প্রিয় অপর্ণা,
আচ্ছা তোমাকে কি কখনো 'তোত্তোচান' বইটার কথা বলেছি? বইটা জাপানি ভাষায় লেখা।লেখকের নাম তেৎসুকো করোয়ানাগি।আমি পড়েছিলাম চৈতি রহমানের অনুবাদ।অসম্ভব মিষ্টি একটা বই।প্রতিটা পাতা ইনোসেন্সে ভরা।বইটা মাকে সাজেস্ট করেছিলাম।মা ও বেশ রসিয়ে রসিয়ে বইটা পড়ছিল।আমার অপারেশনের সময় মা বইটা হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছিল।
ছোট বই।মা সময়ও তেমন পায় না।তাই বইটা এখনো শেষ হয় নি।গত দুই দিন ধরে মা বইটা খুঁজে পাচ্ছে না।কই যেন হারিয়ে ফেলেছে।তবে ঘরেই আছে।এই হারিয়ে যাওয়া বই নিয়ে মায়ের কষ্টের অন্ত নেই।আফসোস করছে বইটা শেষ করতে পারে নি বলে।তার চেয়ে বেশি কাজ করছে তার অপরাধবোধ।মা জানে বই নিয়ে আমি খুব সেন্সসেটিভ।কিন্তু কোনো অদ্ভুত কারণে এই হারিয়ে ফেলা বইটা নিয়ে আমি কোনো রিএক্ট-ই করি নি।হয়তো বইটা ঘরেই রয়েছে বলে।
আজ সকালে পল্টন গিয়েছিলাম।মুক্তি ভবনে একটা প্রশিক্ষণ সভা ছিল।আমি দুপুরের মধ্যেই চলে এসেছি।পল্টন বায়তুল মোকারমের অই দিকটা যেন রণক্ষেত্র।যুদ্ধের প্রস্তুতি।মোড়ে মোড়ে পুলিশ বিজিবি।রোদও পড়েছে খুব। পল্টন থেকে গেলে একটা ফ্যাসাদে পড়লেও পড়তে পারতাম।আর এমনিও প্রশিক্ষনের বক্তৃতা ভালো লাগছিল না।তাই তাড়াতাড়ি চলে আসা।
ঘরে ফিরে মণীন্দ্র গুপ্তের 'অক্ষয় মালবেরি' নামে একটা বই শুরু করেছি।অদ্ভুত এক মায়া দিয়ে লেখা বইটা।বইটা পড়ে তোমার কথা মনে পড়ছে।কেন বুঝতে পারছি না।আমি চেষ্টা করি প্রতিটা অনুভূতির-ই পিছনের কারণটা খুঁজে বের করতে।বেশির ভাগ সময়ই কারণটা বের করতে পারি না।
এইখানে লেখকের মাকে নিয়ে একটা অধ্যায় রয়েছে।তার ভাষায় 'আমাদের চেনাশোনা,ভালোবাসা হবার আগেই মা যখন মারা গেলেন তখন তার বয়স উনিশ বছর,আর আমার দশ মাস।' এ জায়গা পড়ে কেন জানি তোমার মুখ চোখের সামনে ভাসছে।মায়ের মুখের মতন একটা আলাদা মায়া কি তোমার মাঝেও ছিল? বা এখনো আছে?আমি তো জানি না।তুমি জানলে জানিও।
লক্ষী হয়ে থেকো কেমন? আর শরীরের যত্ন নিও।'ঘরে বাইরে' উপন্যাসটা শেষ করেছো?আমি মাঝামাঝি আছি।এখন পর্যন্ত আমার কিন্তু সন্দীপকে লম্পট-ই মনে হচ্ছে।তোমার কেমন লাগলো জানিও।
ইতি-
অপু
(২৮/০৭/২০২৩)