গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে হিড়িক পরে গেছে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আক্রমনের শিকার মানুষগুলোর ছবি দেয়ার।একেকটার চেয়ে একেকটা বীভৎস।নিউজফিড কান্নায় ভাসিয়ে ফেলছেন সবাই এবং যা আন্দাজ করেছিলাম ঠিক তেমনটাই ঘটলো পরে।খেলা শুরু হলে সবাই খেলা নিয়ে আবার আবেগাক্রান্ত!ফিলিস্তিন ইস্যুতে চে’ গেভারা বনে যাওয়া একেকজন খেলার সময় কিংবা তার খানিকবাদেই ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা ইস্যুতে রোমিও! পণ্য বর্জন-টর্জন করে হুলস্থূল কান্ড বাধিয়ে ফেলার হুমকিতেও ফেসবুক গরম।ফেসবুক এই ফাঁকে যদি কোন একটা অ্যাপস বের করত যে ‘লেটস সী হাউ মেনি বোম্বস ইউ ক্যান ব্লাস্ট অন ইসরাইল’ তাহলে হয়তো পিসিতে বসেই ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিত! বেরসিক জুকারবার্গ!মামা পাব্লিক সেন্টিমেন্টও বুঝেনা। যাকগে,এখন কিছু অপ্রিয় কথা বলি।সত্যি বলতে কি আপনার-আমার এসব নাকি কান্নায় ফেসবুক ভাসিয়ে ফেললে ইসরাইলের কোন বা*ও যাবে আসবেনা(তাও যদি ব্যপারটাতে হুযুগ ছাড়া কিছু থাকতো তাহলেও কথা ছিলো!)।ইসরাইলের অভিভাবক কিন্তু ইউএসএ।যাদের মদদে এবং সহযোগিতায় ইসরাইল এসব বর্বর কর্মকান্ড চালাচ্ছে।আমাদের সবার এসব কান্নাকাটি যদি বিশ্বমানবতাকে জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে হয় যার মাধ্যমে ইসরাইলের উপর প্রেশার দেয়া যাবে এই সহিংসতা বন্ধের জন্য, তাহলে জেনে রাখুন এত অন্যায়, এত অবিচার,নৃশংসতার পরও জাতিসংঘ নামক একটা পৌরুষত্বহীন বলদ কিন্ত তেমন কিছুই করছেনা মাঝেমাঝে দু-একটা ‘শান্তি আলোচনা’-র ব্যবস্থা করা ছাড়া।ব্যপারটা এরকম যে ইসরাইল ইচ্ছামত কয়েকদিন ফিলিস্তিনী পাখি (ফিলিস্তিনীদের এখন আর মানুষ মনে হয়না!)শিকার করবে আর তারপর জাতিসংঘ দু’একজন ‘বিশ্বন্যাতা’র মাধ্যমে একটা ‘শান্তি আলোচনা’য় দু’ পক্ষকে নিয়ে বসবে। এরপর ইসরাইলকে বলবে, ‘বাবা,ঠিক আছে।অনেক হইছে।আপাতত একটু রেস্ট নে।পরে আবার সময় হলে দেখা যাবে।’আর ফিলিস্তিন’কে বলবে, ‘সোনামনি রাগ করেনা।আমি ওদের বুঝিয়ে বলেছি। কিছু করবেনা আর।যা হইছে হইছে।আমরা আমরাইতো! যাও এখন ঘরে যাও।আমরা কিছু ফিডার পাঠাচ্ছি ওগুলো সবাই ভাগ করে খেও।’আর সবশেষে বিশ্বকে বুঝাবে যে তারা মানবতার বা* ছিঁড়ে ফেলছে।যার জন্য বারাক ওবামার মত দু-একজনকে একটা করে নোবেল প্রাইজ দেয়াই যায়!এইতো গেল জাতিসংঘের কথা।মুসলমান হিসেবে যদি আশা করেন যে অন্ততঃ আরবদের তাদের পাশে থাকা উচিত তাহলে আরো বড় ভুল করছেন।এই মাথামোটাদের নিয়ে কিছু আর বললাম না।মাথাটা এমনিতেই গরম।আর গরম করতে চাচ্ছিনা।তবে পরের অংশে সামান্য একটু বলব।
অতএব,চিল্লাচিল্লি কিংবা কান্নাকাটি করে কোন লাভ নাই।আগেও তো করেছেন অনেক। কিছু হয়েছে কি? তার চেয়ে ফিলিস্তিনের ওই মায়ের জন্য কিছু করুন যে তার সন্তানকে হারিয়েছে কিংবা ওই এতিম পঙ্গু শিশুটা যে কিনা জানেইনা যে তার পরিবারের কেউ আর বেঁচে নেই।পারবেন তাদের জন্য কিছু করতে?পারবেন নিজের দল বিশ্বকাপ জিতলেও নির্বিকার থাকতে শুধুমাত্র ওই মানুষগুলোর প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য?একটু্খানি স্যা্ক্রিফাইস?পারবেন ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এসে তাদের জন্য একদিন রাস্তায় সমবেত হতে?নিজের আয়েশী ইফতারের লিস্ট থেকে কিছু টাকা ওদের জন্য সেভ করতে কিংবা নিজের ঈদ শপিং থেকে অন্ততঃ কিছু কম খরচ করে সেটা ওদের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে?যদি পারেন তবেই তাদের জন্য কিছু করা হবে।
আরেকটা কথা।ফিলিস্তিনে কি শুধু মুসলমান থাকে?উইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেখলাম ফিলিস্তিনে ৬ পার্সেন্টের মত খ্রিষ্টানও বাস করে।ইসরাইল বোমা মারলে কি শুধু মুসলমানই মরে? কিংবা মুসলমান বাদে অন্য কেউ মরলে কি আপনার সহানুভূতি থাকবেনা তার বা তাদের প্রতি?তাহলে কেন শুধু মুসলমান মরছে এই কথা বলে সহানুভূতি দেখাচ্ছেন?মুসলমান না বলে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষ বলা যায়না?আমাদের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্যই কিন্তু আজ মানুষে মানুষে এত অবিশ্বাস;এত বিভাজন।আপনার মন কাঁদেনা যখন আপনার বাড়ির পাশের হিন্দু ঘরে আগুন দেয়া হয়,আপনার চোখে পানি আসেনা যখন ইউক্রেনে অমুসলিম বেসামরিক লোকেরা মারা যায় রুশ সেনাবাহিনীর হাতে।আপনার মুসলমান সত্বা কেঁপে উঠে শুধু ইসরাইল ফিলিস্তিনে বোমা ফেললে?আপনি ইসরাইলী পণ্য বর্জনের সেলুকাস বিপ্লবের অগ্রপথিক অথচ সৌদী আরবের মত দেশ ইসরাইলের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি করে বসে আছে।সেটা নিয়ে কিছু বলছেন না কিংবা আপনি হয়ত জানেনই না।যদি না জেনে থাকেন তাহলে শুনুন সৌদী আরব ইসরাইল থেকে অস্ত্রও কিনে এবং ইসরাইল সৌদী সরকারকে ‘guarantor of stability’ হিসেবে দেখে।বিশ্বাস না হলে গুগল করে দেখুন।অনেকে আবার ইসরাইলের অভিভাবক ইউএসএ কে নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু বলার চেষ্টা করেন অথচ আমেরিকা যদি সুযোগ দেয় সে দেশে যাবার তাহলে লোল ফেলতে ফেলতে সবার আগে দৌড় দেবেন।এজন্যই আমি মনে করি যে মুসলমানরা যে পদে পদে লাথি খাচ্ছে তার জন্য তাদের প্রতিপক্ষ যত না দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী তারা নিজেরাই।প্রহসন বাদ দিন।লোক দেখান ফিলিং দেখানোর চেয়ে চুপ করে থাকাও ভাল। এসব নাকি কান্না কেঁদে নিজের মুনাফিকি আর প্রকাশ করবেন না।ধর্ম ভুলে গিয়ে মানুষ হিসেবে সবার প্রতি সহমর্মিতা দেখান।নাহলে আপনার অমুসলিম বন্ধুটি ভাববে যে কি ব্যপার আমার বাড়িতে আগুন দিলো দুইদিন আগে,আমার মন্দির ভেঙ্গে ফেললো,আমার মা-বোনকে রেপ করল দুষ্কৃতিকারীরা অথচ আমার মুসলমান বন্ধুটা সেটা নিয়ে কিছু বললোনা।অথচ আজ হাজার মাইল দূরের ফিলিস্তিনের জন্য সে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।ডিভাইডেশনটা আমরা কিভাবে সৃষ্টি করছি বুঝতে পারছেন?অসহায় মানুষের জন্য কিছু করেন না করেন তবু মুনাফিকের মত ভান করে অন্যদের বিভ্রান্ত করবেন না প্লিজ।কারন আপনার লোক দেখান মমতা সকালে ফিলিস্তিনের জন্য আর বিকালে নেইমারের জন্য হলে আপনার ছোট ভাই বা বোনটা কিংবা আপনার সন্তানটিও এসব দেখে শিখবে।যে কাফিররা আজ আমার আপনার মুসলমান ভাইদের হত্যা করছে বলে আপনি চিল্লাচ্ছেন তারা কিন্তু তাদের অবস্থানে স্ট্রেইট।তাদের যদি আপনি প্রকাশ্য শত্রু বলে ধরে নেন তাহলে আপনি গোপন শত্রু।মুনাফিক।।আপনি আরো ভয়কংর।এমনকি ইসলামেই একারণে বলা আছে যে মুনাফিকরা সবচেয়ে জঘন্য।পরকালে তাদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিন্ম স্তরে।(পবিত্র কুরআনঃসূরা আন্ নিসা-১৪৫)
সুতরাং একটু ভাবুন।কি করবেন এবং কি করা উচিত।ইউক্রেন,ইরাক,আফঘানিস্তান কিংবা প্যালেস্টাইনসহ পুরো পৃথিবীর সব অসহায় মানুষগুলোর আজ সত্যিকারের কিছু বন্ধু দরকার;মুনাফিক নয়।
তবে কি করা যায় ফিলিস্তিনের অসহায় মানুষগুলোর জন্য; আমাদের অবস্থান থেকে?সেটা নিয়ে চমৎকার একটা পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে একজনের কাছে।তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।ফেসবুকে যে শিশু কিংবা মায়ের ছবি শেয়ার দেন তার জন্য কিছু করতে চাইলে এমন কিছুর মাধ্যমেই শুরু করি আসুন।আমি ওই ভাইয়ের পোস্টটির লিঙ্ক নিচে দিলাম।আর এতক্ষন অনেক ভারী ভারী কথা বললাম।ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।কষ্ট পেয়ে হলেও যদি কিছু করেন তবে সেটাই কাজের কাজ হবে।আমি নিজে শামিল হচ্ছি সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে।আপনি আসবেন না?
পোস্টটির লিঙ্ক:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭