এস, এস , সি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছি, ৮ থেকে ১০ দিন হবে, কারো সাথে তেমন একটা কথাও হয়নি এখনও ভাল করে। আমি বসে আছি ক্লাস রুমে, একটা ক্লাস শেষ হয়েছে, টিচার মাত্র বেরিয়ে গেল, আমি কি করব , কি করব ভাবতে ভাবতে একটা বই বের করে বইয়ের দিকে তাকানর সাথে সাথে আমার মাথার উপর একটা থাপ্পর এসে পড়ল , এত জোরে যে আমার মাথা মোটামুটি ঘুরছে।
আর কানে শুনলাম একটা শব্দ 'হাই'
আমি আনেক কষ্টে মাথাটা ঘুরিয়ে দেখি আমাদের সাথে পড়ে একটা মেয়ে।
ওর নামও আমি জানিনা । আমি আনেক কষ্টে ওকে বললাম 'হাই'
ও আমার হাই শুনেছে কিনা আমি বুঝে ওঠার আগেই ও ধপাশ করে আমার পাশে বসে পরল, আর আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল এই তোমার নাম কি?
আমার নাম......... ওর আমার নাম শোনার সময় হলনা, আমাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে, তুমি কোথায় থাকো?
আমি............
.কোন স্কুল থেকে পাশ করেছো? তোমার ভাইবোন কয়জন? তোমার এস এস সি এর রেজাল্ট কি?
ততোক্ষণে আমি বুঝে গেছি ও আমার কোন উত্তর শুনবেনা, তাই আমি চুপ হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
এই চলো ক্যান্টিনে সিঙ্গারা খেয়ে আসি, আমি কিছু বলার আগেই ও আমার হাত ধরে টানছে আর বলছে আসো আসো।
আমি অবশেষে কোন রকমে বলতে পারলাম আরে দাড়াও আমার ব্যাগটা নিয়ে নি।
ততোক্ষণে ও আমাকে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে অর্ধেক নিয়ে গেছে।
ক্যান্টিনে গিয়েই ও একনাগাড়ে বোকে যাচ্ছে সুমন ভাইয়া, দারুন করে দু কাপ চা বানান,দুধ চিনি বেশি দিয়ে, আর দুটো গরম গরম শিঙ্গাড়া, শোনেন ওকে আমি আজ প্রথম চা খাওয়াতে নিয়ে এসেছি যদি আপনার চা খারাপ হয় তাহলে কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব হবেনা সুতরাং আপনার চায়ের উপর নির্ভর করছে আমাদের বন্ধুত্ব ।
সুমন ভাই কিছু শুনেছে বোলে আমার মনে হচ্ছেনা, উনি নিজের কাজে busy, সিঙ্গারা হাতে নিয়েই ও বলছে সিঙ্গারায় তেলাপোকা নেইতো ? অবশ্য থাকলেও কোন প্রব্লেম নেই ওটা ফেলে খেয়ে ফেলব i have no problem,ওর কথা শুনে আমার বমি হবার অবস্থা, আমি ভাবছি এই মেয়ের কি মাথা খারাপ নাকি?
এই সময় ওর মোবাইলে একটা ফোন এলো , আমাকে excuse me বোলে , ও ফোন রিসিভ করলো, হুম জান বল, না না না ... আজ না জান কাল যাবো আমি ওর আহ্ললাদি কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছি , অথচ ওর কোন খেয়াল ই নেই, এতক্ষন আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করেছিলাম, এখন কেন যেন ওর মুখটা আমার দেখতে ইচ্ছে হল, আমি তাকালাম ওর দিকে আর অবাক হয়ে দেখলাম কি সুন্দর আনন্দ ভরা চঞ্চল দুটি চোখ , মনে হচ্ছে , এই দুনিয়ায় ওর চেয়ে সুখী মানুষ আর একজনও নেই ।
ওকে ওকে জান আসছিতো বাবু , শুধু রাগ করছ, উম ম ম ম ম আআআ
কথা বলা শেষ করেই আবার আমাকে টানাটানি শুরু চলো তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,
চাঁ টা শেষ করে যাই ?
আরে ধুর রাখতো তোমার চা , বলেই হাত থেকে চায়ের কাপ টেনে নিয়ে নীচে রেখে বলল তারাতারি চলো ও আবার রেগে যাবে, ওর যা রাগ, ওর সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা গেঁটের কাছে এসে দেখি একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
এবার ও আমার হাত ছেরে দি্যে ছেলেটির পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল, এইটা হল রাকিব, আমার জান।
আমি একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে বললাম , হ্যালো রাকিব,
রাকিব বলল , কেমন আছেন?
ভালো, আপনি?
ভালো।
মনে মনে ভাবলাম , ভালো তো থাকবেন ই, এত চমৎকার একটা মেয়ে আপনাকে এতো ভালবাসে।
ওদের রিকসা যখন চলে যাচ্ছে , তখন ও দূর থেকে চিৎকার করে বলছে, এই তোমার নামটাই তো জানা হলনা,
নো প্রব্লেম , কাল............... .
এই ছিল শাকিলা।
যে কিনা তার চঞ্চলতার কারনে কখন ও হাঁটত না , সব সময় দৌড়াতো ।
এরপর ওর আমার বন্ধুত্ত ্তেমন হয়নি কারন ও এত মিশুক আর এত ভাল একটা মেয়ে ছিল যে ক্লাসের সবাই ওর ভক্ত ছিল।
সেখানে আমার মতো , চুপচাপ , বেরসিক, চশমি ওয়ালির ঠাই হয়নি।
কিন্তু আমি ওকে মনে মনে অনেক লাইক করতাম, এতো আনন্দিত একটা মেয়ের পাশে যতক্ষণ থাকা যায় নিজের কষ্ট ও ততক্ষণ ভুলে থাকা জায়।
এক্সাম এর আর ৪ মাস বাকি , তখন থেকে শাকিলা আর কলেজে আসেনা।
সবাই এক্সাম নিয়ে বিজি শাকিলার খবর নেওয়ার সময় হয়নি কার ও।
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
২য় দিনের পরীক্ষা শেষ করে আমি বেড়িয়েছি।
হঠাৎ দূর থেকে মনে হল শাকিলার মত দেখতে একটা মেয়ে, পরক্ষনেই মনে হল আরে না এই মেয়ে শাকিলা হতেই পারেনা, শাকিলা তো হাঁট তনা সবসময় দৌড়াতো এই মেয়ে তো হাঁটতেই পারছেনা, মনে হচ্ছে এক্ষণই পড়ে যাবে।
কাছে গিয়ে দেখলাম আরে এতো শাকিলাই!!!!!
আমি আনন্দিত গলায় বললাম হাই শাকিলা , কি খবর তোমার? কোন খোঁজ নেই , এতদিন কলেজে আসনি কেন? কেমন আছ?
ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে , মনে হচ্ছে ও আমাকে চিনতে পারছেনা,
আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম,
এটা শাকিলা তো? নাকি ওর জমজ বোন আছে?
ও আমাকে চিনেছে কিনা বুঝতে পারলাম না।
বলল ভাল আছি।
যাই আমার হাজব্যানড আমাকে নিতে এসেছে , বাইরে দাড়িয়ে আছে, রাগ করবে দেরি হলে।
আমি বললাম ও তুমি বিয়ে করেছ? congratulation, কে রাকিব ভাই বাইরে দারিয়ে আছে?
না, রাকিবের সাথে আমার বিয়ে হয়নি।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে
যাই
বলে ও হেঁটে যাচ্ছে!
আমার পা মাটিতে শক্ত হয়ে আটকে গেছে আমি নড়তে পারছিনা, আমি তাকিয়ে আছি ওর হেঁটে যাওয়ার দিকে।
এ টা কি কোন জীবিত মানুষের হাঁটা?
মনে হচ্ছে কবর থেকে উঠে আসা কোন মৃত মানুষ অনেক কষ্টে পা ফেলছে।
আমি বুঝলাম, শাকিলা মরে গেছে।
এটা অন্য কোন শাকিলা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৬