somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের আজকের অঙ্গিকার

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে এক আশ্চর্য সময় এসেছিল আমাদের ইতিহাসে। এমন দুঃসময় আর কখনো আসেনি আর এমন সুসময় বোধ হয় আর কখনো আসবে না।
দুঃসময় তো বটেই কারণ বর্বর নিষ্ঠুর আঘাত বাংলার গ্রাম, গঞ্জ, নগর-বন্দরকে রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। কতো মা হারালো তার ছেলেকে, কতো বোন হারালো তার ভাইকে, কতো স্ত্রী হারালো তার স্বামীকে সেই ইতিহাস আমাদের কারোরই অজানা নয়। ৩০ লাখ শহীদের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন পতাকা পেয়েছি। আমাদের কথা বলার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। ওরা আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে হাতে হাত মিলিয়ে সংগ্রাম করতে হয়, কিভাবে ত্যাগ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে হয়-সুসময় আমি সে জন্যই বলছি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অনেক কথা আছেÑ সূর্যের আলোর যেমন শেষ নেই, পাখির গানের যেমন সীমা নেই, মুক্তিযুদ্ধের কথারও তেমন পরিসমাপ্তি নেই। এক একটি মুহূর্ত এক একটি মহাকাব্যের মতো।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি কালো অধ্যায়। প্রকৃত পক্ষে সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের ওপর বর্বর নিষ্ঠুরতা, শুরু হয়েছিল সম্মলিতভাবে অধিকার আদায়ের যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অমানবিক অত্যাচার ও নিষ্ঠুর আঘাত করে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল আমাদের শক্তিকে, সংগ্রামের উদ্দামকে, আমাদের একতাকে ...। কিন্তু তাই বলে বাঙালি জাতি থেমে থাকেনি। বলিষ্ঠ হাতে সব বাধা ভেঙে, সব অত্যাচারকে পেছনে ফেলে এ দেশের সন্তানরা এগিয়ে চলেছিল সেই দোসরদের বিরুদ্ধে।
ভাবতে খুব অবাক লাগে- আমাদের ছিল না ওদের মতো উন্নত অস্ত্র, ছিল না পেটে দুমুঠো অন্ন, যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত ট্রেইনিং তারপরও যে যেভাবে পেরেছে, যে অবস্থানে ছিল সেখান থেকে চেষ্টা করে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছে। সেদিনের সেই কালো আগুনে পুড়েছিল কৃষকের ঘর, বুদ্ধিজীবীদের ঘর, অত্যাচারে ক্ষত জর্জর হয়েছিল শিশু-বৃদ্ধ সবাই। অবশেষে নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সূর্য কিরণছটায় এ দেশের মাটি নতুন করে আলোকিত হলো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করলো আমাদের বীরত্বের কাছে, মনোবলের কাছে।
এতো কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ... স্বাধীনতা আমাদের আক্ষরিক স্বীকৃতি দিয়েছে, নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে কিন্তু এ স্বাধীনতাকে আমরা কতোটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছি? আমাদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, দ্বন্ধ, দুর্নীতি, অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের স্বার্থে ছুটে চলেছি। লড়াই করে চলেছি একে অন্যের বিরুদ্ধে। ছুটে চলেছি বিরামহীনভাবে এক অজানা মোহের দিকে। ভুলে গিয়েছি আমরা আমাদের শপথকে, ভুলে গিয়েছি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের অশ্রুকে, রক্তকে, তাদের ত্যাগকে। যে ত্যাগ দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস করেছি, যে রক্ত দিয়ে আমরা কথা বলার অধিকার পেয়েছি, তবে আর কেন? এখন কিসের জন্য কার জন্য লড়ছি? কবে আমাদের এ মৃত্যু মৃত্যু খেলা শেষ হবে? কবে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা শেষ হবে? কবে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হবে? কবে আমরা নিরাপদ একটি জীবন পাবো?
যেসব মুক্তিযোদ্ধা আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আর হতাশার কথা বলবো না। স্বাধীনতা অর্জন আমাদের আর করতে হবে না। আমাদের কর্তব্য সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আমাদের সুন্দর একটা দেশ আছে। সবুজের বুকে লাল সূর্যের চমতকার একটি পতাকা আছে। আমাদের বলিষ্ঠ দুটো হাত আছে। এখনো আমাদের চোখে স্বপ্ন আছে, সাধ আছে, সাধ্য আছে। আমরা আমাদের সেই চোখ দিয়ে, স্বপ্ন দিয়ে, বলিষ্ঠ দুটো হাত দিয়ে নিজেদের স্বার্থ ভুলে গিয়ে এখনো স্বাধীনতার পতাকা আরো শক্ত করে ধরতে পারি। আমাদের ইচ্ছাকে, শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি। ব্যর্থতার গ্লানি দূর করে সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারি ... এই হোক বিজয় দিবসে আমাদের আজকের অঙ্গীকার।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×