আজ নুহার জন্মদিন। দুদিন ধরে ফোনে এর দাওয়াত পেয়েছি অসংখ্য বার। মাত্র সাত দিন পর ফ্লাইট। এই কদিন বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যাপারে ব্যস্ত থাকায় বড় বড় কাজ গুলোতে এ্যাটেন করতে পারছিনা। নুহার জন্মদিনে যাওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাত আটটার সময়ও যাব কি যাবনা এটা ভাবছিলাম। এমন সময় নুহার বাবার ফোন- 'তুই এখনো বাসায় কি করতেছিস। তাড়াতাড়ি রওনা দে।' আমি ঠিকানা জানিনা ঠিকমত। তাই ঠিকানাটা শুনেনিলাম। হাতিরপুলের পুকুরপাড়ে গিয়ে বলতে হবে 'রয়েল সোসাইটি কোথায়?' যে এর সঠিক উত্তর দিতে পারবে তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে- 'তরুনের বাড়ি কোনটা?'। এইটুকু ইনফরমেশন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম।
নুহার বাবার নাম 'তরুন'। পুরোনাম জহিরুল হক তরুন। আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমরা সবাই ডাকি 'জহিরুল' নামে। ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে পড়েছি। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সব সেইম। ও হচ্ছে আমাদের বন্ধুদের মাঝে সবচেয়ে প্রাকটিকাল একটা ছেলে। সেই স্কুলবেলা থেকে আমার যে কোন প্রাকটিকাল ব্যাপারে সমস্যা হলে তার পরামর্শ নিই, আর বিনিময়ে ওর কখনো কোন অ্যাকাডেমিক সমস্যা হলে সে আমার পরামর্শ নিতে আসে। দুজন দুদিকে এক্সপার্ট। আমি যে বয়সে মাস্টার্স শেষ করে পি,এইচ,ডি করার মাধ্যমে নতুন নতুন বিদ্যার জন্ম দেয়ার চেষ্টা করছি, জহিরুল সে বয়সে বিয়ে শাদি করে নতুন নতুন বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে। আজ ছিল তার একমাত্র কন্যা 'নুহার' প্রথম জন্মদিন।
বছর খানেক আগে, আমরা যখন বুয়েটে ফোর্থ ইয়ারে পড়ি তখনকার কথা। অনেকদিন পর, একদিন রাত ১১টার দিকে আজিমপুরে আমার বাসায় এসে হাজির হয় জহিরুল। তার সি++ কোর্সে ল্যাগ ছিল। টিচার তাকে ১০-১৫ টা প্রোগ্রাম লিখতে দিয়েছে। আমার বাড়িতে আগমনের কারণ আমাকে এই রাতেই তাকে সবকটি প্রোগ্রাম করে দিতে হবে। শুধু তাই না, প্রোগ্রাম গুলো হতে হবে এমন যেন, দেখে মনে হয় কাঁচা হাতের কাজ। আমি আমার পাকা হাতকে যতটা সম্ভব কাঁচা বানিয়ে ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই সবকটা প্রোগ্রাম করে দিলাম। তারপর সবগুলো তাকে বোঝাতে গিয়ে আরও সময় লাগলো। ওর বাসা হাতিরপুল হলেও, তখন রাত প্রায় ২ টার কাছাকাছি। আমি বললাম, 'যাবি কি করে এখন? থেকে যা আজকে।' দেখি সে হাসছে। বলল, বাসায় যেতে তার কোন সময় লাগবে না, সে এখন আমার প্রতিবেশী। ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারলাম না। সে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে জানালো, কাউকে না জানিয়ে গত মাসে সে বিয়ে করে ফেলেছে। বউ নিয়ে আমাদের বাড়ির উলটো দিকের বাসাটাতে সাবলেটে উঠেছে। সেখানে সে একমাস ধরে আছে। তার বাসার কেউ জানেনা, ব্যাপারটা এখনো গোপন। আমি খুব বেশী অবাক হইনি কারণ, আমাদের মাঝে কেউ যদি এমন কিছু করতে পারে, তবে সেটা একমাত্র জহিরুলের পক্ষেই সম্ভব। আমি হালকা চিৎকার করে বলে উঠলাম, 'কোনটা এটা? বোরকা পড়া যেটাকে দেখেছি সেটা?'। ও বলল, 'এটা-সেটা বলবি না, উনি কিংবা ভাবী বল'। আমি নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হলাম।
নুহাটা খুব সুন্দর হয়েছে। ওকে আমি খুব পছন্দ করি। এর অবশ্য আরেকটা কারণও আছে। ওর নামটা আমার রাখা। নাম রাখার সময় জহিরুল বলেছিল, 'নামটা তোকেই রাখতে হবে। যত ডিকশনারী আছে সব পড়ে ২ দিনের মাঝে আমাকে নাম দিবি।' তার কথা মত অনেক খাঁটা খাঁটনি করে নামটা পছন্দ করে বের করি। 'নুহা' শব্দটি আরবী। এর অর্থ- জ্ঞানের আলোতে আলোকিত। ও যেন সত্যিকার অর্থেই জ্ঞানের আলোতে আলোকিত হয়, আজকের দিনে এটাই ওর জন্য আমার প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




