আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প উপন্যাসের মতোই প্রবন্ধগুলোও হয়ত একটানে পড়া যায় না কিংবা পড়েই মাথা ঝেড়ে ফেলা যায় না।ভাবতে ভাবতে পড়তে হয়,আবার পড়তে পড়তে থমকে ভাবতে হয়।কখনো তা পাঠককে ঝাঁকুনি দিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।তার সুগভীর এবং তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ আমাদের বিস্ময়ে বিমুগ্ধ করে,এমনকি যেখানে একমত নই সেখানেও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আমরা পারি না।তার দৃষ্টিভঙ্গির কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বাংলা উপন্যাস এবার রং ফেরাকঃ বন্ধ হক মধবিত্ত ব্যক্তির তরল ও পানসে দুঃখবেদনার পাঁচালি,কথায় কথায় মধবিত্তকে,মধবিত্তের ছকে ফেলা কোন ধাঁচকে,চরম পরম বলে চালিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার কেচ্ছা।- এরকম স্পষ্ট ও চাঁচাছোলা ভাষায় আওয়াজ তুলেছেন চিলেকোটার সেপায় খোয়াবনামার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
শিল্পসাহিত্য, রাজনীতি অর্থনীতি সংস্কৃতি, বিষয় যাই হক, ইলিয়াসের এক বিশেষ তত্তধারনাঃব্যক্তি। ব্যক্তির উত্থান পতন, ক্রমবিকাশ ও ক্রমবিনাস।রবীন্দ্রনাথের আংশিক সাফল্য ও বঙ্কিমের সমূহ ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইলিয়াসঃ
ব্যক্তির বিকাশে রবীন্দ্রনাথের সমর্থন থাকা সত্তেও ...তাঁর উপন্নাসে ব্যক্তির বিকাস বার বার বাধা পায় কিন্তু মানুস্কে বিপ্লবের দিকে উদ্বুদ্ধ না করলেও শক্ত সামরথ ব্যক্তি গঠনে রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষমতা অসাধারন।...............আর সমাজ বাস্তবতার অভাবে ব্যক্তির ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করতে পারেন নি বঙ্কিম।
ইলিয়াসের ভাষায়,
''রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের আধ্যাত্মিক প্রশ্ন ও উত্তেজনা তার উপন্যাসে অনুপস্থিত, তার উপন্যাসে ব্যক্তির বিকাস বার বার বাধা পায় , ব্যক্তির বিকাশে রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ ও সমর্থন থাকা সত্তেও এরকম হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র তার সমকালে তো বটেই চিরকালের বাঙ্গালির মাঝে সমাজ সচেতন ব্যক্তি কিন্তু বিধবার প্রেম তার দু চক্ষের বিষ, দরিদ্র ও অসহায় পুত্রবধুকে বিনা অপরাধে দূর করে দেয়া সত্তেও হ্রিদয়হিন বিবেকে প্রুতিবাদ করার ক্ষমতা না থাকাকে রায় দেন পিতৃভক্তি ও আদবকায়দার পরাকাশ্তা বলে।মহিলাদের সম্মান করতে জানেন না।যারা জীবন নিবেদিত করেন পতিদেবতাদের সেবায় তারা ভাল মেয়ে আর যারা কাপুরুষ ও অপদার্থ নয় তারা খারাপ মেয়েছেলে।
শরৎচন্দ্রের প্রেক্ষিত গ্রামবাংলার স্থিরচিত্র।তার আগে বাংলা উপন্যাসে বর্ণ হিন্দু সমাজের ছতলকামি, তাদের কোন্দল, রেষারেষি অনুপস্থিত।সমাজের ছবি বেশ সরানো ও উজ্জ্বল রেখায় ফুতে উথেসে তার লেখায়।কিন্তু এ সমাজ অনড় ও অচল, এর মধ্যে কলহ আছে কিন্তু গতি নেই, এ সমাজ কলহলময় কিন্তু স্পন্দনহীন।
সমাজের বিবর্তন ও পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত।কৃষকের পরিচয় জানা যায় তার উপন্যাসে, তার অভিজ্ঞতাও খুব অন্তরঙ্গ।গতিশিল সমসজব্যবস্থা তার উপন্যাসের প্রেক্ষিত কিন্তু নিজের শ্রেণীর প্রতি সহানুভুতি প্রায়ই পক্ষপাতিত্তে পরিনত হয়েছে বলে সামাজিক বিবর্তনের প্রক্রিত কারন অনুপস্থিত। ''
ইলিয়াস আজ নেই। ঐ নেই ের কোন সান্তনা ও নেই।
কিন্তু চিলেকোঠার সেপায় এর ওসমান আছে। ওসমানের মাথায় বাসা বাধা খিজির আছে,তমিজের বাপ আছে তার মেঘ তারানো এখন থামেনি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সংস্কৃতির ভাঙা সেতু বইটির কাছে কৃতজ্ঞ লেখাটির জন্য।সাড়া পেলে আখতারুজাম্মান ইলিয়াসের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




