্য ।


লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে । হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন ভালবাসবি ? এই রকম "কেহ দেখিবে না মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না মোর অশ্রুবারিচয় " আর কত করবি ? গিয়ে বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?


অরন্যঃ "কিন্তু তানিয়া , ও যদি না করে তাহলে ?"
আমি বললাম (তানিয়া) "না করলে করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন রাখবি?"
অরন্যঃ "তর কথাও ঠিক । বলতে হবে আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই হ্যা করবে । "
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি , তানিয়া ।


" আমি তোমাকে ভালবাসি" , পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা । সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন । যত বেশি ভালবাস, তত বেশি হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয় দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে , হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।
লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই । অরণ্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে গেলো । হয়তো একেবারেই চলে গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য । আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে , সারাজীবন ।




তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে ভালবাসে তারমানে এই না যে অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে । লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।


অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে । যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের আলমারিতে মারলো । সরাসরি লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো । তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে আসল ।




লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায় ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?
অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই প্রেমে পড়ে যাই ।
লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি । তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ ।
লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই । প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার । যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই , ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।
লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু । তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে যেতে পারো ।
অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম থেকে আমি কি পাব তা কখনো চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও না । আমি শুধু জানি যে লাবণী নামের একটা মেয়েকে আমার জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও । সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না , এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন পরে চলে যাবে ।
অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে , চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু জানাতে এসেছিলাম আমার মনের কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে । তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার আগ মুহূর্তেও বলব "লাবণী আমি তোমাকে ভালবাসি" , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী । এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার তো দেখা হয়েই যাবে ।




তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক । সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো ভালবাসে । এখনো লাবনীর রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে । এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।
রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে । অরন্য আমাকে বলল " গাধায় এটাও জানে না যে টাইটানিকের পোজে ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় " । আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ? একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে । জায়গাটা একটু বিপদজনক ।
লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আনলো । কাছে এনে লাবনীকে কোলে নিতে চাইলো । রোহিত ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো । তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন চলে গেলো রেলিঙের দিকে । লাবণী এখনও রোহিতের কোলে । রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো । নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে একেবারে নিচে পানিতে পড়ে গেলো । "রোহিত" , রোহিত" , বলে চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে পারছেনা । একবার ডুবছে আবার ভাসছে । এখনও লাবণী "রোহিত , রোহিত" বলে চিৎকার করছে । আর রোহিত চিৎকার করছে "কেউ লাবনীকে বাচাও , কেউ একজন বাচাও" । তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম । দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই এল "অরণ্য সাতারের কিছুই জানে না" ।


৭ দিন পর: অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায় থাকলে অপারেশনও করা যাবে না । যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক তখনই অপারেশন করা লাগবে ।
লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , " আমি একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? " । আমি কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি । রোহিতের সাথে থাকার সময় তো কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু , পবিত্র ।




লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী কথা বলা শুরু করল ।
অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা । তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , " লাবণী ভাল আছো ? "
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ "লাবনী , আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা রেখেছি লাবণী । আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি । লাবণী শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল থেকো " , বলে অরণ্য লাবণীর গালে আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল । লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই লাবণীকে ভালবাসে ।


তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায় গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম রুমে । " লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে আসলাম " , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।
লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল । গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে ! লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল । প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল " একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে ......... " । লাবনীর চোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো বেশি পরিমাণে । লাবনী ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন । লাবণী আজ কাঁদবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৪০
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×