somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একশ গোলাপ অথবা এক সিগারেট (লুতুপুত প্রেমের গপ্প)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালটা অনেক সুন্দর। রোদ ঝলমলে। আকাশে এক ফোঁটা মেঘ নেই। বেশ ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছে তনয়ের। খুব আস্তে আস্তে, পা টিপে টিপে, রুম থেকে বেড়িয়ে এল সে। সকাল বেলাটায় শাহবাগে তাজা তাজা ফুল পাওয়া যায়। এই কথা অবশ্য সে রোকেয়া আপার কাছ থেকে জনেছে। তনয় যে দোকানটাতে এসেছে, আদর্শ ফ্লাওয়ার শপ, ওইটা তার। খুবই পরিপাটি দোকান। অদ্ভুত সুন্দর সব ফুল পাওয়া যায়। তনয় প্রায় ৬ বছর ধরে এই দোকানটা থেকে প্রতি সপ্তাহে একটা করে চায়না গোলাপ কেনে। চায়না গোলাপ দেখতে খুব সুন্দর, কেমন জানি গ্রামার মেনে বড় হওয়া ফুল। কিন্তু, গন্ধ প্রায় নেই। প্রথম দিন থেকেই রোকেয়া আপা তনয়ের কাছে ফুলের জন্য যে দাম নিয়েছিলেন এখনোও তাই নেন। প্রতিবার সুন্দর করে সাজিয়ে দেন। তনয়ের ধারনা ছিল না যে একটা ফুলকেও সাজানো যায়। যাই হোক, আজ তনয় অনেক গুলো লাল গোলাপ কিনেছে, প্রায় শ’খানেক। এরপর আপার সাথে এক কাপ চা খেয়ে তাড়াতাড়ি ফিরল বাসায়। অনেক কাজ বাকি । সব গুলো ফুলের পাঁপড়ি আলাদা করতে হবে। কাঁটা গুলো আলাদা করতে হবে। অবশ্য ও’র হাতে সময় আছে বেশ। কেবল মাত্র সাড়ে ছয়টা বাজে। ত্রয়ী এখনো ঘুমিয়ে। ঘুমিয়ে থাকলে ত্রয়ীকে কেন জানি প্রতিমার মত লাগে। দেখলে মনে হয় খুব সুন্দর কোন স্বপ্ন দেখছে সে। ত্রয়ী তনয়ের স্ত্রী। ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৫ বছর।

বেশ আগে ভার্সিটিতে পড়ার দিন গুলোতে তারা প্রচন্ড ঘুড়ে বেড়াত। এজন্য বন্ধুরা ওদের “কাক” বলে ডাকত। কাপল কলম্বাস। প্রতিদিন তারা হাতে হাত রেখে অদ্ভুত সব জায়গায় ঘুড়ে বেড়াত। তনয়ের খুব ইচ্ছে করে সেই আগের মত হাতে হাত রেখে লেকের ধারে বসে থাকতে, ত্রয়ীর চুলে আলতো করে বিলি কেটে দিতে, কিন্তু হয়ে ওঠে না। আগে যেখানে সহস্রবার ভালবাসি বললেও মনে হত বলা হয় নি এখন সেখানে সপ্তাহে একবারও বলা হয় কিনা মনে পড়ে না।

প্রতিদিনই তনয় ভাবে, বলবে। কিন্তু সকাল হলেই তাদের ছুটতে হয়। নিজেদের জন্য সময় বলতে কেবল ক্লান্ত দুই শরীরের পাশাপাশি শুয়ে থাকা। কিন্তু আজ আর কোন ছুতা নয়। আজ তনয় আবার বলবে তার কথা, তার ভালবাসার কথা। অনেকদিন ধরে জমে থাকা না বলা সব কথা।

আজই কেন? আজ ত্রয়ীর জন্মদিন। তনয় ঠিক করেছে ত্রয়ী ঘুম থেকে উঠা মাত্রই ওর মন খারাপ করে দেবে, এরপর সারাদিন ধরে ওর মন ভাল করবে। এর প্রথম ধাপ হিসেবে সিগারেট আর ফুল কিনেছে। ভার্সিটি লাইফে প্রচুর সিগারেট খেত তনয়। ত্রয়ী কোনদিনই মানা করে নি। কিন্তু খুব মন খারাপ করত। আর এইজন্যই হয় তো সিগারেট ছেড়ে দিয়েছে তনয়। কিন্তু আজ একটা সিগারেট তনয় খাবে, নতুন একটা প্যাকেট খুলে সেখান থেকে খাবে। শুধু মাত্র ত্রয়ীর মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্যই।

সিগারেটটা ধরাল তনয়। অনেকদিন খাওয়া হয় না । তাই কেশেও দিল খুঁক খুঁক করে। সিগারেটের গন্ধে কাশির শব্দে ঘুম থেকে উঠেই মুখ কালো হয়ে গেল ত্রয়ীর। কিছু একটা বলতেও শুরু করল। কিন্তু ত্রয়ীকে ত্রয়ীর কথাকে ছাপিয়ে শুনতে পেল মধ্যবয়স্কা নার্সের গলা।

-আপনি বাসায় যান। উনার পাশে থেকে কি লাভ? আপনি যে আছেন সেটাই তো টের পাচ্ছেন না উনি।

আজ প্রায় দুবছর হলো হাসপাতালের এই ধবধবে বেডটাতে শুয়ে আছে তনয়। সারা দেহ অবশ, শুধু চিন্তা করতে পারে সে। তারপরও ত্রয়ী প্রতিদিনই তনয়ের হাত ধরে বসে থাকে। আজ ত্রয়ীর জন্মদিন। তাই সে তনয়ের দেয়া প্রথম শাড়িটা পড়ে এসেছে। ক্ষীণ আশা, হয়তো তাকে দেখে তনয় কিছু বলবে। কিন্তু, প্রতিদিনের মতই আজও তনয়ের দৃষ্টি ক্লান্ত, নির্বাক।

তনয়ের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে, ভেজা চোখে চলে যাচ্ছে ত্রয়ী। তনয় চিৎকার করে বলে যেও না, কিন্তু কোন শব্দ নেই। তনয়ের খুব ইচ্ছে করছে ত্রয়ীর হাত ধরে ওর চোখের পানি মুছে দিতে, তনয়ের সমস্ত্ব সত্তা চিৎকার করতে চাইছে, বলতে চাইছে, তোমায় ভালবাসি ত্রয়ী। কিন্তু তনয় এখন জানে, সমস্ত সত্তা দিয়ে ভালবাসলেও অনেক সময় কম হয়ে যায়। তারপরও তনয়ের দৃষ্টি ক্লান্ত, নির্বাক।
.........................................................................

গল্পটি দেখতে চাইলে...
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×