somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরে ফেরার ডায়েরী। পর্ব-৫।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থানঃ হংকং এয়ারপোর্ট
সময়ঃ ডিসেম্বর ৭, ভোর ছয়টা।


এখন ফিরে যাবার পর্ব। শেষ হয়ে গেল দেশে কাটানো ঝটিকা সফর। কেমন লেগেছিল সব মিলিয়ে? ভাল, খুব ভাল।

এবারই প্রথম একা একা এসেছিলাম দেশে। যেহেতু ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছিল দিনগুলো, তাই আমেরিকায় রেখে আসা পরিবারের মানুষজনদেরকে মিস করার সময় পাইনি, কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে ঝিলিক দিয়ে গেছে ভয়াবহ শূন্যতাবোধ। যাকগে-আবার তো ফিরে যাচ্ছি ওদের কাছে, আবার চলে যাচ্ছি নির্বাসনের ভুবনে।

যে কনফারেনসটিতে এসেছিলাম, তার কথা অল্প একটু বলি। এটি সম্ভব হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করা একজন বিজ্ঞানীর উদ্যোগে। ভদ্রলোক বয়সী মানুষ, কিন্তু তার পরেও তার উদ্যম দেখে লজ্জা পাই। আমরা কিইই বা করছি তার তুলনায়। তারই প্রচেষ্টায় উড়ে এসেছিলেন দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কিছু মানুষ। তারা বললেন কত কিছু নিয়ে।

এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু ঠিক বিজ্ঞান ছিলনা। জৈবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে কি কি আইনগত সমস্যা আসতে পারে, তা নিয়েই ছিল এবারের কথোপকথন। সবাই বারেবারে বললেন একই কথা। সরকার যদি এই উদ্যোগকে সহায়তা না করে, তাহলে এর কিসসুই সফল হবে না।

বলা বাহুল্য সরকার কিছুই করছে না। তাদেরকে কি করতে হবে, এই প্রশ্নও উঠেছিল। সরকারকে লালফিতার দৌরাত্ম কমাতে হবে, সরকারকে সহজ সাপোর্টিভ আইন বানাতে হবে, সরকারকে বসতে হবে বিজ্ঞানীদের সাথে। দেশীয় বিজ্ঞানীরা বারবার এসে বলে গেলেন হতাশার কথা, বললেন কত সম্ভাবনাময় আমাদের দেশের জৈবপ্রযুক্তির ভবিষ্যত, কিন্তু কোনদিকেই এগোনো যাচ্ছেনা।

আমার প্রেজেন্টশনটি ছিল দ্বিতীয় দিন বিকেলে। দুপুরের দিকে ফোন এলো এক বন্ধুর।
‘কিরে ভয় লাগছে?’
‘কিসের ভয়?’
‘ওমা-আর ক’ঘন্টা পর তোকে বলতে হবে। ভয় লাগার বিষয়ই তো।’
‘আরে রাখ- কত লেকচার দিলাম এ পর্যন্ত। এসব এখন ডালভাত হয়ে গেছে।’
‘শোন-যে কারণে ফোন করলাম। ভয় পাসনে, আমরা আসছি।’
‘আসছি মানে?’
‘আসছি মানে কামিং। আরো দু তিন জনকে ফোন করেছি, তারাও এসে পড়বে। তোকে একটা মোর‌্যাল সাপোর্ট দিতে হবে না?’
‘এত কষ্ট করে এই এত ট্র্যাফিক জ্যামের ধকল সামলে এতদূর আসবার কোন দরকার আছে?’

টেলিফোনের তারে বন্ধুর কড়া ধমক ভেসে আসে। ‘তুই থামতো। তুই বলবি, আর আমরা থাকবো না তা কি হয়? আর তাছাড়া তুই যে পরিমাণে গর্ধভ তাতে একা একা তুই যে কি বলবি তার কোন ঠিক আছে? তোর নাহয় কোন মান সম্মান নেই, কিন্তু আমাদের তো আছে। ও শোন, ইফতিখারকেও নিয়ে আসছি। সে সিঙ্গাপুর থেকে মাত্র ক’দিনের জন্যে দেশে এসেছে, সেও তোর সাথে দেখা করতে চায়।’

বরাবরের মতো কৃতজ্ঞতায় আমার চোখে জল আসে। এইসব মানুষগুলোকে আমি কি দিয়ে আপ্যায়ন করি?

আমার বক্তব্যের কিছুক্ষন পর ঘাড়ে টোকা পড়ে। পিছনে বসে আছে তিন মূর্তি। ইফতিখারকে দেখে চিনতে পারিনে। এত পোংটা ছেলেটির এ কি অবস্থা। মুখে চাপদাড়ি, মাথায় সাদা টুপি, মুখে একটা সদাস্মিত হাসি। ছেলেটি কি পীর-টির হয়ে গেল নাকি? সে মুসাফাহ করার জন্য হাত বাড়ায়। তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,‘ভাবী কেমন আছে?’
‘ওই শালা-আগে না আমার খবর নিবি? তারপর আমার বৌয়ের। পরের বৌয়ের ব্যাপারে এত উৎসাহ কেনরে?’
সে মিটিমিটি হাসে,‘বুঝিস না কেন? পুরনো অভ্যেস।’

স্টেজ থেকে সেশনের চেয়ারপার্সন আমাদের দিকে কটমট করে তাকাতে গিয়ে মুচকি হেসে ফেলেন। কেননা উনিও আমাদের শিক্ষক ছিলেন এককালে। আমাদের খাসলত উনার ভালই জানা আছে। এমনতরো কটমটে দৃষ্টিতে উনি আমাদের দিকে বহুদিন তাকিয়েছেন, তাতে খুব একটা কাজ হয়নি।

আমার প্রেজেন্টশনটা শেষ করেই আমরা বেরিয়ে পড়ি ঘর থেকে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চা খাই। আহা-সেইসব পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই পুরনো দিনের সম্মানে আমরা সবাই চায়ের সাথে একটি করে কলাও খেয়ে ফেলি। এককালের আমাদের স্টেপল ফুড।

সিদ্ধান্ত হয় যে পরের দিন আমাকে কনফারেনস বাদ দিতে হবে। আমি আঁতকে উঠি।

’বলিস কি? উনারা আমাকে এত খাতির যত্ন করছেন, আমাকে কিনা শেরাটনে রাখছেন, ভালমন্দ খাওয়াচ্ছেন, আর আমি বেইমানের মতো কনফারেনস বাদ দেবো। কেন?’
‘কেননা আমরা সবাই হীরার অফিসে যাচ্ছি। ওখানে বসে দরজা বন্ধ করে গল্প হবে।’
‘কেন? দরজা বন্ধ কেন? দরজা খুলে গল্প করলে কি হবে?’
ওরা আমার দিকে কটমট করে তাকায়। ‘দরজা খোলা রাখলে সব আনন্দ উড়ে যাবে। এত প্রশ্নের তোর দরকার কি? তোকে আসতে বলেছি, আসবি। ব্যাস।’

বিবেকের তাড়নায় পরদিন শেরাটন থেকে বাক্স-প্যাটরা নিয়ে কেটে পড়ি। চেক-আউটের সময় কাউন্টারের ভদ্রলোকটি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
‘আজই চলে যাচ্ছেন? আপনি কিন্তু আরো একদিন থাকতে পারতেন।’
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ‘ভাইরে-আমার মতোন বন্ধু থাকলে আমার দুঃখ বুঝতেন।’
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:২২
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×