মেঘাচ্ছন্ন আকাশ । আজ মনে হচ্ছে আকাশের মনটা খুব খারাপ তাই আকাশ আজ গুমরা মুখে বসে আছে । আচ্ছা আকাশের মন খারাপ হবে কেন ? নাকি আমার মত বিনা কারণেই মন খারাপ করে রাখে । এসব যখন ভাবছিল অন্তিপা তখন তার বিশ বছরের ছেলে সূর্য ডাকছে, " মা ও মা কোথায় তুমি ? " অন্তিপা বাসার সামনের বাগানে বসা ছিল । ছেলের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে গেলো ।
কি ব্যাপার এত চিৎকার করছিস কেন সূর্য ? , বলল অন্তিপা । " মা তুমি কোথায় ছিলে আমার এত খিদে পেয়েছে " , ৮ বছরের বাচ্চার মত অভিমান করে বলল সূর্য । অন্তিপা তখন পরম মমতায় বলল , " তুই ই তো বলেছিস তর আজকে ক্লাস নেই । আজ তর অফ , বেশি করে ঘুমাবি । আর মনে নেই কাল রাতে বারবার বলেছিস যাতে তকে ডিস্টার্ব না করি । তাই আমি বাগানে গিয়ে বসেছিলাম । আচ্ছা যা আমি নাস্তা দিচ্ছি এখন ব্রাশ করে টেবিলে আয় । " আচ্ছা মা আসছি " বলে সূর্য বাথরুমে চলে গেলো ।
সূর্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ২য় বৎসরের ছাত্র । খুবি মেধাবী সে । যেমন মেধাবী তেমনই সুদর্শন । একবার দেখলে আরেকবার তাকাতে ইচ্ছা হয় । খুব লম্বা ও না আবার খুব খাটোও না , গায়ের রং ফর্সা আর আয়ত কালো চোখ ।
রান্নাঘর থেকে সূর্যের রুমের কাছে এসে অন্তিপা ডাকছে , " কিরে এত সময় লাগে নাকি ব্রাশ করতে ? নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে যে । " সূর্য বাথরুম থেকে জবাব দিল , " মা আমি গোসল করছি , ১০ মিনিটের ভিতরে আসছি " । " এতক্ষণ খিদা লাগছে খিদা লাগছে বলে ঘর মাথায় তুললি আর এখন ...... " বলে অন্তিপা চলে গেলো ।
প্রায় ১৫ মিনিট পরে সূর্য ডাইনিং রুমে আসে । অন্তিপা সূর্যকে দেখে চোখ ফিরাতে পারছেনা । সূর্য বেগুনী রঙের একটা টি-শার্ট পরেছে । খুব সুন্দর পারফিউমের গন্ধ আসছে শরীর থেকে । " ওরে বাবা , আমার রাজপুত্রের মত ছেলেটা কোথায় যাচ্ছে এত সেজে গুঁজে ? " অন্তিপা বলল । " মা , আজ আমার বন্ধু স্বপ্ন আছে না ? ওর জন্মদিন । আজ আমরা প্ল্যান করেছি সব বন্ধুরা ঘুরব আর সন্ধ্যার পরে স্বপ্নের বাসায় পার্টি আছে ওখানে যাব । মা তুমি খেয়ে নিয়ো প্লিজ । তুমি তো আবার আমায় ছাড়া খাও না । আর শুনো আমি কিন্তু গাড়ি নিয়ে বের হব আর কিছু টাকাও লাগবে মা , " সূর্য বলল । " ঠিক আছে বাবা , ঠিক আছে । আর কত টাকা লাগবে ? ১০ হাজার দিলে হবে ? " অন্তিপা বলল । সূর্য খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে হবে মা হবে । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি , এই বলে সূর্য তার মায়ের কূলে মাথা রাখে ।
অন্তিপার চোখ ভিজে আসে । তার কাছে মনে হচ্ছে সেই ছোট সূর্য অন্তিপার কূলে মাথা রেখে শুয়ে আছে । " মা তুমি কাঁদছ ? " , সূর্য জিজ্ঞেস করল । " না বাবা এটা আনন্দ অশ্রু " এই বলে অন্তিপা তার ছেলের মাথায় চুমো দিয়ে বলল " নে এখন নাস্তা কর , সব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে " ।
নাস্তা খাওয়া শুরু করল সূর্য তখনই টিং টিং করে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল । মোবাইল রিসিভ করার পর অপার থেকে রক্তিম বলল , " কিরে দুস্ত তুই কই ? আমরা সবাই তর জন্য অপেক্ষা করছি । তাড়াতাড়ি আয় " । " হ্যা দুস্ত আসছি , পনেরো মিনিটের মধ্যেই " সূর্য বলল । রক্তিম সূর্যের অনেক ভাল বন্ধু । একজন আরেকজনের জন্য জানও দিতে পারবে ।
"মা আমি যাই । রাতে ফিরতে দেরি হবে আর তুমি খেয়ে নিয়ো কিন্তু । সব ওষুধ খেয়ে নিয়ো । " এই বলে আলতো করে মায়ের কপালে আলতো করে একটা চুমো দিয়ে চলে গেলো সূর্য । আর বলে গেলো রুমটা ঘোচাতে । সূর্য যাওয়ার পরেই অন্তিপা রুম ঘোচাতে চলে গেলো সূর্যের রুমে ।
সূর্যের রুমে গিয়ে দেখে কি অবস্থা করেছে সূর্য রুমটার । কাপড়ের কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই রাখার । বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । এত্ত অগোছালো রুম দেখলে মনে হবে একটু আগে রুমে ফুটবল খেলা হয়েছে । রুম ঘোচাতে ঘোচাতে সূর্য ভাবে ছেলে বড় হয়েছে কিন্তু কোন খেয়াল নাই নিজের ।
সূর্যকে অন্তিপা অনেক ভালবাসে । প্রত্যেক মাই তার সন্তান কে অনেক ভালবাসে । কিন্তু অন্তিপা একটু বেশীই বাসে । অন্তিপার সুখ , আনন্দ , স্বপ্ন সবই হল সূর্য । সূর্য কিন্তু অন্তিপার সত্যিকারের ছেলে নয় ।
হঠাৎ করে অন্তিপার অনেক আগের ১তা বান্ধবী আসে তার বাসায় , নাম পূজা । অন্তিপার অনেক ভাল ফ্রেন্ড ছিল পূজা কিন্তু পূজার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আর তেমন যোগাযোগ হয় নি অন্তিপার সাথে । পূজার বিয়ে হয়েছিল আমেরিকান এক ছেলের সাথে । ঐযে বিয়ের পর গেলো এইবার প্রথম আসল । এসেই অন্তিপার খুজ নিলো আর বাসা বের করল । অন্তিপা তো দেখে অবাক । " এ মা ! এত পূজা , প্রায় ২ বছর পর দেখা হল । কেমন আছিস তুই ? ভিতরে আয় বস " , অন্তিপা পূজাকে ভিতরে আস্তে বলল । পূজা ভিতরে এসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করল । " আচ্ছারে আমাকে সব খুলে বল তুই বিয়ে করলিনা কিন্তু তর ছেলে ? কিভাবে হল সব । অন্তিপা এর চেহারা মেঘাচ্ছন্য আকাশের কালো হয়ে যায় ।
অন্তিপা আর রাজ , মেডিক্যাল কলেজের সেরা কাপল ছিল । একজন আরেকজনকে খুব ভালবাসত । প্রায় ৫ বছরের মত সম্পর্ক ছিল ওদের । এত্ত ভালবাসা যেন আর কোথাও নেই । বন্ধু বান্ধবরা মজা করে বলত " লাইলি মজনু , শিরি ফরহাদ , শাহজাহান মমতাজ এর পর হবে অন্তিপা আর রাজ । অন্তিপা আর রাজের ব্যাপারটা তাদের বাসাও জানত । এবং তারা এই ব্যাপারে রাজিও ছিল । ফাইনাল রেজাল্টের পর অন্তিপা আর রাজের বিয়ে ঠিক হয় । ওরা নতুন করে আবার নতুন জীবন এর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে । ওদের ভালবাসা আরও নতুন করে গভীর হয়ে উঠে । স্বপ্ন খুব কাছাকাছি চলে আসে । বিয়ের আর মাত্র ৫ দিন বাকি । তখন অন্তিপা তার বিয়ের কার্ড তার বান্ধবীর বাসায় দিতে গিয়ে বাড়ি আসার পথে দেখে রাস্তায় কিসের যেন একটা ভিড় । ভিড় ঠেলে অন্তিপা ভিতরে যায় , গিয়ে দেখে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে । ১তা রিক্সা কে পিষে নিয়েছে ১টা ট্রাক । রিক্সাতে ছিল ৩জন । ২জন মারা গেছে আর ১জন বেঁচে আছে । শেই ১জন টা হল সূর্য । সূর্যের তখন ১ বছর ছিল আর সূর্যের বাবা মা মারা যায় । কেও অদেরকে চিনতে পারল না । সবাই বলাবলি করল যে ছেলেটাকে এতিমখানায় দিয়ে দিবে । শুনে অন্তিপার খুব খারাপ লাগল । র বাচ্চাটা অন্তিপার দিকে তাকিয়ে রইল । অন্তিপার খুব মায়া লাগল । অন্তিপা আবেগে অভিভূত হয়ে বলল যে অন্তিপা বাচ্চাটাকে নিয়ে যাবে । বাচ্চাটাকে অন্তিপা বাসায় আনল । সবকিছু সবাইকে খুলে বলল । কেওই এটা মানতে পারল না । সবাই অন্তিপাকে বকাবকি করছে । অন্তিপা বলল যে যাই বল আমার রাজ এটা মেনে নেবে । কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস রাজ সব শুনে বলল এই ছেলেকে সে নিতে পারবে না । রাজকে পেতে হলে ওই ছেলেকে বাদ দিতে হবে । কিন্তু অন্তিপা তা পারবেনা । অন্তিপা তখন বলল আমার ভালবাসার কি কোন দাম নেই ? তখন রাজ বলল কোন জাত ধর্ম নেই এই ছেলের ভাঁড় আমি নিতে পারবনা । আর কি বিশ্বাস এটা যে তুমার ছেলে না ? অন্তিপা অবাক হয়ে বলল মানে ? মানে হয়তবা তোমার ওঁ কারো সাথের সম্পর্কের প্রতিফলন এটা । এই কথা শুনে অন্তিপা রাজের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে । এক রকমের ঘৃণা হয়ে যায় রাজের উপর ।
সবকিছু ছেড়ে অন্তিপা সূর্যকে নিয়ে চলে আসে । ১টা বাড়িতে উঠে । দিনের বেলা হাসপাতালে সারাদিন সূর্যকে নিয়ে ভালই সময় কাটত । মা আর বাবা অনেক বার এসেছিলেন অন্তিপাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য । কিন্তু অন্তিপা যায় নি । সূর্যকে নিয়েই একা বেঁচে থাকতে চেয়েছে । সূর্যকে কখনও বাবার আদর কি বুঝতে দেয়নি । সব চাহিদা পূরণ করেছে । সূর্য কখনও তার বাবার কাছে যেতেও চায়নি । অনেক কিছু সহ্য করে আজ এই পর্যায়ে আসে । ছেলেদের প্রতি একটা ঘৃণা এসে যায় আমার তাই আর বিয়ে করার চিন্তাও মাথায় নেইনি , বলে অন্তিপা । আমি সব সুখ বিসর্জন দিয়েছি সূর্য এর জন্য , সূর্যই আমার সব । চোখ মুছতে মুছতে বলল অন্তিপা ।
সব কথা শুনে পূজা অবাক হয়ে যায় । বলে তুইই হলি আসল নারী । যে প্রতিবাদ করতে জানে । আর নিজের ইচ্ছায় বাচতে পারে । আচ্ছারে আজ আমি যাই । আরেকদিন আসব আর তর সূর্যকে দেখে যাব । পূজা চলে যাওয়ার পরে অন্তিপার মনটা কেমন জানি হয়ে গেহে । মন খারাপ হয়ে গেছে । কেন জানি সূর্যকে দেখতে মন চাচ্ছে ।
রাত ১টা বাজে , সূর্য এখনও বাসায় এলনা । খুব চিন্তায় পরে গেছে অন্তিপা । কি হল আমার সূর্যের , এসব ভাবতে ভাবতে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ছে অন্তিপার । কত দুষ্ট ছিল সূর্য ।
হঠাৎ একটা ফোন আসল । কেও ওপর প্রান্ত থেকে বলছে যে সূর্য এক্সিডেন্ট করেছে । হাসপাতালে আছে । এ কথা শুনে অন্তিপা ছুটে যায় হাসপাতালে । গিয়ে দেখে তার সূর্য রক্ত ভেজা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে । মাকে কাছে ডেকে নিলো সূর্য ।
" মা , দেখো মনে করে ওষুধ খাবে । সবসময় খাবে । টাইম মেইন্টেইন করবে । তুমি তো আবার আমাকে ছাড়া খাওনা । এখন যে খেতে হবে মা । মা আমি যে আর বাচবনা । এই মুহূর্তে আর কারো জন্য না হোক তোমার জন্য বাচতে ইচ্ছা করছে মা । মা কেন এমন হল । সবই তো ঠিক ছিল " , সূর্য আস্তে আস্তে বলে চলল । অন্তিপা নিস্তব্ধ । কিছুই বলছেনা । শুধু চোখের পানি পড়ছে । সূর্য বলে মা আমাকে একটু আদর করনা প্লিজ । অন্তিপা আদর করছে আর সেই সুযোগেই ঘুমিয়ে গেলো সূর্য । সেই ছোট বেলার মত । কিন্তু এখন যে আর ঘুম থেকে উঠবেনা । একেবারে চলে গেছে সবাইকে ছেড়ে ।
অন্তিপা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে । বিশ্বাস করতে চায় না সূর্য নেই ওর মাঝে । সকালেই তো ওর কূলে মাথা রেখেছিল । সূর্য এর নিথর দেহের পাশে বসে অন্তিপা বলছে , " সব ছেড়ে এসেছিলামরে তকে নিয়ে । বাকিটা জীবন তকে নিয়ে কাটাতে চেয়েছিলাম । কেন চলে গেলি তর মাকে একা করে । এখন এই মা টা কিভাবে বাঁচবে । কি নিয়ে বাঁচবে ? সব এলোমেলো হয়ে গেলো । তকে ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে বাবা ? এটা কেমন বাস্তব ?
© Atisha Rahber
লেখকঃ আতিশা রাহবার
আলোচিত ব্লগ
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।