পূর্বের পর্ব Click This Link
লোকটিকে আমার পারিবারিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বল্লাম। লোকটি আমাকে যা বল্ল তা শুনে আমি থ খেয়ে গেলাম। সে আমাকে বলে, “তুমি কি মনে কর তোমার বাবা তোমার থেকে টাকা নিবে। কোন সত বাবা এমনকি আমিও আমার মাদকাসক্ত ছেলের কাছ থেকে টাকা নিবনা। তুমি যদি তোমার বাবাকে রাজি করাতে পার, তোমার টাকা যদি সে গ্রহণ করে আমি দিতে রাজি আছি।”
আমিও ভাবলাম বিষয়টা, বাবা আমার কাছ থেকে টাকা নিতে চাইবে না। আমি লোকটাকে বলি, “আমি এখন কি করি আমারতো আর কোন পথ দেখছি না।”
তখন তিনিই আমাকে বলেন, “এখনোও সময় আছে তুমি সঠিক পথে চল। তোমার বাবাকে আমি বুঝাচ্ছি। কাল থেকে আমি তোমার বোনের চিকিতসার ব্যবস্থা আমি করছি।”
আমি পরিবর্তন হয়ে গেলাম। আমাকে একটা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেয় আমি আমার নিজের ইচ্ছায় সুস্থ হয়েছি। কারণ আমি সবসময় ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। আজ স্যারের কম্পানিতে চাকরি করছি। আমি এখন ভালো আছি।
আমি এদুজনের সমস্যাটা বুঝেছি কিন্তু আলিন্দ আর নতুন এরটা ধরতে খুব কষ্ট হয়েছিল। নতুনকে অলিন্দই, এসবের দিকে ঝুকতে প্রভাবিত করে । নতুনের মনের ব্যথাটা ছিল আরও বেদনাদায়ক। ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র ছিল নতুন। অনেক লাজুক ছেলে ছিল । ওর মত একটা ছেলে এতটা পরিবর্তন হয়ে যাবে তা আমি ভাবিনি। তার সাথেই পড়ত রূপা। নতুন, রূপাকে মনে মনে ভালবাসত । কিন্তু কখনো তাকে বলিনি। রূপার বোন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থি। রূপা গরীব ছিল। তাই রূপা তার বোনের রেজিস্ট্রেসনের টাকা উপার্জনের জন্য অনৈতিক একটা কাজ করে। যা সমাজের দৃষ্টিতে মনুষত্বের চরিত্রকে বিনষ্ট করা। নতুন সচেক্ষ তা দেখেছে। নতুন পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। সে মানসিক রোগী হয়ে যায়। তার দু:খ, মানুষ কেমন করে এত নিচে যেতে পারে। উপার্জনের আরো মাধ্যম আছে। এই পথটাই কেন বেছে নিল। এই পৃথিবীতে বেচে থাকার স্বপ্ন আর সে দেখতে চায়না। এই পৃথিবী তার কাছে জাহান্নাম হয়ে গিয়েছিল। এই পৃথিবীর কিছুই তার ভাল লাগেনা। সে মরে যেতে চায়। এবং সে জেনে শুনেই মাদককে আপন করে নেয়। মাদক হল তার মরণ ফাদ।
আমি খবর নিলাম রূপার। আসলে ব্যপারটা জানার চেষ্টা করলাম এবং যা জানলাম তা হল, এতই গরীব ছিল রূপারা যে তার মা, তার বোন নিপুনের রেজিস্ট্রেশন খরচ যোগাড় করতে করতে পারিনি। মা কেন্দ্রিক পরিবার ছিল রূপার। বাবা নাকি মাতাল হয়ে পড়ে থাকত বাসায়। তাদের পরিবারটি ভালো ছিলনা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে কিছু না কিছু দোষ ছিল। অশিক্ষিত পরিবার ছিল। তার মধ্যে অমন একটি মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এটাই অনেক। আমি রূপা আর নিপুনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে আসি রূপার হাতে, আরো লাগলে আরো দেব। “আমার কিছুই লাগবেনা সুদ হিসেবে, একজন ভালো মানুষ লাগবে। আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি। কোন না কোন কারণে। আমাদেরকে বের করতে হবে আমরা কি কারণে এসেছি। এবং সে মোতাবেক চলার চেষ্টা করতে হবে। পূর্বে কি করেছি তা আর মনে করবনা। আসলে আর্থিক সমস্যা মানুষকে এতটা নিচে নামতে বাধ্য করে আমি ব্যপারটা আগে খেয়াল করিনি। তুমি আর এরপরে আর নিজের মূল্যবোধ ক্ষুণ্য করনা। পড়াশোনার দিকে মন দাত্ত। আর নিপুণের দিকে খেয়াল রাখ নিপুণের যেন তোমার মত রাসতা না বেছে নিতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখ।” রূপাকে এভাবে বুঝিয়ে আসি।
এরপর দায়িত্বতা ছিল নতুনকে বুঝানোর। নতুনের জানা ছিল না রূপার পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে। আমি তাকে তা জানালাম। তাকে বুঝালাম,
“অনেক সময় নিজের অজান্তে, ইচ্ছা বিরুদ্ধেও আমরা অনেক কাজ করে ফেলি। তারতো সমস্যা ছিল তাই নাই সে এমন করল। তোমার বাবা মা কি দোষ করেছে। তাদের কেন শাস্তি দিচ্ছ। তুমি যতনা কষ্টে আছ তারচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় তারা আছে। তারা যে কেমন আছে তা তুমি কখনোই বুঝবে না। তুমি বুঝবে না যখন তোমার বাবার অনুপস্থিতে একজন আরেকজনকে বলে অমক সাহেবের ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে। আর কাকতালিয়ভাবে তোমার বাবা তা শুনে ফেলেছে। তখন তিনি মনে কি ব্যথা পায়, তুমি কিভাবে তা অনুভব করবে। তোমার মনের এই ব্যথার মূল্য সেতুলনায় অতিসামান্য। পৃথিবী এমনই, এসব মেনে নিয়ে নিজেকে সাবধান রেখে এখনে চলতে হয়। কেন কেও বলতে পারবে যে নতুন নষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবী অনেক কঠিন। তুমি তো কিছুই দেখনি এরচেয়ে ভয়ানক আমি দেখেছি। এখন বলতে চাইনা। একবার ভেবে দেখ, তুমি শুধু নিজেকে না আরো কতজনকে কষ্ট দিচ্ছ। তুমি যদি শুধু নিজেকে কষ্ট দিতে পার সেখানে অন্য কেত্ত তোমান জন্য ভুগবে না, তাহলে আমি তোমাকে বাধা দিবনা।”
আমি যখন বলি তখন রাত ছিল। তাকে সকাল পর্যন্ত সময় দেই ভাবার।
উপরের জনেদের বুঝলাম নায় আর্থিক সমস্যা। কিন্তু অলিন্দ, অলিন্দ কেন বা কিভাবে মাদকাসক্ত হল। শুনে খুব দু:খ পেলাম। অলিন্দ তার বাবা মার একমাত্র ছেলে। অনেক বড়লোকের ছেলে। যা চায় তাই পায়। কিন্তু প্রপার ভালোবাসাটা পায়না। ছোটবেলা থেকেই আয়ার কাছে মানুষ হয়েছে। বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত, আর মা রেডিওতে খবর পড়ত। বাবা মা তেমন কেয়ার নিতনা। অলিন্দর দরকার ছিল ভালবাসার। তার আপন মাও তার কাছে সত লাগত। সবসময় নিজের কাজে ব্যস্ত থাকত তার মা। ছেলেকে কাছে ডেকে গল্প শোনানো বা মাথায় হাত বুলিয়ে দাওয়া, তা শেষ কবে করেছে মনে নাই অলিন্দের। বাবা মা প্রতি ঘন্টায় ছেলের খবর নিত ফোন করে। এইটুকুই তারা করত। মাঝে মাঝে ফোন করাটাও ভুলে যেত। যা অলিন্দের কাছে ফরমালিটিস মনে হত। আয়াই তার মা ছিল। কিন্তু আয়া কার আক্সিডেন্টে মারা যাবার পর সে ক্রমে ক্রমে মাদকাসক্তে পরিনত হয়। একলা হয়ে যায়। বাবা তার কাছে চেক বই দিয়ে দিছে। তার আকাউন্টে প্রতিমাসে পনেরো হাজার টাকা চলে আসে।
কিন্তু আমি অবাক হই। একটা মা এমন কেমন করে হয়। একটা মানুষ তো আর চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে না। অলিন্দ আমার কাছে আরেকটা খবর লুকিয়ে রেখেছিল। তার বাবা মার লাভ ম্যারেজ ছিল। তারা বাসায় থাকলে বেশিরভাগ সময়ই ঝগড়া করত। অলিন্দ এই ব্যপারটাকে খুব ভয় পেত। আর এই ঝগড়ার খারাপ প্রভাব পড়েছে অলিন্দর উপর। অলিন্দকে আমি এখন কিভাবে বুঝাই। আবার আরো একটা সমস্যা ওর মার কারণে পুরো মেয়ে জাতিকে ঘৃণা করত। কি করব বুঝে পাচ্ছিলাম না তখনই রেহান আমাকে বল্ল অনিলা, অলিন্দর খালাত বোন। অনিলাকে ওই সাপ্লাই করে এসব মরণপাত্র।
আমি অলিন্দকে বুঝাই, “তুমি নিজে নস্ট হচ্ছ ঠিক আছে, তুমি অনিলার জীবন কেন নষ্ট করছ। অলিন্দ বলে
আমি ওকে শেষ করে দিতে চাই।” আমি বলি,
“কেন? তোমার মম এমন বলে সব মম ই যেয়ে এমন হয় কে বলছে। আমার মা ভালো ছিল। রেহানের মা কত ভালো। তারপর এখন যেহেতু আমি জানি, আমি তো অনিলাকে শেষ হতে দিব না। আচ্ছা তুমি চাওটা কি। তুমি কয়জনকে শেষ করতে পারবে।”
অলিন্দ বলে, “ওদের সবার রক্ত এক, ওর জন্য অনেকজনকে ভুগতে হবে। আমার মম এর সিস্টারের মেয়ে। ওর ক্ষেত্রেও তাই হবে যা আমার মম এর ক্ষেত্রে হয়েছে।”
আমি খবর নিয়ে দেখলাম অনিলার পরিবারেও কিছুটা অলিন্দের পরিবারের মতই সমস্যা। আমি আর কি করি আমার কিছুই করার নেই । রেহান এসে আমাকে বল্ল,
“মামা ও আমার বাসায় যাক। আসলে ওর প্রয়োজন মায়ের ভালোবাসা।”
সত্যি রেহানা পেরেছিল। অলিন্দ সুস্থ হতে থাকল। ওকে একদিন রেহান সাধারণ কিছু মানুষের জীবনযাত্রা দেখিয়ে এনেছে। তাকে বুঝিয়েছে মানুষ কত ভালো থাকে। তাকেও থাকতে হবে। কত মানুষ না খেয়ে মরছে। কত মানুষ চিকিতসার অভাবে মরছে। আর তুমি কত টাকা পয়সা নষ্ট করে ফেলছ।
অলিন্দ শেষে ঠিক করে ও ওর বাসায় কখনোই ফিরবে না এখন থেকে ওর মা রেহানাই। অলিন্দর বাসা থেকে তার বাবা মা আসে। প্রচুর কান্দে আমার কাছে। আমি কি করব। তাদের জন্যই তাদের ছেলে তাদের কাছ থেকে দূরে। তারা অলিন্দের পা ধরল। অলিন্দ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি লক্ষ্য করলাম। অলিন্দ তাদের ক্ষমা করে দেয়। সে বলে আমি বেশিরভাগ সময়ই এখানে থাকব। অলিন্দ তার বাবা মাকে বলে, তোমরা আমার ড্যাড মম আর আমার মা হল এখানে।
এখন অলিন্দ তার বাবার ব্যবসা দেখছে। অসহায় মানুষের সেবা করে যতটুকু পারে।
ও আচ্ছা জামালের কথাই তো লিখতে ভুলের গেলাম যে নাকি আমাকে মারতে চেয়েছিল। সে আমার আচরণ দেখে নিজেকে ঘৃণা করতে লাগল। আমি তাকে বুঝাই, তোমার দোষ নেই আমাদের মত কিছু মানুষ প্রভাব খাটিয়ে এমন কাজ করে, তোমার ভাবাটা স্বাভাবিক। জামাল এখন আমার কম্পানিতে চাকরি করছে ভালই আছে আশা করি।
পরের পর্ব Click This Link
জীবনের গল্প ১ Click This Link
জীবনের গল্প ২ Click This Link