somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি বাবু ফরিদী ও বন্ধুসেবক ব্রহ্মচারীর লাশের উপর দাঁড়িয়ে শ্রীঅঙ্গনে উৎসব মিলেছে!

০৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাড়ীর পাশেই শ্রীঅঙ্গনে উৎসব হচ্ছে, মেলা হচ্ছে, অষ্টকালীন লীলাকীর্তন হচ্ছে। কিন্তু আমরা মা-ছেলে বাড়ীতে। হামলার শিকার হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয়নি। মন আর শরীর কিছুই ভালো নেই। ঐ শ্রীঅঙ্গন কমিটির ইন্ধনেই প্রভাবশালীদের নির্দেশে আমাদের উপর আবারও হামলা হয়েছে গত মঙ্গলবার। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি। মাকে টিটেনাসের টিকা দিতে হয়েছে হামলার শিকার হয়ে। তাই মন থেকে এসব উৎসব, আনন্দ, ভক্তিশ্রদ্ধা উঠে গেছে।

প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহ ওরফে কবি বাবু ফরিদী উৎসবের কদিন নিরামিষ খেতেন। যেহেতু পাশেই শ্রীঅঙ্গন, তাই মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার্থে এই কদিন আমাদের বাড়ীতে কোনো আমিষ রান্না হতো না। গত মঙ্গলবার হামলার শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এই কদিন নিরামিষ খেতাম। কিন্তু মঙ্গলবার আমার চাকুরীর ৭ম বর্ষে পদার্পণের দিন সহকর্মীদের সাথে মিলিত হয়ে অনেকটা মনের ক্ষোভ থেকেই সেই নিরামিষ ব্রত ভাঙতে বাধ্য হই। কী লাভ এসব করে? দিনশেষে আমাদেরকে তো নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে একঘরে করেই রেখেছে! তবে বাড়ীতে মা এখন নিরামিষ খান, আমিষ রান্না হচ্ছে না উৎসবের কদিন। তাঁকে কিছুতেই বুঝানো যায় না, এতটাই সহজসরল আর ধার্মিক আমার মা।

আমার বাবা উক্ত শ্রীঅঙ্গন কমিটির কার্যকরী সদস্য ছিলেন আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগেও, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অমর বন্ধু ব্রহ্মচারীর আমলে।একাত্তরে শ্রীঅঙ্গনের লুট হয়ে যাওয়া বিশাল সাইজের কড়াইগুলো আমার বাবাই ফিরিয়ে এনেছিলেন তুলাগ্রামের বিভিন্ন লুটেরার বাড়ী থেকে। আমরা ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের তুলাগ্রামের জমিদার ছিলাম। শ্রীঅঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধকালীন ধ্বংসযজ্ঞ ও সাধু হত্যার ঘটনা প্রথম উঠে আসে আমার বাবার 'কমলের একাত্তর' বইতেই। শ্রীঅঙ্গনের আজকের এই অবস্থানের পিছে আমার বাবার অবদান অনস্বীকার্য হলেও জমি নিয়ে বিরোধের কারণে মূলত সেগুলো মন্দির কমিটি স্বীকার করে না। ২০০৮ সালে আমার বাবার রহস্যজনক মৃত্যু হয় এই শ্রীঅঙ্গন দক্ষিণ পল্লীতেই প্রতিবেশীর বাসায় রহস্যজনকভাবে, আমাদেরকে মামলা করতে দেয়নি। মন বলে উক্ত মৃত্যুর পিছে শ্রীঅঙ্গন কর্তৃপক্ষ জড়িত।

আমার মা ডা. কৃষ্ণা মিত্র (Krishna Guho) দীর্ঘ উনিশ বছর মাত্র ৩শ থেকে ৫শ টাকা মাসিক বেতনে শুধু এই শ্রীঅঙ্গনের দাতব্য চিকিৎসালয়েই মানবসেবা করে গেছেন, অন্য কোথাও চেম্বার দেননি। অন্যায়ভাবে উক্ত চেম্বার ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমার বাড়ীর সামনের মন্দিরে মায়ের শিক্ষকতাও বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অথচ কয়েকবার দক্ষিণ অঞ্চলের সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন মা এই বুড়ো বয়সেও। গত ৩+ বছর ধরে মাকে কর্মহীন করে রেখেছে, হতাশা আর নির্যাতনের শিকার মা দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছে আমার চোখের সামনে আর আমি কিছুই করতে পারছি না। শ্রীঅঙ্গন আমার সরকারি হয়ে যাওয়া জমিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে অন্যায়ভাবে মার্কেট, ভক্তাবাস করে যাচ্ছে একের পর এক আর আমি প্রশাসন-পুলিশকে জানিয়ে যাচ্ছি শুধু প্রতিকারের আশায়।

২০১৯ সালে শ্রীঅঙ্গনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়। লাশের পা মাটিতে ছিলো আর রুমের দরজা বাইরে থেকে খোলা-বন্ধ করা যায়। বুঝাই যায় এটা আত্মহত্যা নয়। তারপরেও উক্ত মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন আমার নেতৃত্বে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে লাশটা গুম করে ফেলত এমপি ঘনিষ্ট প্রভাবশালীরা। আমাদের দাবির মুখে Bandhu Sabok ব্রহ্মচারীকে প্রভু জগদ্বন্ধুর সামনেই সমাহিত করা হয়। কিন্তু মামলা দিতে বাধ্য হলেও থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার ভয়ে শ্রীঅঙ্গন কর্তৃপক্ষ উক্ত অপমৃত্যুর মামলা সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়নি। তখন আমি সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয়দের সমর্থনে রুখে না দাঁড়ালে শ্রীঅঙ্গন সে যাত্রায় জনপ্রতিরোধ থেকে বাঁচত না এত সহজে একজন আইনজ্ঞ এলএলবি সাধুর মৃত্যুর দায় থেকে(বিস্তারিত কমেন্টের লিংকে)। আমি হত্যাকারীর বিচার চেয়ে শ্রীঅঙ্গন কর্তৃপক্ষকে নিজের অজান্তেই কালক্ষেপণ করে সেইফ এক্সিট নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি! নাহলে অন্য ধর্মাবলম্বীরা এসে এর বিচার চাইতো, এত সহজে পাড় পেত না তারা। তখন মামলা হলেও পরে তা কালক্ষেপণ করে প্রভাব খাটিয়ে ডিসমিস করে দেওয়া হয়েছে। সেবক মামার ভাই উক্ত মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করতেও ভয় পান।

এসব কারণেই গত ৩ বছর ধরেই শ্রীঅঙ্গনে যাই না আর। কেউ আমাকে মনেও রাখেনি। কিন্তু আমার মা সারাটা জীবন কাটিয়েছেন এখানে, তাই শত নির্যাতন-কটূকথা হজম করেও না গিয়ে থাকতে পারেন না। প্রভু যদি সত্যিই থাকতেন ওখানে, তাহলে এত অন্যায়-অনিয়ম-লুট-অবিচার-লাশের মিছিলের বিচার করতেন। বিচার করতেন আমাদের ঘর ভেঙে রাখার, সংস্কার করতে না দেওয়ার, আমার চাকরির ক্ষতি করার, আমাদের জীবন ধ্বংসকারীদের। প্রভু যদি থাকতেন ঐ মন্দিরে, তবে কত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের এই আঙিনাকে এভাবে এত অট্টালিকাঘেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে দিতেন না। এখন যারা শ্রীঅঙ্গনে যায়, তারা কেউ যায় ব্যবসার স্বার্থে, কেউ যায় অবৈধ অর্থ থেকে সামান্য দান দেখিয়ে বাহবা পেতে, কেউ যায় শহরে ঘুরতে যাওয়ার তেমন জায়গা আর নেই বিধায়। আমার মনে হয় খুব সামান্যই আছেন যারা ঈশ্বরকে ভালোবেসে, প্রভুকে ভালোবেসে ওখানে যান। প্রভুকে দেখতে তাই ভারতে যাই সুযোগ পেলেই।

-- দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×