somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার কি হ*ত্যাকাণ্ডের শিকার?

২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারদাকে কি পরিকল্পিতভাবে পি*টিয়ে পানিতে ডুবিয়ে খু*ন করে আর্থিক অনটন, কর্মস্থলের অপ্রাপ্তি ইত্যাদি কাছ থেকে দেখা কাউকে দিয়ে তাঁর নামে তাঁর মতো করে লিখিয়ে নিয়ে এটাকে আত্মহ*ত্যা বলে চালানো হচ্ছে? একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের মতো বুদ্ধিজীবী নি*ধন শুরু হয়ে গেলো নাকি?
.
বিভুদার ছেলের ভাষ্যমতে তিনি হাসিমুখে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন অন্যদিনের মতই। মেয়ের সন্তানের সঙ্গে খেলতেও ভুলে যাননি। যে লোকটি হাসিমুখে খেলেধুলে স্ত্রীকে বিকেলে ফেরার সময় বলে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন, তিনি আত্মহ*ত্যার মানসিকতা নিয়ে বের হননি-- এটা নিশ্চিত। আবার তিনি নাকি মোবাইল বাসায় রেখে গিয়েছিলেন এবং সেটি বন্ধ ছিলো! ছেলে জানিয়েছে, তিনি নাকি মাঝেমাঝেই মোবাইল রেখে যেতেন বাড়িতে। লাশের নাক দিয়ে নাকি রক্ত ঝরছিলো, গায়ে নাকি একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিলো!
.
এসব দেখে আমার সন্দেহ হচ্ছে, কেউ হয়তো তাঁকে অফিসে যাওয়ার আগে ফোন করে কিছু আর্থিক সাহায্য বা প্রাপ্য টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিচে ডেকেছিলেন। হয়তো তাঁকে তাঁর কোনো লেখার জন্য উপরের নির্দেশে ছুটিতে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠানো হয়েছিলো। হয়তো ৭ দিনের ছুটি কাটিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে কেউ তাঁকে অর্থের যোগানদাতার কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলো। হয়তো তিনি মোবাইল ভুলে বাসায় রেখে গেছেন। এই বয়সে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তাছাড়া তিনি নাকি অসুস্থও ছিলেন।
.
৭১ বছর বয়সের দুই-দুটি মেধাবি সন্তানের গর্বিত পিতা কেন সুইসা*ইডাল কিছু করবেন? আমার বিশ্বাস হয় না। এই বয়সে তাঁর এতটা হতাশ হওয়ার কারণ দেখি না। অফিস বেতন কম যদি দিয়েও থাকে, গ্রামে জমিজমা না থাক, মেয়ের সরকারি চাকরির বেতন তো আছে! ছেলে বুয়েটের গ্রাজুয়েট, চাকরি না পাক, বুয়েটের ছেলের কি টিউশনির অভাব হয়? লাখ টাকাও কামায় তারা পড়িয়ে। তাছাড়া তিনি দেশের সর্বোচ্চপঠিত ৫টির একটি পত্রিকায় সম্মানজনক পদে ছিলেন। ৫০ বছর এভাবেই চলতে পারলেন, আর এখনই সময় হলো স্বেচ্ছায় সব ছাড়ার? তাও আবার এই সময়ে শেখ হাসিনার সমালোচনা করে?
.
এমন অনেক কারণেই আমার কাছে এই 'শেষ চিঠি'র গল্প বিশ্বাস হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে কারো লেখা পড়লে তার মতো করে লেখা যায়। তাঁর আশপাশে থাকলে তাঁর সমস্যার কথাও জানা যায়। আবার এমনও হতে পারে অফিসে হয়তো তিনি ইমেইল আইডি থেকে লগ আউট করতে ভুলে গেছেন! লগ আউট করলেও অফিসের সিস্টেম চাইলে পাসওয়ার্ড পেয়ে যেতেই পারে। তাই, 'খোলা চিঠি'টা যে তাঁরই, তা নিশ্চিত হতে পারছি না।
.
আমি নিজেও সংবাদপত্রের এমন বঞ্চনার শিকার। যখন সাংবাদিক ছিলাম, নিয়মিত লিখেছি, তখনও হতাশা ছিলো। ভালো একটা জামাকাপড় কিনতে পারতাম না, ভালো একটা জুতা পরতে পারতাম না। বাকিতে খাই না বলে এক-দুই বেলা খেয়ে থাকতাম,তাও জগন্নাথ হলে। সৎ সাংবাদিকতা আসলেই অনেক কষ্টের, মেধাবিদের টিকতে দেয় না তেলবাজরা, দলবাজরাই সাধারণত বড় চেয়ারে বসে-- সব ঠিক আছে। আর আছে বলেই তো প্রথম আলোর মতো প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বিসিএস দিয়ে চলে এসেছিলাম! কিন্তু এভাবে ক'জন আসতে পারে এটাও ভাবার আছে।
.
এখন আমার অনেক সময়। চাইলেই প্রচুর লিখতে পারি। কিন্তু অতিরিক্ত সত্য বলি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকি আর প্রতিবাদী বিধায় অনেকেই আমাকে পছন্দ করে না। প্রায় সব পত্রিকা-চ্যানেল থেকে আমাকে অঘোষিতভাবে ব্যা*ন করে রাখা হয়েছে। আবার বারবার বদলি, তিরস্কার, নির্যাতন সব একযোগে চলছে। হামলার শিকারও হয়েছি। বেতন বারবার আটকে দেওয়া হয়েছে। এখনও অনেক মাসের বেতন পাই না। কয়েক জায়গায় লেখার জন্য যোগাযোগ করেছি, সাবেক সম্পাদক মতি ভাইকে ম্যাসেজ দিয়েছি, লেখালেখি আবার শুরু করার ইচ্ছায় তাঁর পিএসের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সাড়া পাইনি। আমি প্রাইভেট পড়াই না, আমার কাছে রাজস্ব খাত থেকে বেতন তুলে আবার ব্যাচ পড়ানোটা অসমমানজনক ও নীতিবিরুদ্ধ লাগে। তাই বলে এভাবে আয় ছাড়া কতকাল আর থাকা যায়? এমন অভিজ্ঞতা আমার এই জীবনে অনেক হয়েছে। কিন্তু আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে পারিনি। আমার বাবার বয়সী হয়ে (তাঁর মতো একই বছর আমার বাবারও জন্মসাল) নাতি, মেয়ে, ছেলে ও স্ত্রী এবং অজস্র বন্ধুবান্ধব রেখে বিভুদা কী করে পারবেন? এটা মানার মতো না। তিনি গ্রামের ছেলে। স্বেচ্ছায় ঝাপ দিলে ছেলেমেয়ের কথা মনে করে সাঁতরে উঠে আসতেন। ছেলে বলেছে আমার বাবার মত তার নাকেও রক্ত পাওয়া গেছে আর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
.
আমার বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট কমল কৃষ্ণ গুহ ওরফে কবি বাবু ফরিদীও সারাজীবন নানামুখী প্রতিভার সাক্ষর রেখে শেষ জীবনে হতাশায় ভুগতেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে ২০০২ সালের দিকে অনেকটা দেরীতে আইন পেশায় যোগ দিয়ে প্রাপ্য সম্মান পেতেন না (যদিও প্র‍্যাক্টিসিং সনদ ছিলো অনেক আগে থেকেই, ১৯৮৫ থেকেই)। তিনি টাকা চেয়ে নিতে পারতেন না। ছেচরামি করতে পারতেন না। উলটো নিজের পয়সায় চা খাওয়াতেন, বাস ভাড়া না থাকলে মক্কেলকে সেটাও দিয়ে দিতেন। পেশকার ফোন করে মায়ের কাছে অভিযোগ দিতো যে বাবা নিজেও নাকি খেতেন না আর তাদেরকেও খেতে দিতেন না। সরকারি চাকরিতেও অসম্ভব রকমের সৎ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করেও সনদের জন্য আবেদন করেননি, কোনো সুবিধার জন্য যুদ্ধে যাননি বলে। সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণা থাকলেও শেষের দিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। সাংবাদিকতাটা তলে তলে চালিয়ে নিচ্ছিলেন কিনা আগের মত, জানি না। সারাজীবন ভাইবোনদের মানুষ করে বিয়েথা দিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁর ভেজা লাশটাও এভাবে এক প্রতিবেশী ননী গোপাল সরকারের বাসায় উদ্ধার হয়। তখন এলাকাবাসীর সাথে শত্রুতার কথা আমরা সেভাবে অবগত ছিলাম না, যা পরে আস্তে আস্তে তাঁর লাশ বিনা তদন্তে দাহ করে ফেলার পর আমরা জানতে পারি। এখন তো অনেক কিছুই লিখি ফেসবুকে, জমিজমার মালিকানাসহ নানা দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। তখন নাবালক ছিলাম, সেন্সও ছিলো না। প্রতিবেশীরা ভালো অভিনয় করেছে, বলেছে বাবা নাকি হতাশা থেকে ধূমপান করতো, তাই নাকি স্ট্রোক করেছে! কথা হচ্ছে, তাই যদি হয়ে থাকবে তো এত বড় একজন মানুষের মৃত্যুর পর কেন পুলিশ আসবে না? কেন আমরা চাওয়ার পরেও ময়নাতদন্ত হবে না? কেন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেই সময় দুটি হাসপাতালে ডাক্তার থাকবে না? কেন আমাদেরকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে যেতে দেওয়া হলো না? কেন আজও আমরা নির্যাতিত?
.
এমন নানা প্রশ্নই মাথায় ঘুরে। বিভুদার ছেলে ও স্বজনদেরও আজ থেকে ঘুরবে। সুষ্ঠু তদন্ত হোক। বিভুদার কলরেকর্ড চেক করা হোক। বের হয়ে যাওয়ার আগে তিনি কার সাথে কথা বলেছিলেন? কার বাইকে উঠেছিলেন? নদীতে গেলেন কী করে? একদিন না একদিন সত্যি প্রকাশ পাবেই। বিভুদার ও আমার বাবার আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।
দেব দুলাল গুহ'র নিপুণ কথন

সংযুক্তি:
বিভুদার মতো আমার বাবা কবি বাবু ফরিদীও আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলমে খুব জনপ্রিয়মুখ ছিলেন। সরকারি চাকরি করেও তিনি লিখেছিলেন:

"খুব খেয়াল ভাই, খুব খেয়াল!
সামনে গর্ত, পেছনে শেয়াল।"
পরিবার যা বলছে: https://www.facebook.com/share/v/14J5LftMbr4/



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৩:২৭
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×